বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুসকান জুবেরী হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন বাঁধন

  •    
  • ১৬ আগস্ট, ২০২১ ১৮:৫২

‘আমি আমাদের দেশের রাইটার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কাছে খুবই গ্রেটফুল এই জন্য যে, এ রকম একটা পাওয়ারফুল নারী চরিত্র সে ভেবেছে। যদিও এটা কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারে লেয়ারে মুশকানকে দৃঢ় করে তোলা হয়েছে।’

দেশের লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের থ্রিলার উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ অবলম্বনে একই নামে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন কলকাতার নামকরা পরিচালক সৃজিত।

১৩ আগস্ট ভারতীয় ওয়েব প্ল্যাটফর্ম হইচইতে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। এতে মুসকান জুবেরী নামের এক রহস্যময়ী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ দেশের বাঁধন।

সিরিজটি মুক্তি পাওয়ার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন অভিনেত্রী? কোন কোন বিষয় নিয়ে হচ্ছে আলোচনা?

নিউজবাংলার সঙ্গে সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আজমেরী হক বাঁধন।

  • রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি ওয়েব সিরিজটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখছেন। আপনার চোখে কি পড়েছে?

ওয়েব সিরিজটা যেহেতু এখন স্ট্রিমিং হচ্ছে হইচইতে, ওটা মানুষ দেখেছেন। ভালো রিভিউ আসছে আমার কাছে। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম যে আসলে কে কী বলছেন। কেউ কেউ আবার যেসব ত্রুটির কথা বলছেন আমি সেটাও লক্ষ্য করছি; কে কোন জায়গাটার কথা বলছেন।

এক ধরনের মাইন্ডসেট তো আমাদের থাকে। আমরা সব সময়ই আমাদের মাইন্ডসেট থেকে বের হতে পারি না। এটা আমাদের আসলে সামাজিক সমস্যা। যার কারণে নতুন কিছু গ্রহণ করার প্রবণতা কম।

এটা এমন একটি চরিত্র যে চরিত্রটা মানুষ অলরেডি জানেন। কারণ এটা তো একটা উপন্যাসের চরিত্র। এই ধরনের চরিত্র করা কিন্তু কঠিন। কারণ আমরা যখন একটা বই পড়ি তখন আমাদের মাথায় ওই চরিত্রকে আমরা দেখি। সেটার সঙ্গে যখন ভিজ্যুয়ালি মিল পাব না তখন আমার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে।

আমি এটা মেনে নিতে চাই। কারণ আমি সবাইকে খুশি করতে পারব না। যাদের ভালো লেগেছে তারা তো খুবই ভালো বলছেন, স্পেশালি আমি এটা উল্লেখ করতে চাই যে কলকাতার দর্শক আমার কাজের প্রশংসা করছেন। এটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।

এর কারণ নতুন কাউকে গ্রহণ করাটা কিন্তু অনেক বড় একটা ব্যাপার এবং সেটা তারা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে করেছেন। কলকাতা থেকে আমি অনেক রেসপন্স পেয়েছি। আমাদের এখানকার যারা আমার পরিচিত বা পরিচিতর পরিচিত বা যারা ফেসবুকে লিখছেন তারা আমাকে অনেক ভালো ফিডব্যাক দিচ্ছেন।

মুসকান জুবেরী চরিত্রে বাঁধন। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
  • দর্শকরা কোন ত্রুটিগুলোর কথা বলছেন?

একেকজন একেক রকম। আমি আসলে ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু ব্যাপারটা এ রকম না যে, আমি সেগুলো দেখিনি। সেগুলো জানাটাও আমার জন্য ভীষণ জরুরি বলে আমি মনে করি। কোন জায়গাগুলোতে মানুষ মনে করছেন যে, হয়তো আরেকটু বেটার হতো।

কিন্তু আমি যেটা বলছিলাম যে মাইন্ডসেট অনেক বড় একটা ব্যাপার। ওই জায়গা থেকে বের হয়ে যারা দেখেছেন, তারা ভালো বলেছেন। আর যারা বের হতে পারেননি কিংবা অন্য কাউকে ভেবে রেখেছিলেন এই চরিত্রে, তাদের জন্য একটু ডিফিকাল্ট হয়েছে।

আমার চরিত্র নিয়ে মানে মুসকান জুবেরীকে নিয়ে বেশির ভাগ রিভিউ ভালো এসেছে।

  • সাহিত্যের চরিত্র ও পর্দার চরিত্রের যে পার্থক্য, আপনি কি সেটার কথা বলছেন?

এটা খুবই স্বাভাবিক। এটা আসলে হবেই। বই পড়ার একটা সুবিধা হচ্ছে যে আমরা আমাদের মতো করে তা ভাবতে পারি বা দেখতে পারি। কিন্তু যখন আমরা একটা ওয়েব সিরিজ দেখব বা ফিল্ম দেখব, তখন সেটা দেখতে হবে পরিচালক যেভাবে দেখাতে চাচ্ছেন সেভাবে।

  • এই সিরিজকে থ্রিলার বলা হয়। কিন্তু মুসকানের কণ্ঠে- ‘নারীর সফল হতে হলে ডাইনি বা বেশ্যা হতে হয় না’- এই ধরনের একটি সংলাপ শুনে মনে হয় নারীর দৃঢ়তা যেন থ্রিলারকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

প্রথমত, এই ধরনের নারী চরিত্র যে হয় এটা কিন্তু আমাদের এখানে আসলে দেখে না কেউ। আমি আমাদের দেশের রাইটার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কাছে খুবই গ্রেটফুল এই জন্য যে, এ রকম একটা পাওয়ারফুল নারী চরিত্র সে ভেবেছে।

যদিও এটা কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু বিভিন্ন লেয়ারে লেয়ারে মুশকানকে দৃঢ় করে তোলা হয়েছে।

আপনি যে লাইনের কথা বলছেন, আমি মনে করি এটা আমার দেয়া সিরিজের সবচাইতে বেস্ট ডায়লগ। আমি এই ডায়লগটা ভালোবেসেছি এবং আমি খুবই পছন্দ করেছি যে এ রকম একটা ডায়লগ আসলে মুসকান বলেছে।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: নিউজবাংলা
  • পুরো সিরিজে শাড়ি ছিল মুসকানের কস্টিউম। কেন? আর শাড়িগুলো কোথাকার?

শাড়িগুলো কিন্তু আমাদের এখানকার। আমি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছি। লিনা নামের একজনকে আমি চিনি, ওর পরিচিত অনলাইন পেজ জায়া থেকে শাড়িগুলো নিয়েছি। প্রায় সব শাড়ি তার কাছ থেকে নেয়া, আমার ছিল একটা-দুটো।

এখান থেকে শাড়িগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম কারণ ঢাকার জামদানি কলকাতায় খুব একটা পাওয়া যায় না; পাওয়া গেলেও সেগুলোর অনেক দাম। কলকাতা থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল যে, আমি যেন আমারগুলো নিয়ে যাই।

আমরা মুসকানকে এভাবেই পোর্ট্রেট করতে চেয়েছিলাম যে সে সব সময় ঢাকাই জামদানি পরে।

  • পুরো সিরিজেই মুসকানের উপস্থিতি মানেই একটা ভালোলাগার আবেদন তৈরি করে। সেটা উপন্যাসেও এবং সিরিজেও। এটাকে আপনি আবেদন বলবেন না ব্যক্তিত্ব বলবেন?

আমি যখন বইটি পড়ি, তখনই আমার মুশকানকে অনেক অ্যাটার্কটিভ মনে হয়েছে। এর অন্যতম কারণ তার চরিত্রের দৃঢ়তা এবং কনফিডেন্স। আমার কাছে মনে হয়েছে যে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং শারীরিক গঠন অনেকভাবে প্রভাবিত হয় মানুষের মানসিক গঠন এবং তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে, তার আত্মবিশ্বাস দিয়ে। মুসকানের তো সেটা প্রখর।

তবে আমার কাছে সব মানুষই দেখতে ভালো। সবাই তার তার জায়গা থেকে সুন্দর।

মুসকান জুবেরী চরিত্রে বাঁধন। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
  • সিরিজে মুসকানের অভিনয় ও সংলাপের পরিমিতিবোধের কথা ভালোভাবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। এই পরিমিতিবোধের মধ্য দিয়ে অভিনয়শিল্পীর যাওয়াটা কি সাধারণ জীবন-যাপনের মতো, নাকি শিখতে হয়?

আমার জন্য অভিনয়টা মাত্র শুরু হয়েছে। আমি অভিনয় নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে পারি না। কারণ হচ্ছে, অভিনয়ের যে টেকনিক আছে বা মঞ্চ থেকে আসলে বা প্রশিক্ষণ থাকলে বা যারা অলরেডি প্রমাণিত অভিনেতা-অভিনেত্রী তারা ভালো করে বলতে পারবেন।

আমি যেটা করেছি সেটা আমি রেহানা মরিয়ম নূরের ক্ষেত্রে করেছি এবং মুসকানের ক্ষেত্রে করেছি, সেটা হলো আমার পরিচালক যেভাবে চেয়েছেন আমি সেভাবে কাজ করেছি।

আমি খুব গুড লার্নার, আমি ভালো স্টুডেন্ট হিসেবে টিচারদের খুব পছন্দের ছিলাম। মেডিক্যালে যখন পড়েছি, সবাই আমাকে চিনত গুড স্টুডেন্ট হিসেবে।

সৃজিত যেভাবে বলেছেন আমি সেটা ভালো করেছি। আমি হয়তো কিছু জায়গায় মুশকান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, পরিচালক সেগুলো আমাকে ধরিয়ে দিয়েছেন।

  • আর সংলাপ

প্রত্যেকটা সংলাপ মুসকান কেন বলছে সেটা নিয়েও আমাদের বিশ্লেষণ হয়েছে। তখন আমি সেভাবে অ্যাডাপ্ট করেছি এবং প্রচুর রিহার্সেল হয়েছে।

এখান থেকে তো আমি সংলাপ পড়ে গেছিই, ওখানে গিয়েও বিভিন্নভাবে পড়েছি। ওখানে আমি হোটেলে ছিলাম। ওখানে তো আমাকে কেউ চেনে না। আমি ব্রেকফাস্টে যাচ্ছি, জিমে যাচ্ছি আর স্ক্রিপ্ট পড়ছি। ওরা মনে করেছে আমার পরীক্ষা।

সৃজিত আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সৃজিত আমার সহশিল্পীর সংলাপ বলতেন আর আমি আমারটা।

আমি আমার জায়গা থেকে যা যা করতে পারি সেগুলো করে রাখার চেষ্টা করেছি। আর চরিত্র বা সংলাপের যে পরিমিতিবোধ, কোন সংলাপ কখন কীভাবে বলব, সেগুলো পরিচালক আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: নিউজবাংলা
  • সিরিজে আপনাকে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট বলে একটি দায়িত্ব দেয়া হয়। আপনি বাস্তবজীবনেও মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। সিরিজের যুক্তিটা নিয়ে কি বলবেন? মেডিক্যাল সায়েন্স কী বলে?

আপনি জানেন নিশ্চয়ই এই ঘটনাটা কিন্তু হয়েছে। এই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে এবং এই মানুষগুলো এভাবেই সারভাইব করেছে। এই ঘটনা নিয়ে মুভিও হয়েছে। এমন ঘটনা পৃথিবীতে এক্সিস্ট করে কোথাও কোথাও।

  • সিরিজের কিছু দৃশ্য খুবই বীভৎস। সেসব দৃশ্য পর্দায় আসার আগে স্ক্রলে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও এগুলো প্রতীকী রূপে দেখালে ভালো হতো বলে লিখেছেন কেউ কেউ। আপনি কী বলবেন?

এটা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। পরিচালক যেভাবে দেখাতে চেয়েছেন, আমি সেখানে অ্যাক্ট করেছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি। তবে সবার মেন্টাল স্ট্রেন্থ তো এক রকম নয়। সে জন্য দৃশ্যগুলো স্ক্রিনে আসার আগে স্ক্রলে বলে দেয়া হয়েছে।

  • ‘বইয়ের চেয়ে উপাদেয় খাবার আর নেই’ এমন একটি সংলাপ রয়েছে সিরিজে। হোটেল/রেস্ট্রুরেন্ট তো পুড়ে গেল। সেখানে একটা লাইব্রেরি করার অনুরোধ করেছে মুসকান। এটা কি সেকেন্ড সিজনের ইঙ্গিত দেয়?

সেকেন্ড বইটা তো আছেই। সেখানে রেস্ট্রুরেন্টের জায়গায় একটা লাইব্রেরি হওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু আমি জানি না যে সেকেন্ড সিজন হবে কি না।

যারা পড়েননি তারা পড়ে নিতে পারেন। তবে যেহেতু বই পড়ে সিরিজ দেখলে অসুবিধা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আসলে বইটা আগেই পড়ে ফেলাটা ঠিক হবে কি না, এ বিষয়ে সাজেশন দিতে পারছি না।

তবে আমি নিজেকে ভীষণ লাকি মনে করছি এই কারণে যে, আমি এ রকম একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: নিউজবাংলা
  • আপনার কাছে দর্শকের এখন প্রত্যাশা বাড়ছে। আপনি কী কাজ করবেন, সেদিকে নজর আমাদের সবার।

আমাকে তো তিন বছর সময় অনেকেই পাগল বলেছে, বলেছে যে মাথা খারাপ আমার, কী করছি।

এই কাজগুলোই তো করছি তিন বছর ধরে। আমার পরিকল্পনাতেই ছিল এভাবে কাজ করা বা এই কাজগুলো করা।

এখানে আমার যদি একটা ভুল হয়ে যেত, তাহলে হয়তো বলত যে এটা কেন করলা, আবার এখন আমি ঠিক করছি বলে বলছে যে হ্যাঁ, খুব ভালো করেছ, এরপর সব ভালো করবা।

ব্যাপারটা কিন্তু একেবারে এ রকম না। আমি একজন মানুষ, আমি ভুল করবই এবং সেটা এখন বা পরেও হতে পারে। আমার এত বড় বড় সাকসেসের পরেও আমার ভুল হতে পারে এবং এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা।

সব ভালো কাজ আমি এখন করতে পারব এটা ভাবার মতো ইমপ্র্যাকটিক্যাল মানুষ আমি না। আমি খুবই মাটিতে থাকার মতো মানুষ। আমি বাস্তবতা জানি এবং মেনে নিয়ে চলতে চাই।

আর ভালো কাজের সুযোগ তো আমার পেতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে, এই সুযোগটা পাওয়ার পরে সেটা আমি কাজে লাগাতে নাও পারি। আমার এখন যে মেন্টাল স্ট্রেন্থ, সেটা নাও থাকতে পারে। আগাম কিছুই বলতে পারছি না।

আমি চেষ্টা করব আমার যে কাজগুলো করার ইচ্ছা, সেগুলো আমি টাকার জন্য করব না। মানে মিনিমাম যে টাকাটা নিতে হয় সেটা নেব। আর কিছু কাজ আমাকে তো সারভাইভ করার জন্য করতে হচ্ছে, হবে। সেটাও আমি করব।

  • পরবর্তী কাজ কী?

জানি না এখনও। আমি একটা কাজের অডিশন দিয়েছি অনলাইনে। সেটা দেশের না বাইরের সেগুলোও এখন বলতে চাচ্ছি না। কাজটি চূড়ান্ত হলে আনন্দ নিয়ে জানাব।

এ বিভাগের আরো খবর