নতুন নতুন গান রেকর্ডিং নিয়ে ভালোই ব্যস্ত সময় পার করছেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া। করোনার এমন পরিস্থিতিতে তার গান রেকর্ডিংয়ের যে সিডিউল আছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট।
বিভিন্ন ধরনের গান গাইতে পছন্দ করেন কর্ণিয়া। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে এটি তার নিয়মিত কাজ এবং পেশা। তবে পরিকল্পনা করছেন একেবারেই না করা কাজ শুরু করতে। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানে সুর দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গান নিয়ে ব্যস্ত কর্ণিয়া। সেসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। সেই আলোচনায় উঠে এসেছে আরও কিছু গল্প।
- বেশ কিছু গান করবেন বলে শুনছি। সেগুলো নিয়ে জানতে চাই।
ধন্যবাদ। প্রথমেই জানাতে চাই, ঈদে আমার একটি ডান্স নম্বার আসছে। মূলত মজা করার জন্যই এই গান; যার শিরোনাম ‘দেখলে তোরে’। গানে আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন আলভি।
আলভির সঙ্গে আরও দুটি গান করব। সিঙ্গেলসের পাশাপাশি নাটকের জন্যও গাইছি।
বঙ্গ অরিজিনাল সিরিজ গার্লস স্কোয়াড এর শিরোনাম সংগীতটি গাইব।
কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া। ছবি: সংগৃহীত
সুরকার ও সংগীত পরিচালক মার্সেলের সঙ্গে গান করার কথা আছে। কিন্তু কোন গানটি গাইব সেটা চূড়ান্ত হয়নি।
আরও দুটি গানের কাজ আছে। সেটি করব নাভেদ পারভেজের সঙ্গে। সেটার কাজ এগোচ্ছে।
আসিফ ভাইয়ের সঙ্গেও একটা কাজ করার কথা আছে।
- গানটাই এখন আপনার পেশা?
হ্যাঁ, এখন গানটাই আমার পেশা। আগে নেশা ছিল, কিন্তু এখন নেশা থেকে সেটা পেশায় পরিণত হয়েছে।
- আপনার কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। গানই যেহেতু আপনার পেশা, করোনা পরিস্থিতিতে আপনার তেমন অসুবিধা হয়নি হয়তো।
এখন তো ভালোই কাজ করছি। কিন্তু খুব একটা অসুবিধায় নাই সেটা ভুল। সিঙ্গেলস বা টিভিতে কাজ হচ্ছে, কিন্তু মেইন ইনকাম সোর্স স্টেজ শো তো আর হচ্ছে না। অন্য কাজগুলোতে তো আমরা খুব ছোট ছোট অ্যামাউন্ট পেয়ে থাকি।
এখন আমার ইউটিউবে গান প্রকাশ করছি। কিন্তু এই মাধ্যমে গান প্রকাশ করে কতদিন চলতে পারব কে জানে। গান তৈরি করতে তো একটা খরচ আছে।
কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া। ছবি: সংগৃহীত
- ইনকাম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি বলি, একজন শিল্পী তো ব্যস্তও থাকতে চায়। এই কাজ কি আপনাকে ব্যাস্ত রাখার জন্য যথেষ্ট?
হ্যাঁ, ঠিক আছে, এই পরিমাণটা ভালো।
- সম্প্রতি ‘ইচ্ছে হলে’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ পেয়েছে। গানে আপনার সহশিল্পী নবীন ও তরুণ শেখ সাদি। আপনাদের একসঙ্গে কাজ করার অনেকরকম কারণ থাকতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে কি একটি কারণ গানের রিচ বেশি করানো। শেখ সাদি নেট দুনিয়ায় বেশ পরিচিত।
আমি কিন্তু যে কোনো মেইল ভোকালের সঙ্গে কাজ করি না। যাদেরকে আমি চিনি, যাদের ভয়েস ভালো লাগে, যাদের ভয়েস আমার সঙ্গে যাবে, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করি।
শেখ সাদির সঙ্গে আমার পরিচয় অল্প সময়ের। আমি জানতামই না যে তার সঙ্গে গান গাইব। ইউটিউবে গান শুনেছি তার। সাদির কণ্ঠ আমার কাছে ভালো লাগে। তরুণদের মধ্যে সে বেশ ভালো।
কিন্তু সে যে আমার সহশিল্পী হবে, সেটা কিন্তু আমি বলি নাই। এই গানটা আরও অনেকের সঙ্গে করার কথা ছিল। যেমন ইমরান বা হৃদয় খান, তারা এখন প্রতিষ্ঠানের কাজ না হলে করে না।
গানটি যেহেতু আমার ইউটিউবের জন্য করা, তাই তারা আমার সঙ্গে কাজ করবে না, খুব স্বাভাবিক।
আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে গানটি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একই ধরনের গান আসিফ ভাইয়েল সঙ্গে করেছি বলে আর করতে চাইলাম না।
এরপর আসি সাদি প্রসঙ্গে। সেও খুব স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। ওর যদি গানের কথা ও সুর ভলো না লাগে সে কিন্তু কাজ করে না। এটি তার ভালো লেগেছে এবং কাজটি করেছে। আমার সঙ্গে কিন্তু সাদির ফার্স্ট ডুয়েট। ভালো না লাগলে হয়তো সে কাজটি করতো না।
এভাবেই শেখ সাদির সঙ্গে কাজ করা। এখানে রিচ, ভিউয়ের বিষয় মাথায় ছিল না।
- আপনার নিজের এখন একটা ভক্তকূল আছে। তরুণ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নাম হয়েছে। আপনার অনেক দিকেই হয়তো খেয়াল রাখতে হয়।
আমাকে এখন অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয়। আমাকে যেমন ওয়েট নিয়েও গান করতে হয়, কমার্শিয়াল গান নিয়েও চিন্তা করতে হয়, আবার আমার শ্রোতাদের কথা ভাবতে হয়।
আমি মিডিয়াতে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল কাজ করছি। শ্রোতাদের মানসিকতা কেমন জানেন, তারা যে গান শুনকে চায়, তা যদি শিল্পী না পারে বা না করে তাহলে তারা মনে করে যে শিল্পী ভালো না বা পারে না। আমি সব ধরনের গান আমার শ্রোতাদের জন্য গাইতে চাই। সে দিকে আমি খেয়াল রাখি।
তাই বলে যে আমার নিজের পছন্দের গান গাইব না, তা কিন্তু না। আমার পছন্দ যেন আমি প্রজেক্ট করতে পারি, সেটাও আমার খেয়াল রাখতে হয়।
‘দেখলে তোরে’ গানের শিল্পী কর্ণিয়া ও আলভি। ছবি: সংগৃহীত
- নিজের পছন্দের খেয়াল রাখতেই কি ইউটিউব চ্যানেল?
আমার ইউটিউব চ্যানেল কিন্তু বেশ আগের করা। কিন্ত কখনোই ভাবি নাই যে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কাজ করব। করোনার কারণে এখন করছি।
আমি তো আগে নানা কোম্পানির কাজ করতাম; কোম্পানি ভাবে তার শ্রোতার কথা।
কিন্তু আমার যে ভালো লাগার গান, সেগুলো কিন্তু ভালোবাসা থেকেই গাচ্ছি, তবে অনেকসময় সেগুলো ভিউ হয়না।
অনেকসময় তো নিজের পারিশ্রমিকটাই পাই না। অনেকে বলে যে, তোমার গান শুনতে তোমার চ্যানেলে ঢুকি, তুমি এটুকুতেই হ্যাপি থাক। এমন কথাও মুখের ওপর বলছে।
রকস্টার লুকে কর্ণিয়া। ছবি: সংগৃহীত
পরে চিন্তা করলাম এসব কথা না শুনে লাভ হবে না, নিজের যেটা পছন্দ সেটাই আমার ইউটিউবে রাখি। এটা একটা স্বাধীনতা। হয়তো সে গান হিট হবে না। কিন্তু সেটা আমার পরিবারের ভালো লাগবে। আমার চারপাশের মানুষের ভালো লাগবে।
- অনেকদিন ধরেই গান করছেন। সংগীতাঙ্গনে পলিটিক্স কেমন? যা হয়তো আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
হ্যাঁ, এমন পলিটিক্স আছে তো। সেগুলোর অনেককিছু আমাকে ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত করে, করেছে। প্রথমদিকে আমি রিয়্যাক্ট করতাম। কিন্তু পরে অনেকে আমাকে বোঝাল, এমন ইতিবাচক-নেতিবাচক বিষয় থাকবেই। এর মধ্যে থেকে ভালো কিছু বের করে নিতে হবে। এখন আর মাথা ঘামাই না।
- শেষ স্টেজ শো কবে করেছেন? কত স্টেজ শো ছাড়তে হলো?
গত মাসের (জুন) ২৬ তারিখে শেষ স্টেজ শো করেছি। আর ছাড়তে হয়েছে ১৫-২০ টা শো। সেগুলো অনেক বড় বড় শো ছিল। এগুলোর অনেকগুলোর আগাম টাকা নেয়া ছিল। সেগুলো ফেরত দিতে হয়েছে। কয়েকটি শো এর আগাম টাকা এখনও আছে আমার কাছে। সেগুলো লকডাউনের পরে অ্যাডজাস্ট করা হবে।
কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্ণিয়া। ছবি: সংগৃহীত
- গানের মডেল হচ্ছেন, সেখানে আপনাকে দর্শকরা পছন্দও করছে। অভিনয়ের প্রস্তাব পান নিশ্চয়ই। অভিনয় করার সম্ভাবনা আছে?
অভিনয়, টিভিসি অনেক কিছুরই অফার এসেছে, কিন্তু আমি করতে পারছি না। ইচ্ছা একটা সময় ছিল। কিন্তু আম্মু রাজি হয় না। আম্মু বলে, গানের মধ্যেই থাক। তাই আমিও আর এসব নিয়ে ভাবছি না।
- এমন কিছু করারা পরিকল্পনা আছে যা গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিন্তু এখনও করেননি।
আমি সুর করি কিন্তু লিখতে পারি না। সুর করেছি, ইচ্ছা আছে সেগুলো সুযোগ হলে প্রকাশ করার। আমার সুর করা কোনো কাজ এখনও শ্রোতার শোনেনি। শিগগিরই হবে।