ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১২-এর বিচারক হিসাবে এসেছিলেন প্রযোজক-পরিচালক করণ জোহার। ওই মিউজিক রিয়েলিটি শোতে এসেই তিনি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ছবিতে গান গেয়েছিলেন লতা। এই সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক গেয়েছিলেন তিনি। সেই রেকর্ডিংয়ের কথাই স্মরণ করে করণ বলেছিলেন, “আমার এখনও মনে আছে যখন লতাজি ‘কভি খুশি কভি গম-এর টাইটেল ট্র্যাক গাইতে এসেছিলেন।
গানটির চারটি সংস্করণ ছিল। একটি প্রধান এবং তিনটি থেকে চারটি দুঃখজনক সংস্করণ। আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে লতাজি আসবেন এবং প্রধান সংস্করণটি গাইবেন। বাকি সংস্করণগুলো অন্য দিন রেকর্ড করা হবে।”
কিন্তু করণের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন কাজ হয়নি। করণ ওই রিয়েলিটি শোতে বলেন, ‘আমি আপনাকে বোঝাতে পারব না, লতাজি কীভাবে একদিনে সব গান গেয়েছিলেন, একটার পর একটা। এমনকি আজও যখন আপনি সেই দিনের কথা মনে করি, যখন আমি লতা মঙ্গেশকরজির সামনে বসে আছি এবং তিনি যতীন-ললিতের সঙ্গে রেওয়াজ করছেন, আমার লোম খাড়া হয়ে যায়। এবং তাঁরা যখন বললেন, দিদি আমরা অন্য ভার্শনগুলো কাল করব, তখন তিনি বললেন কেন, আমরা আজকেই গাইব।’তারপর করণের কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেদিন?
তিনি বলেন, ‘আমি লতাজির সামনে থাকতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম এবং নার্ভাস ছিলাম। তাই আমি যশ চোপড়াকে পাঁচ মিনিটের জন্য আসার অনুরোধ করি। যশজি আমার সঙ্গে সারাদিন বসেছিলেন এবং তিনি চমকে গিয়েছলেন দেখে যে, লতাজি একদিনে সব সংস্করণগুলো গেয়ে দিলেন। এবং তখন আমি বুঝতে পারি যে তিনিই হলেন সুরের মহারানি। আজ সেই সুরের মহারানি প্রয়াত হয়েছেন।’
শোকে ছায়া বলিউডে। আজও করণ তাকে স্মরণ করছেন, ‘লাগ জা গলে, কি ফির ইয়ে হাসিন রাত হো না হো…শায়াদ ফির ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো’ গানের মধ্যে দিয়ে।
করণ জোহার লিখেছেন, “আজ স্বর্গলোক প্রকৃত অর্থে এক সুরের পরীকে দেখল। শৈশবে লতাজির গান শুনে বড় হয়েছি, আজ ওর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। আমি জানি ওনার ‘আওয়াজ হি পেহচান’ আছে এবং তিনি আগামী বহু প্রজন্মের জন্য আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন।”
করণ তার ইনস্টা পোস্টের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘এমন মধুর কণ্ঠে দেশকে গর্বিত কররা জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।’
ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকরের সঙ্গে এক আলাদা সম্পর্ক ছিল লতার। ক্রিকেটকে যেমন ভালোবাসতেন লতা, তেমনই একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল শচিনের প্রতিও।
শচিনকে তিনি ছেলের মতো মনে করতেন। লতাকেও শচিন ‘আই’ ডেকেছেন আজীবন। আই শব্দের বাংলা তর্জমা ‘মা’।
শেষ বার তার দেখা পেতে হাসপাতালে যান টেন্ডুলকর। মাস্কে ঢাকা মুখেও বিষাদের ছায়া। কার্যত তিনি আজ ‘মাতৃহারা’।
টেন্ডুলকর লতাকে যেদিন ‘আই’ বলে ডেকেছিলেন, সেইদিনটা কোনওদিনও ভুলতে পারবেন না তিনি। এমনটা জানিয়েছিলেন একবার সুরসম্রাজ্ঞী। এই ব্যাপারে একবার সাক্ষাৎকারে লতা বলেছিলেন, “শচিন আমাকে তার মায়ের মতোই ভালোবাসে এবং সম্মান করে। আর আমিও শচিনকে নিজের ছেলের মতোই দেখি। একজন মা যেমন নিজের ছেলের জন্য প্রার্থনা করেন, ওর জন্য আমিও ঠিক তেমনটাই করি। শচিন যেদিন আমাকে প্রথম ‘মা’ বলে ডেকেছিল, সেই দিনটা আমি কোনোদিন ভুলব না। আমি কোনওদিনই ভাবতে পারিনি ওর থেকে আমি এই ডাক শুনতে পাব। ওই ডাক শুনে যেমন চমকে গিয়েছিলাম, তেমন আনন্দও পেয়েছিলাম। এইটুকু বলব ওর মতো ছেলে পেয়ে আমি সত্যি ধন্য।”
শচিনকে শুধু ছেলের মতো স্নেহই করতেন না লতা। একবার তাকে ভারতরত্ন দেয়ার আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। মাস্টার ব্লাস্টার ভারতরত্ন খেতাব পাওয়ার প্রায় ১২ বছর আগে এ ব্যাপারে লতা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে কিন্তু বহু বছর ধরেই শচিনই আসল ভারতরত্ন। দেশের জন্য ও যা যা করেছে, তা খুব কম মানুষই করতে পেরেছে। ভারতরত্ন সম্মান পাওয়ার যোগ্য দাবিদারও। আমাদের সকলকে ও প্রতিটা মুহূর্তে গর্বিত করেছে।’
ক্রিকেটের প্রতি লতার এমন ভালোবাসা ছিল, যার জন্য তিনি ভারতের ৮৩-র বিশ্বকাপের সময় দিল্লিতে একটি কনসার্ট করেছিলেন। সেই কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থ তিনি বিসিসিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ফলে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এক লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কার দিতে পেরেছিল। লর্ডসে ১৯৮৩ সালের ঐতিহাসিক বিশ্বকাপের ফাইনালও দেখতে গিয়েছিলেন।