জগৎখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অশনি সংকেত সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ববিতা।
সিনেমার একটি স্মৃতি তিনি জানিয়েছেন এভাবে, ‘‘আমি স্পঞ্জের স্যান্ডেল খুলে লাফ দিয়ে পার হয়ে গেছি। পার হয়ে এপারে চলে এসেছি; কিন্তু স্যান্ডেলটা ওপারেই রয়ে গেছে। এখন অবস্থা এ রকম, স্যান্ডেল আনার জন্য আবার ওপারে যেতে হবে লাফ দিয়ে- এ রকম একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি।
“তখন দেখলাম, মানিকদা এই ব্যাপারটা খেয়াল করলেন। খেয়াল করে তিনি নিজে এগিয়ে এসে ওই পারে গিয়ে আমার স্যান্ডেল দুটো তুলে নিয়ে আবার এপারে এলেন। তারপর আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘নে’।”
সত্যজিতের এমন কাণ্ড দেখে একদম হা হয়ে গিয়েছিলেন ববিতা।– ‘বিস্ময়ে ববিতা’ বইয়ের মলাটে এই স্মৃতিটুকু লেখা আছে। ভেতরে আছে আরও অনেক কথাই।
অশনি সংকেত সিনেমায় ববিতার বিপরীতে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এ দেশের অনেকেই অভিনয় করেছেন গুণী এ শিল্পীর সঙ্গে। কিন্তু সত্যজিতের পরিচালনায় কাজ করা এ দেশের একমাত্র অভিনয়শিল্পী ববিতা।
ক্যারিয়ারের শুরুতে নায়িকা ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
ববিতা যেন এক বিস্ময়। যখন তিনি নায়িকা, সেই সময়ের তো বটেই, এই সময়ের অনেক দর্শক যারা আগের সিনেমা দেখেছেন, তারা সবাই পছন্দ করেন ববিতাকে। ৩০ জুলাই গুণী এ অভিনেত্রীর ৬৮তম জন্মদিন।
অভিনেত্রী ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
ববিতার আসল বা পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। জন্ম ১৯৫৩ সালে। আর অশনি সংকেত সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। অর্থাৎ ২০ বছর বয়সেই ববিতা কাজ করেন কলকাতার সিনেমায় এবং সত্যজিতের পরিচালনায়।
অভিনেতা জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতা। পর্দার মতো বাস্তব জীবনেও জুটি হয়ে উঠছিলেন তারা। ছবি: সংগৃহীত
ববিতা অভিনয় শুরু করেন ১৯৬৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে। এক বছর পরেই শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে প্রথম নায়িকা হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এর সবকিছুর পেছনে ছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান।
অভিনেত্রী ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিল সুবর্ণা। জহির রায়হানের জ্বলতে সুরুজ কি নিচে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম হয়ে যায় ববিতা।
অভিনেত্রী ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্টে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা সিনেমাটি মুক্তির দিনেই মারা যান ববিতার মা। ক্যারিয়ার শুরুতে ভগ্নিপতি জহির রায়হান তাকে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে। অভিনয়ের গুনে ৭০-এর দশকের পুরোটা অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন ববিতা।
ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৩৫০-এরও বেশি। ৮ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ প্রযোজক এবং পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা।
ছেলে অনিকের সঙ্গে ববিতা। ছবি: সংগৃহীত
ববিতার একমাত্র ছেলে অনিক। তিনি কানাডায় লেখাপড়া করে সেখানেই থাকছেন।