ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে প্রচারের বিরোধিতা করেছে টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ।
তারা বলছে, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনও বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোড়ে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা জরুরি হয়ে উঠছে।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের বক্তব্য ফেসবুকে শেয়ার করেছেন অভিনয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই। দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টটি শেয়ার করেছেন।
অভিনয়শিল্পী সংঘ অবশ্য ‘মডেল বা অভিনয়শিল্পী’ পরিচয়ের মানদণ্ড সুস্পষ্ট করেনি। তবে তারা বলছে, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কোনো টাইম পাসিং সোস্যাল প্লাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোনো টেইলরের দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে, সেও সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেকে অ্যাক্টর বা মডেল দাবি করছে। অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সেসবের কিছুই তার নেই।
‘আবার হুট করে এসেও কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠে না তাও না। সেক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সাথে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরও ভালো কাজের জন্যে এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তার আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে গাইড করে, তার মধ্যে শিল্পী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। কালাচারাল অ্যাক্টিভিস্ট, বিনোদন জগতের স্টেক হোল্ডার, মডেল বা অভিনেত্রী তকমা নেবার বা দেবার আগে, তার কাজ, কাজের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য হওয়া জরুরি।’
সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবেন, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা, তার অবদান প্রভৃতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তার তার পেশা উল্লেখ করবেন এটাই প্রত্যাশিত।’
পিয়াসা ও মৌয়ের বাসায় অভিযানের দিকে ইঙ্গিত করে অভিনয়শিল্পী সংঘ বলেছে, ‘কোথাও পুলিশি অভিযানে ধর-পাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় হেডলাইন হয় অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেপ্তার; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষর্ণীয় সংবাদ। এ ধরনের হেডলাইন; সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে কর্মরত সকলের জন্য সামাজিক ভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিনেত্রী শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ বরেণ্যদের অসম্মান করা হচ্ছে। দিলারা জামান, শর্মিলী আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত বা তার পরের প্রজন্মের শ্রদ্ধেয় সবাইকে অপমান করা হচ্ছে।’
এই বক্তব্যের মাধ্যমে পিয়াসা ও মৌ অভিনয়শিল্পী সংঘের কেউ না বোঝাতে চাইছেন কিনা, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা তাদের ডিজওন করছি।’
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মডেলিং বা অভিনয় নিয়ে যার কোনো একাগ্রতা নেই, কোনো কন্ট্রিবিউশন নেই, তাকে আমরা কেন ওন করব? কেউ প্রভাব খাটিয়ে, পরিচিত থাকার কারণে কোনো কাজ করলে কি তিনি সেই কাজকে ওন করেন? ধরেন, আমি দুই দিন ফুটবল খেললাম আমার এলাকার মাঠে, দুটি গোলও দিলাম। তাতেই কি আমি ওই এলাকার ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে গেলাম।’
নাসিম জানান, যারা অভিনয় বা মডেলিং করেন এবং এটা নিয়ে স্ট্রাগলে আছেন, একাগ্রতা ও নিষ্ঠা আছে, তাদের পাশে সবসময় অভিনয়শিল্পী সংঘ দাঁড়িয়েছে।
পিয়াসা ও মৌ এর বাসা থেকে মদ উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি আমি সিগারেট খাই, সেটা কি আমি ভালো বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব?’
তাহলে অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের সবাই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বাইরে কিনা, প্রশ্ন করলে সরাসরি কোনো জবাব দেননি নাসিম। তিনি বলেন, ‘এমন আচরণ কে করবে কে করবে না, সেটা তার ব্যাপার। সেটা ভালো না মন্দ, তার জন্য আইন রয়েছে। আমি কিছুক্ষণ আগেই বলেছি, সেটা কি আমি ভালো বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব? আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আমাদের বক্তব্য মডেল/অভিনেত্রী বলা নিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘যিনি বা যারা অনেকদিন ধরে অভিনয় করেন না, মডেলিং করেন না, তাকে কি অন্যভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া যেত না বা তার আর কোনো পরিচয় নাই?এমন অভিযোগে সাধারণ কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে যেভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, সেভাবে এ দুই নারীকে পরিচয় করানো সম্ভব ছিল বলে আমরা মনে করি।’