ইন্দোনেশিয়ান বান্ধবীকে হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বাংলাদেশি এক রঙমিস্ত্রিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সিঙ্গাপুরের আদালত।
সোমবার সিঙ্গাপুরের একটি আদালত এ রায় দেয় বলে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ট্রেইট টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।
অভিযোগ, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর গেইলাঙয়ের গোল্ডেন হোটেলের একটি রুমে তার বান্ধবী গৃহকর্মী নুরহিদায়াতি সুরাতাকে তোয়ালে দিয়ে গলা পেঁচিয়ে হত্যা করেন বাংলাদেশের আহমেদ সেলিম (৩১)।
সোমবার জুডিশিয়াল কমিশনার ম্যাভিস চিনোয়া যখন মৃত্যুদণ্ডের রায় পড়ছিলেন তখন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি সেলিম।
তদন্তে জানা যায়, ২০১২ সালে সেলিম ও নুরহিদায়াতির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করার ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন তারা। ২০১৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে নুরহিদায়াতির সঙ্গে বাগদানও হয় তাদের।
কিন্তু ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশি প্লাম্বার শামিন শমিজুর রহমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান নুরহিদায়াতি। বিষয়টি নিয়ে সেলিমের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
পরে সেলিম দেশে বিয়ের জন্য তার মাকে মেয়ে খুঁজতে বলেন। দেশে ফিরে মায়ের ঠিক করা পাত্রীকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করার কথা ছিল তার।
মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, কয়েক মাস পরই সেলিম ও নুরহিদায়াতির সম্পর্ক আবার জোড়া লাগে এবং ফের তারা ডেটিং শুরু করেন। তবে নুরহিদায়াতির আগের সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো তাদের। একবার হোটেলের একটি রুমে তোয়াল দিয়ে বান্ধবীর মুখ চেপেও ধরেছিলেন সেলিম।
২০১৮ সালের শেষ দিকে হানিফা মোহাম্মাদ আবু নামে বাংলাদেশি এক যন্ত্রমিস্ত্রির সঙ্গে ফেসবুকে বলা শুরু করেন নুরহিদায়াতি। এক পর্যায়ে হানিফাকে জানান, রঙমিস্ত্রি সেলিমের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তার। তবে সেই সম্পর্ক আর না রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
নিজের নতুন বয়ফ্রেন্ড থাকার কথা জানিয়ে ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নুরহিদায়াতি সেলিমকে বলেন, বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে তার মায়ের ঠিক করা পাত্রীকেই বিয়ে করা উচিত।
২৩ ডিসেম্বর এক সাক্ষাতে সেলিমকে নুরহিদায়াতি জানান, হানিফার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাবেন। পরে ফোন করে সম্পর্ক ছিন্নের কথা জানিয়ে দেন তিনি।
সাত দিন পর নুরহিদায়াতিকে বুঝিয়ে আবারও তার সঙ্গে দেখা করেন সেলিম এবং একটি হোটেলে দৈহিক মিলন হয় তাদের।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর হে হুন শুন আদালতে জানান, হানিফার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি না টানলে নুরহিদায়াতিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন সেলিম।
তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক ভাঙতে রাজি না হলে অভিযুক্ত তোয়ালে দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে নুরহিদায়াতির গলা চেপে ধরে।’
বান্ধবীকে মেরে নিজের ডর্মেটরিতে গিয়ে খালিক আব্দুল নামে এক সহকর্মীকে এক হাজার ডলার দিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবারকে পাঠাতে বলেন সেলিম। কাউকে হত্যা করার বিষয়টিও এ সময় খালিককে জানান তিনি।
ওই দিন রাত প্রায় ১০টা ১৫ মিনিটে হোটেলের রুম থেকে রিসিপশনিস্ট নুরহিদায়াতির মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ উদ্ধার করে। এতে জড়িত থাকার সন্দেহে ৩১ ডিসেম্বর সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়।