রাস্তায় ভিক্ষা করা ‘বিচারপতির মেয়ে’র ভিডিও মজার টিভি নামের ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এই পেজ পরিচালনাকারী মাহসান স্বপ্ন বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশের জন্য ক্ষমা চেয়ে সেটি সরিয়ে নেয়ার কথা জানান।
কিশোরী মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে তুহিন সুলতানা তপু নামের এক নারীর ওই ভিডিও ১৪ জানুয়ারি আপলোড করার পর সেটি ভাইরাল হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
এই প্রতিবেদনে তুহিনের প্রতারণার সব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি অসংখ্য শেয়ার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় ভিক্ষা করা সেই ‘বিচারপতির মেয়ে’ আসলে কে
এরপর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৪৬ মিনিটে ফেসবুক লাইভে এসে একপাক্ষিক অভিযোগের ভিডিও আপলোড করার জন্য ক্ষমা চান মাহসান স্বপ্ন।
তুহিনের ভিডিও আপলোডের ঘটনা বর্ণনা করে স্বপ্ন বলেন, ‘আমি হঠাৎ ধানমন্ডির রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম একজন মহিলা অসহায়ভাবে রাস্তার পাশে বসে কান্নাকাটি করছে। আমি নেমে গিয়ে তার সাথে কথা বললাম। তিনি তার হাসপাতালের সমস্ত কাগজপত্র আমাকে দেখান। সেটি দেখে আমার মনে হয় মজার টিভির ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সকলকে জানিয়ে অসহায় এই মহিলার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করি।’
ভিডিওতে তুহিনের বাবা বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবারের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্বপ্ন। ভিডিওটি আপলোডের আগে বিচারপতি শামসুল হুদার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলেও তিনি জানান। তবে পরিবারের বক্তব্য কেন ভিডিওতে রাখা হয়নি সে বিষয়টি এড়িয়ে যান মাহসান স্বপ্ন।
ভিডিওতে স্বপ্ন স্বীকার করেন তুহিন সম্পর্কে তার পরিবার অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের পক্ষের পুরোটা বক্তব্যই শুনেছি, কিন্তু এই মহিলাটি আসলেই অসুস্থ ছিলেন বলে আমি তাকে সহযোগিতা করার জন্য ভিডিও আপলোড দেই।’
স্বপ্ন তুহিনের একতরফা ভিডিও আপলোড করে আইন ভেঙেছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিল বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবার। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন বিচারপতি হুদা।
মাহসান স্বপ্ন বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাদের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও জানান তিনি।
তুহিনের ভিডিওর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পর্যন্ত পৌঁছেছে উল্লেখ করে, সবার কাছে ক্ষমা চান এই ভিডিও ক্রিয়েটর।
তুহিনকে নিয়ে মাহসান স্বপ্নর আপলোড করা ভিডিওটি ভাইরাল হয় ফেসবুকে
এ বিষয়ে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে মাহসান স্বপ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওই ভিডিও মজার টিভির ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে ফেলেছি। আপনি এই মুহূর্তে মজার টিভির পেইজে গেলে ওই ভিডিও আর দেখতে পাবেন না।’
স্বপ্ন বলেন, ‘আমি শুধু হাসপাতালের কাগজপত্র দেখে মহিলাকে (তুহিন) সাহায্য করেছিলাম, কিন্তু এই মহিলার পরিবারের এত অভিযোগ রয়েছে সেটি জানতাম না। তবে আমি পরিবারের সবার পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলাম। আমি তাদের সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ করেছি।’
একজন অসুস্থ নারীকে সাহায্য করতে গিয়ে বক্তব্য যাচাই করা ছাড়াই একজন ‘বিচারপতির মেয়ে’র পরিচয় কেন উল্লেখ করা হলো- জানতে চাইলে স্বপ্ন বলেন, ‘ওই মহিলা ভিডিওতে তার বিচারপতির বাবার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলায় আমি সেটিকে হাইলাইট করি। এর বেশি আর কোনো কিছুই আমি বলতে পারব না।’
ফেসবুকের মতো এত বড় প্ল্যাটফর্মে তথ্য যাচাই না করেই ভিডিও আপলোডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিব না।’
এর আগে নিউজবাংলার অনুসন্ধানের সময় মঙ্গলবার সকালে মাহসান স্বপ্ন বলেছিলেন, ‘আমি সবই জানি (তুহিনের বাবার পরিচয়), কিন্তু কিছু বলব না। বেশ কিছুদিন যাবত আমার সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেই বিচারপতির ভয়েই এটি করতে হয়েছে।’
মাহসান স্বপ্ন ভিডিও প্রকাশের আগে বিচারপতি মো. শামসুল হুদার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা- সেটি জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
বিচারপতি শামসুল হুদার মেয়ে শাহীন সুলতানা শান্তা নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘হ্যাঁ, সে আমাদের ফোন দিয়েছিল। আমরা তাকে জানিয়েছিলাম যে, ওই মহিলা ভুয়া। আমরা তার ডিটেইলস জানিয়েছি। কিন্তু সে (স্বপ্ন) ভিডিওতে আমাদের কথা বাদ দিয়ে আপলোড করে।
‘পরে আমরা আবার তার সাথে যোগাযোগ করলে সে কোনো রিপ্লাই দেয়নি। এখন আজ দেখলাম বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সে সেটি সরিয়ে ফেলেছে।’