কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধায় বিদায় জানানো হলো দেশের গণসংগীতের পুরোধা ফকির আলমগীরকে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শনিবার দুপুর ১২টায় তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। করোনাবাধা উপেক্ষা করেই শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে জড়ো হন তার কয়েক শ শুভানুধ্যায়ী।
প্রথমেই আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।
এরপর শ্রদ্ধা জানায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে ফকির আলমগীরের মরদেহ রাজধানীর খিলগাঁওয়ের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
খিলগাঁওয়ের মাটির মসজিদ প্রাঙ্গণে শিল্পীর দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে মৃত্যু হয় ফকির আলমগীরের। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
১৮ জুলাই থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন ফকির আলমগীর। এর আগে করোনা পজিটিভ হওয়ায় ১৫ জুলাই রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
একুশে পদকপ্রাপ্ত ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তিনি বলেন, এ দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ করে গণসংগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ফকির আলমগীরের জন্ম ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে।
১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে পাস করে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।
জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন।
১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন ফকির আলমগীর। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংগীত বলয়ে প্রবেশ করেন তিনি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ফকির আলমগীর একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।