করোনাভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার ২০টি দেশের নাগরিকদের সৌদি আরবে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে দেশটির সরকার।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় এ ঘোষণা কার্যকর হবে।
প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও বাংলাদেশ বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী শ্রমিকরা দেশটিতে যেতে পারবেন।
এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের জন্য ভীষণ স্বস্তিদায়ক এবং সে দেশে থাকা বাংলাদেশিরা বেশ আনন্দিতও। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।
গত বছরের শুরুর দিকে ছুটিতে বাংলাদেশে আসার পর হাজার হাজার শ্রমিক সৌদি আরবে ফিরতে পারছিলেন না করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে। কর্মক্ষেত্রে ফেরার জন্য বিমানের টিকিটের দাবিতে ঢাকায় টানা বিক্ষোভও করেছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে টিকিটের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি শ্রমিকদের ভিসা ও কাজের বৈধতার অনুমতিপত্র আকামার মেয়াদও বাড়ানো হয়। তারপরেও নানা কারণে শ্রমিকদের সবাই ফিরতে পারছিলেন না।
সারা বিশ্বে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করে, যার মধ্যে সৌদি আরবেই রয়েছে ২০ লাখের বেশি। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে এই দেশটি থেকেই।
বাংলাদেশের জন্য দুয়ার খোলা অবস্থায় যেসব দেশের জন্য দেশটি দরজা বন্ধ রেখেছে, সেগুলোর মধ্যে আরও আছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, পর্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ও মিসরের নাগরিকরাও এই মুহূর্তে সৌদি আরবে ঢুকতে পারবেন না।
যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ায় গত ২১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। ৩ জানুয়ারি সৌদি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ৩১ জানুয়ারি থেকে সব ধরনের ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছিল দেশটি।
করোনা সংক্রমণ রোধে মার্চের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য ওমরাহ পালন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরব। এর সাত মাস পর ২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো বিদেশিদের কাবায় প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৬৮ হাজার ৬৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ হাজার ৩৮৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ১১০ জন।
করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার দশ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে নেমেছে।
গত ১৭ জানুয়ারির পর বাংলাদেশে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কখনও পাঁচ শতাংশের ওপরে উঠেনি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো দেশে পর পর দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের কম থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়।
বাংলাদেশে গত ১৬ দিন ধরেই শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে। গত মঙ্গল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত শনাক্তের হার ২.৯১ শতাংশ, যেটি ২০২০ সালের ৪ এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ২.০৭ শতাংশ।