গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর চিত্রনায়িকা পরীমনির ভূয়সী প্রশংসা করলেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্দেশক চয়নিকা চৌধুরী।
গণমাধ্যম কর্মীদেরকে তিনি জানান, কাজ করতে গিয়ে পরীমনির সঙ্গে তার সম্পর্ক। এখানে অন্য কিছু নেই। নিজেরে স্বচ্ছ মানুষ দাবি করে তিনি এও বলেছেন যে, তিনি এমন কিছু করেননি যার কারণে তিনি আত্ম অনুশোচনায় ভুগবেন।
শুক্রবার গোয়েন্দাদের হাতে আটকের আগে আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন চয়নিকা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে নজরদারিতে রেখেছে এবং তাকে আটকও করা হতে পারে, এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে চয়নিকা বলেন, ‘আমাকে যদি ডাকে (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী), আমার কাছে যদি কিছু জানতে চায়, আমি অবশ্যই যাব।
‘কারণ, আমি জানি আমি খুব পরিচ্ছন্ন মানুষ। আমি এমন কিছু করিনি যেটা ভুলের তাড়ণায় পড়বে বা কোনো ক্রাইম। আমার মনটা যেহেতু পরিষ্কার, আমাকে ডাকলে যে কোনো কিছুতে আমি গিয়ে উত্তর দিয়ে আসব।’
দেশের নাট্য জগতে চয়নিকার আনাগোনা ২০ বছরের। তবে সম্প্রতি তিনি চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন। তার ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমা বানাতে গিয়ে পরীমনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন তারা।
চয়নিকার পরিচালনায় পরীমনির কাজ করার কথা ছিল ‘অন্তরালে’ নামে ওয়েব সিরিজে।
গত জুনে পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনার পর চয়নিকার যে ভূমিকা, তাতে তিনি যে পরীমনির সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন, তা স্পষ্ট হয়।
পরী সংবাদ সম্মেলনের সময় যখন ডুকরে কাঁদছিলেন, তখন চয়নিকা তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। পরী যখন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি বলতে পারতেছি না’, তখন চয়নিকা তাকে বলছিলেন, ‘তোমাকে বলতে হবে আম্মু। না বললে ওরা জানবে কেমন করে।’
পরীমনির সঙ্গে চয়নিয়া ঘনিষ্ঠ হন ‘বিশ্বসুন্দরী ’সিনেমা নির্মাণের সময়গত বুধবার পরীমনি আটক হওয়ার গত বুধবার পরীমনি আটক হওয়ার পর তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আরও দুইজনসহ মোট তিন জনকে আটক করা হয়। মাদকের মামলায় পরদিন গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, পরীর পৃষ্ঠপোষক এক নারীকে তারা নজরদারিতে রেখেছেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সেই নারী যে চয়নিকা, সেই বিষয়ে সেই সময়ই ধারণা করা হচ্ছিল। তবে হারুন তার নাম প্রকাশ করেননি।
চয়নিকা আটক হয়েছেন বাংলামোটরের সোনারগাঁও রোডে সময় টিভির কার্যালয় থেকে নেমে। সেখানে তিনি গিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। তখন বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকে গোয়েন্দারা। চয়নিকা সেখান থেকে গাড়িতে করে বের হতেই তাকে ঘিরে ধরেন গোয়েন্দারা।
সময়টিভি থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদেরকে চয়নিকা বলেন, ‘তার (পরীমনি) সঙ্গে তো আমার একদমই কাজের সম্পর্ক। কাজ করতে গিয়ে সম্পর্ক হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক সুইট অনেক লাভিং, অনেক ট্যালেন্ডেট একটা মেয়ে।
‘কাজের ক্ষেত্রে যেটা হয়। কিন্তু ওর সঙ্গে আমার এমন কোনো কিছু আসলে আমি দেখি নাই। কারণ আমাদের সময়টা তো খুব অল্প। আর শ্যুটিংয়ের থাকতে হয় বেশি। তো ওই ভাবে আসলে আমার দেখা হয়নি।’
পরীমনির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সেগুলো সম্পর্কে জানতেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন. ‘ওর ব্যক্তিগত জায়গায় আছে। ও যেমন আমাকে বলে নি আমারও জানার কোনো আগ্রহ নেই।’
পরীমনি আপনাকে মম সম্বোধন করত, তার মানে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে , এখন তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আসছে সেগুলো কীভাবে দেখছেন- এমন একটি প্রশ্ন ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের।
জবাবে চয়নিকা বলেন, ‘এটা আইন বলতে পারবে, আমরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন যেভাবে বলবে ওইটাই আমরা মেনে নেব। আমার ব্যক্তিগত বলার কিছু নেই।
‘আসা যাওয়া করতাম সব সময় না, যেমন আমি সেই যে ঘটনাটা প্রথমবার গিয়েছিলাম, তার ৪১ দিন পর। আবার আমার দেখা হয়েছিল। আমি এক ঘণ্টা দেড় ঘণ্টার মতো ছিলাম, সব সময় আসা যাওয়া হতো না।’
চয়নিকাকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করে এই গাড়িতে করে যাওয়ার সময়নিজের প্রথম সিনেমা 'বিশ্বসুন্দরী' নির্মাণের কথা তুলে ধরে চয়নিকা বলেন, ‘গত করোনা থেকে ডিসেম্বরের ১১-তে আমার বিশ্বসুন্দরীর রিলিজ। এই দশ মাস আমি যাইনি (পরীমনির বাসায়)। আমি কিন্তু আমার জন্মদিনের দিন গিয়েছি ডিসেম্বরের ১।
‘ওরকম আসা যাওয়া হতো না কিন্তু ওর সঙ্গে আমার অনেক সুইট একটা সম্পর্ক, কাজের সম্পর্ক। একটা মেয়ের কেউ নাই, আমি তাকে স্নেহের চোখে দেখেছি, সে আমাকে মা ডাকে। ওই জায়গা থেকে তার প্রতি একটা ভালোবাসা আছে। কারণ সে কাজের প্রতি খুবই ডেটিকেটেড, সে খুব ট্যালেন্টটেড একটা.. ‘
গত ১৩ জুন পরীমনি যেদিন সাংবাদিকদেরকে ডেকে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের বিষয়টি জানান, সেদিন কেন আপনি সেখানে ছিলেন- এমন প্রশ্নে চয়নিকা বলেন, ‘স্ট্যাটাস দিয়েছিল না একটা? আমিতো শুটিং করছিলাম ১৩ জুন। নাটকের শুটিং করছিলাম। ওই স্ট্যাটাস দেখেই আমি চলে গিয়েছিলাম। কোনো ফোটটোন কিছু না। অনেকে বলছে আমাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’
সেদিন পরীমনির কাছে গেলেও তার বাসায় পুলিশের অভিযান বা পরের দুই দিন পরীর পাশে কেন দাঁড়াননি- এমন প্রশ্ন ছিল গণমাধ্যমকর্মীর।
চয়নিকা বলেন, ‘আপনি যে গিয়েছিলেন, আপনি উঠতে পেরেছিলেন? আপনারা কেউ পেরেছিলেন? যেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকে গেছে, আমি গেলেও তো কোনো লাভ নাই, আমার কিছু করার নাই।
‘আমি যদি যেতে পারতাম, তাহলে যেতাম।’
তিনি পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করেন দাবি করে এই নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্দেশক বলেন, ‘আমার ২০ বছরের ক্যারিয়ারে শুধু ও (পরীমনি) না, যত শিল্পী আছে, যত কলাকৌশলী আছে, যারা নেপথ্যে কাজ করে সবার বিপদ আপদে আমি ছিলাম।
‘আমি এমন মানুষ না যে আমার পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে আমি চুপচাপ বসে আছি এমন না।…আমার মেন্টালিটিটা এ রকম।’