তাকে জাদুকর বলেন পাঠকেরা। তিনি কথার জাদুকর। গল্প-উপন্যাসে এমন ঘোর লাগানো সব কাহিনি বলেছেন যে, পাঠকরা মাত হয়ে গেছেন তার লেখায়।
তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ১৯ জুলাই তার মৃত্যুবার্ষিকী। নয় বছর ধরে তিনি নেই। কিন্তু কে বলবে তিনি নেই। তার লেখাতেই এখনও মাতোয়ারা পাঠক-দর্শক।
গল্প, উপন্যাস ছাড়াও হুমায়ূনের পদচারণা ছিল নাটক-গান ও সিনেমায়ও। তাই শিল্প-সাহিত্যের সব অংশেই তিনি বেঁচে আছেন না থেকেও।
করোনা দেশে সংক্রমিত হওয়ার পর যখন সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিল, তখন থেমে গিয়েছিল নাটক নির্মাণ। বাংলাদেশ টেলিভিশন তখন হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটক কোথাও কেউ নেইসহ আরও কিছু নাটক প্রচার করেছে।
শুধু তাই নয়, পুরোনো ও নতুন দর্শকরা নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি নামের নাটকগুলোর যেগুলো ইউটিউবে পাচ্ছে, সেগুলো দেখে নিচ্ছে আগ্রহ নিয়ে।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে পাঠকের। সেখানে হুমায়ূনের জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প-কাহিনি পাঠককে আরও বিমোহিত করেছে।
তারপরও হুমায়ূনের সৃষ্টি চরিত্রগুলো যেন বারবার ফিরে আসে পাঠকের মনে। হিমু, রুপা, মিসির আলী, শুভ্ররা যেন পাঠকের অনেক কাছের।
আর হুমায়ূনের জীবনীমূলক গ্রন্থে আড্ডা আর গল্প করার প্রচুর ঘটনা পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কাজ করা প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীই এ কথাটি স্বীকার করেন।
আসাদুজ্জামান নূর, রিয়াজ, জাহিদ হাসান তাদের স্মৃতিচারণায় এমন অনেক গল্প বলেছেন একাধিকবার।
কথাসাহিত্যিক, নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
হুমায়ূনের গল্প, উপন্যাসের বিভিন্ন ছোট ছোট উক্তি পাঠকের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
যেমন বাদশাহ নামদারে লিখেছেন, ‘রাজা যায়, রাজা আসে। প্রজাও যায়, নতুন প্রজা আসে। কিছুই টিকে থাকে না। ক্ষুধার্ত সময় সবকিছু গিলে ফেলে, তবে গল্প গিলতে পারে না। গল্প থেকে যায়।’
‘এই পৃথিবীতে চোখের জলের মতো পবিত্র তো আর কিছু নেই। এই পবিত্র জলের স্পর্শে সব গ্লানি- সব মালিন্য কেটে যায়।’- কুহক
রজনীতে লিখেছেন, ‘মানুষ হয়ে জন্মানোর সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে মাঝে মাঝে তার সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সে যেতে পারে না। তাকে অপেক্ষা করতে হয়। কিসের অপেক্ষা তাও সে ভালমতো জানে না।’
এমন আরও অনেক ধরনের উক্তি তার আছে। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে লেখা এমন কিছু কথা পাঠকের কাছে বেশি জনপ্রিয়।
সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান হুমায়ূন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক লাভ করেন তিনি।
আর চলচ্চিত্রে ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে তিনি মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার পেয়েছেন।
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
২০১১ সালে সেপ্টেম্বেরে তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যু হয় হুমায়ূন আহমেদের।
বাবার কোনো এক মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘বাবার কোন স্মৃতি বেশি মনে পড়ে’ প্রশ্নের উত্তরে মেয়ে শীলা আহমেদ বলেছিলেন, ‘বাবার মুখ আমার বেশি মনে পড়ে না, মনে পড়ে বাবার কফিনটা।’