বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ভুল করে’ কুসংস্কার ছড়িয়েছে নাটক ‘ঘটনা সত্য’

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২১ ১৮:২৮

নাটকে দেখানো হয়েছে, নিশো গাড়ির তেল চুরি করে বিক্রি করে দেন। আর মেহজাবিন ফ্রিজের জিনিসপত্র না বলে নিয়ে যান। দুজনের মধ্যে একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারা বিয়ে করেন এবং নাটকের শেষে তাদের সন্তানের জন্ম হয়। সেই সন্তান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। আর নাটকের শেষে দৈববাণীর মতো করে একটি কণ্ঠ দাবি করেছে, এই শিশু তাদের বাবা-মায়ের ‘পাপের ফল’।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জন্ম নেয়ার কারণ হিসেবে কুসংস্কার প্রচার করে নাটকে অভিনয় করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন আফরান নিশো ও মেহজাবিন চৌধুরী।

নাটকের নাম ‘ঘটনা সত্য’।

তবে সত্য বলে তারা যে বিষয়টির প্রচার করেছেন, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং তা অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা একটি অপপ্রচার মাত্র।

নির্মাতা সমালোচনার পর বলছেন, তাদের ভুল হয়ে গেছে। নাটকটি তারা তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে নামিয়ে নিয়েছেন। তবে তারা নামালেও অন্য অনেক চ্যানেলে সেটি ঠিকই চলছে।

যেভাবে ছড়ানো হয়েছে কুসংস্কার

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও পায়ের সমস্যা নিয়ে শিশুর জন্মের কারণ হিসেবে মা-বাবার ‘অপরাধ’কে উপজীব্য করে এই নাটকের কাহিনি এগিয়েছে।

নাটকের প্রধান দুই চরিত্র একজন গাড়িচালক ও একজন গৃহপরিচারিকা। গাড়িচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, আর গৃহপরিচারিকার চরিত্রে মেহজাবিন।

নাটকে দেখানো হয়েছে, নিশো গাড়ির তেল চুরি করে বিক্রি করে দেন। আর মেহজাবিন ফ্রিজের জিনিসপত্র না বলে নিয়ে যান। দুজনের মধ্যে একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারা বিয়ে করেন এবং নাটকের শেষে তাদের সন্তানের জন্ম হয়।

সেই সন্তান পুরোপুরি সুস্থ নয়। জন্মের পর হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের এসে বলেন, ‘আপনাদের বাচ্চাটা একটা স্পেশাল চাইল্ড হয়েছে।’

নিশো ভুল বোঝেন। তিনি মনে করেছেন, তাদের সন্তান কোনো বিশেষ গুণ নিয়ে জন্ম নিয়েছে।

এরপর চিকিৎসক তাকে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আসলে আপনি যে স্পেশালের কথা ভাবছেন, সেটা আসলে ঠিক না। স্পেশাল বলতে আসলে যেটা বুঝিয়েছি, সেটা হচ্ছে আপনাদের বাচ্চাটা একটা বিশেষ কেয়ারে রাখা হয়েছে, স্পেশাল কেয়ারে রাখা হয়েছে। বিশেষ যত্নে আছে ও।’

পরে চিকিৎসক আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, শিশুটির ডান পা-টা ভবিষ্যতে মনে হয় না ভালো হবে। সে আর ১০টা বাচ্চার মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারবে না।

মেহজাবিন কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, তিনি মাফ চাইবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। তিনি অপরাধ করেছেন, কিন্তু তার সন্তান কোনো অপরাধ করেনি।

নিশো বলেন, ‘বাটপারির শিক্ষা দিছে।’

নাটকের শেষে দৈববাণীর মতো ভয়েজওভারে আসে, ‘পাপের ফল মানুষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। প্রত্যেককেই তার নিজ নিজ কর্মের ফল কোনো না কোনোভাবে ভোগ করতে হয়, এটাই নিয়তি। কখনও কখনও আমাদের কোনো অনৈতিক কাজ বাস্তব জীবনে চরম শাস্তি নিয়ে আসতে পারে, যা হয়তো জীবনব্যাপী ভোগ করতে হয়।’

পরে আবার বলা হয়, ‘ঘটনাটি কিন্তু সত্য।’

গত ২৪ জুলাই এই নাটকটি সিএমভি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম প্রকাশিত হয়। তবে সেই চ্যানেলে এখন আর নাটকটি দেখা যাচ্ছে না।

তবে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জন্মের পেছনে বাবা-মায়ের অতীত কর্মকাণ্ডের কোনো ভূমিকা আছে, এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে কখনও কোথাও উঠে আসেনি।

ভুল হয়েছে, বলছেন নির্মাতা

এই নাটকের মাধ্যমে সমাজে ভুল বার্তা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পরিচালক রুবেল হাসানও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা বুঝতে পেরেছি এই বিষয়টি ঠিক হয়নি, তখনই নাটকটি আমাদের চ্যানেল থেকে সরিয়ে ফেলেছি। এটি ঠিক করে আবার ছাড়ব।’

কিন্তু নাটকটি তো বিভিন্ন চ্যানেলে চলছে, সেগুলোর কী হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা নাটকটি ঠিক করে যখন আপলোড করব, তখন সেই চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারব।’

কুসংস্কারকে উপজীব্য করে নাটকে অভিনয়ের বিষয়ে মেহজাবিন বা নিশোর বক্তব্য পায়নি নিউজবাংলা।

নিশোর ফোন বন্ধ আর মেহজাবিন ফোন ধরেননি।

তবে রুবেল জানান, তিনি এবং দুই অভিনয়শিল্পী- তিনজনই তাদের ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

সেই পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ঘটনা সত্য’ নাটকের নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী এবং কলাকুশলীদের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ নাটকের মাধ্যমে ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে। অভিযোগটির সাথে আমরা সহমত পোষণ করছি।’

বিষয়টি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে বলা হয়, “যারা আমাদের নাটক ‘ঘটনা সত্য’র এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছেন, সবাইকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে জানাই, প্রথম বার্তা পাওয়ার পরপরই আমরা উপলব্ধি করি, অসাবধানতাবশত নাটকে আমরা ভুল একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের কাজ চলছে।

‘ভবিষ্যতে এমন প্রযোজনা তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যা সঠিক বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দেয় এবং দর্শকদের সঠিক পথে পরিচালিত করে।’

চাইল্ড ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদ

আর এটি দেখে ‘চাইল্ড ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

নাটকের দৃশ্যপটে চরম মিথ্যা এবং কুসংস্কার দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের চেয়ারম্যান তাহরিন আমান বলেন, ‘ঘটনা সত্য গল্পে চরম অসত্য এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের পরিবারকে আঘাত করে যে গল্প সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দুঃখজনক এবং আইনত দণ্ডনীয় হওয়া উচিত।’

এতে বলা হয়, ‘তাদের এই ভুল তথ্যসংবলিত নাটকটি ব্যথিত করেছে লাখো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরিবারকে। এই নাটকের মাধ্যমে যে কুসংস্কার দেখানো হয়েছে, তা আমাদের সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত মূল্যবোধে আঘাত হেনেছে।’

সংস্থাটির কো-ফাউন্ডার ও সেক্রেটারি আনোয়ারা আনা আমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবাদ জানিয়ে থেমে যাব না, আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি নিয়ে কীভাবে আগানো যায়, সেসব নিয়ে আমাদের পরিচিত আইনজীবী বন্ধুরাও এগিয়ে এসেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর