বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু জন্ম নেয়ার কারণ হিসেবে কুসংস্কার প্রচার করে সমালোচিত হয়েছে নাটক ‘ঘটনা সত্য’।
এ নিয়ে জরুরি সভা করেছে ছোট পর্দার ১৪ সংগঠনের মোর্চা ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও), টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব), অভিনয়শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টর্স গিল্ড ও টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ।
সংগঠনগুলোর নেতারা এবং ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরা আলোচনা করে বুধবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো ছয়টি শর্ত হলো-
১। ‘ঘটনা সত্য’ নাটকটি কোনোভাবেই আর পরিবর্তন পরিবর্ধন করে ইউটিউবসহ অন্য যেকোনো মাধ্যমে প্রচার করা যাবে না।
২। বিশেষ শিশুদের সামাজিক বিকাশ ও প্রচারণার জন্য এই প্রতিষ্ঠান আরও নাটক নির্মাণ করে তা প্রচার করবে। যাতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে এই নাটক/তথ্যচিত্র সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
৩। শিল্পীদ্বয় (আফরান নিশো ও মেহজাবিন) স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশেষ শিশুদের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। সেই জন্য এই বিষয়ে তাদের সহায়তা করা হবে। যাতে করে তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে প্রচার প্রচারণার কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন।
৪। এখন থেকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নির্মাণসংশ্লিষ্ট পনেরটি সংগঠনের সদস্য নন এমন কাউকে দিয়ে নাটক নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকবেন।
৫। নাটক নির্মাণের আগে অবশ্যই নাটকের পাণ্ডুলিপি নিজ উদ্যেগে প্রিভিউ করবেন এবং নির্মাণের পর দক্ষ প্রিভিউ কমিটি তা অনুমোদন দেবেন।
৬। দেশে বিদ্যমান সম্প্রচার আইন ও নীতিমালা মেনে ভবিষ্যতে নাটক নির্মাণ এবং তা প্রচার করবেন।
সভায় সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিষয়াবলি প্রতিপালনের নিমিত্তে এই নাটকের শিল্পী-কলাকুশলীদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।
উল্লিখিত বিষয়াবলির প্রতি সকলের সমর্থন এবং অনিচ্ছাকৃত, অজ্ঞতাবশত ভুলের জন্য চূড়ান্তভাবে বিশেষ শিশু এবং তাদের পিতা-মাতাদের প্রতি ভুল বার্তা প্রেরণের জন্য আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য তারা অবশ্যই সচেতন থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কাজ করে যাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে-
অতিসম্প্রতি সিএমভি প্রযোজিত ‘ঘটনা সত্য’ নাটকটি ইউটিউবে অবমুক্ত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেলে আন্ত সংগঠনের নেতারা স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রযোজনাসংশ্লিষ্টদের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান।
একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নাটকটির নির্মাণসংশ্লিষ্ট শিল্পী-কলাকুশলীদের বক্তব্য শোনার জন্য অনলাইনে জরুরি সভার আয়োজন করেন। সভায় নির্মাতা জানান যে, নাটকের শেষ অংশটি (ভয়েসওভার) নিয়ে যে আপত্তি উঠেছে সেটি নাটকের মূল পাণ্ডুলিপিতে ছিল না। এটি পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এটি তখন বোধগম্য হয়নি।
অজ্ঞতাবশত, অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য তারা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজে নিয়োজিত হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ভুল তথ্য সংবলিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে সহায়তার জন্য নাটক উপহার দেবেন।
সভায় নাটকটির প্রধান চরিত্রে অভিনয়শিল্পীদ্বয় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মর্মাহত এবং ভীষণভাবে অনুতপ্ত। সে জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি এবং সর্বোপরি তাদের পিতামাতাদের প্রতি অনিচ্ছাকৃত অমার্জনীয় বার্তা প্রেরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং বিশেষ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশসংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে প্রচারকাজে নিজেদের নিযুক্ত করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সভায় আলোচনা শেষে এটি প্রতীয়মান হয় যে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং তাদের পিতামাতার প্রতি বিদ্বেষ কিংবা তাদের অবজ্ঞা করার জন্য এই প্রয়াস কখনোই ছিল না। নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত অদূরদর্শিতার কারণে এমনটা ঘটেছে।
তারা বিশ্বাস করেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু কখনোই সমাজের বোঝা নয়। তাদের পরিপূর্ণ সহযোগিতা করতে পারলে এই শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। ইতিপূর্বে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অনেক নাটক প্রযোজনা করেছে কিন্তু অতীতে কোনো নাটকের মাধ্যমে এমন ভুল বার্তা প্রেরণের মতো ঘটনা ঘটেনি। সেই জন্য তারা সকল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং তাদের মাতাপিতার কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।