দেশবরেণ্য আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ লাইফ সাপোর্টে। শনিবার রাতে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোবাবার দুপুরে তাকে নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এখনও লাইফ সাপোর্টেই আছেন তিনি।
চঞ্চল মাহমুদের চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন। সে জন্য সোমবার সকালে ফেসবুকে ফান্ডরাইজিং পুল চালু করেছেন চঞ্চলের স্ত্রী রায়না মাহমুদ। ১ লাখ ৭১ হাজার ১৯৬ টাকার জন্য পুলটি খোলা হয়। ফেসবুকের ফান্ডরাইজিং পুল ছাড়াও বিকাশ করা যাবে এই নম্বরে ০১৭৬৮৬২০৫৪৫।
কিন্তু ফান্ডরাইজিং পুল খুলে তেমন কোনো সুবিধা না হওয়ায় এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন রায়না।
ফেসবুকে রায়না লেখেন, ‘মনে গভীর শঙ্কা, শঙ্কা নিয়ে আজ এমন একটা সময়ে কিছু লিখছি যখন সারা দেশ করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। চারদিকে অস্থিরতা। আর এ অস্থিরতা আমাকেও ছেড়ে যায়নি। গত দুই বছর ধরে আমিও ক্যানসার নামক প্রাণঘাতী রোগের সঙ্গে জীবনযুদ্ধ প্রাণপণে করে যাচ্ছি।
‘২০২০ এবং ২০২১ সালে আমাদের পরিবারে আয়ের সব পথ বন্ধ থাকলেও ব্যয় বেড়েছে বহুগুণে। চিকিৎসা ব্যয়ের লাগাম যেন দায়। তবে জীবনে কিছু পুণ্য হয়তো করেছি যার বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তা এমন কিছু শুভানুধ্যায়ী ও বন্ধু দিয়েছেন যাদের হাত ধরে এখনও টিকে আছি, আলহামদুলিল্লাহ।
‘তবে পরীক্ষা দেয়া আমার শেষ হয়নি... আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ যে আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সবার প্রিয় চঞ্চল মাহমুদ। যিনি তার ফটোগ্রাফি দিয়ে বিশেষত এই দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন এবং এর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের ফটোগ্রাফিতে অনন্য অবদান রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়, সেই সবার প্রিয় চঞ্চল মাহমুদ আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
স্ত্রী রায়না মাহমুদের সঙ্গে চঞ্চল মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
‘এই আগস্ট মাস এলেই দেখেছি কেমন মুষড়ে যেত মানুষটি। বারবার বলতেন বাঙালি হয়ে কীভাবে পারল বাঙালির মুক্তিদাতার বুকে গুলি চালাতে? আর দেখতাম চোখের কোণ বেয়ে জল বয়ে যেতে। সেই শোক তিনি আজীবন ধারণ করেছেন। প্রতিবাদস্বরূপ কালো পোশাক তার নিত্যসঙ্গী।
‘ফটোগ্রাফি পেশা হলেও শুধু ফটোগ্রাফার হয়েই থাকেননি তিনি। বহু ছেলেমেয়েকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি। কোর্স করতে এসে অনেকেরই কোর্স ফি থাকত না, তাদের কাছ থেকে কোর্স ফি তো নিতেনই না বরং কোর্স শেষে হাতে ধরে চাকরি নিয়ে দিতেন। এমনই এক পরোপকারী মানুষ চঞ্চল মাহমুদ।
‘কাজপাগল মানুষটি নিজের খেয়াল রাখার সময় পেতেন না। নাওয়া-খাওয়া ভুলে নতুন ফটোগ্রাফি প্রজন্ম তৈরি করাই যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল তার। যতই বলতাম এভাবে কাজ করলে শরীর খারাপ করবে, উত্তরে তিনি বলতেন কাজ না করে মানুষ বাঁচে কী করে। আজ সে অনিয়মের খেসারত দিচ্ছেন। হাই ডায়াবেটিস, ইউরিক এসিড প্রবলেম, কয়েকবার হার্ট অ্যাটাক।
চিকিৎসার জন্য ফেসবুকে ফান্ডরাইজিং পুল। ছবি: স্ক্রিণশট
‘বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতাল ঘুরিয়ে আনা হয়েছে। গত শনিবারও বুকে ব্যথার কারণে তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। সিসিইউতে থাকার কিছুক্ষণ পরেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এখনও সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই। জানি না আল্লাহ এত কিসের পরীক্ষা নিচ্ছেন। জীবনসায়াহ্নে জীবিকা নির্বাহ, অর্থকষ্ট সর্বোপরি জীবন রক্ষাই যেন দায় হয়ে পড়েছে।
‘তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন, দেশের এমন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফারের জীবন রক্ষার্থে আপনার সহযোগিতা চাই...।
বিনীত
মিসেস রায়না মাহমুদ
(চঞ্চল মাহমুদের স্ত্রী)