বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দ্য হলিউড রিপোর্টারের রিভিউয়ে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

  • ক্রিস্টিনা জয়ীতা মুন্সী   
  • ৮ জুলাই, ২০২১ ১২:১২

অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কলেজ প্রধানের কাছে অ্যানিকে অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে সব ধরনের চেষ্টা করে রেহানা। অ্যানি রাজি না হওয়ায় রেহানা সিদ্ধান্ত নেয়, দাবি করবে সে নিজেই ধর্ষিত হয়েছে।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত সিনেমা হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছে রেহানা মরিয়ম নূর। তরুণ পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় এই সিনেমাটির রিভিউ করেছেন আমেরিকার বিনোদনভিত্তিক সাইট ‘হলিউড রিপোর্টার’ এর ডেবোরাহ ইয়াং। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য রিভিউটির অনুবাদ করেছেন ক্রিস্টিনা জয়ীতা মুন্সী।

সিনেমার মূল ভূমিকায় কে আছেন, তা এটার নাম থেকেই বোঝা যায়। ড. রেহানা মরিয়ম নূর। তবে চরিত্রের এই সহজাত মর্যাদাটুকু সিনেমার শেষ দৃশ্যের আগপর্যন্ত টের পাওয়া যায় না। তার আগপর্যন্ত রেহানা শুধুই একজন মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক, ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকা এক বিধবা, যে কি না, কঠিন স্বভাবের নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি কঠোর এক শিক্ষক।

তার নৈতিকতাপ্রীতির একটা উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তিনি এক ডাক্তারিপড়ুয়া ছাত্রকে পরীক্ষার সময় স্কেলের পেছনে নোট লেখার জন্য বহিষ্কার করে দেন। এটা ছিল শুরু মাত্র!

যখন এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ আনে, তখন ওই শিক্ষকের ওপর তিনি নাছোড়বান্দার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন।

লেখক ও পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের (লাইভ ফ্রম ঢাকা) দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্যে চলচ্চিত্রে আমরা শুধু একজন অস্থির নারীর মনস্তত্ত্বের গা হিম করা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই তা নয়, যাতে অসাধারণ গভীরতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন নবাগত আজমেরী হক বাঁধন। অন্য সবার মতো যৌন নিপীড়নের মতো নোংরা ঘটনা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়া ও নিজের জায়গায় অনড় ও অটল এক নারী চরিত্র দেখতে পাই।

তার দাঁত কামড়ে পড়ে থাকার স্বভাব একই সঙ্গে তাকে একজন নায়িকা ও করুণার পাত্রে পরিণত করে। নারীবাদীদের হয়তো তা পছন্দ হবে না। তবে এই চিত্রায়ণ নারীর প্রতি সহিংসতা সমর্থনকারীদের জন্য হয়ে দাঁড়াবে চরম অস্বস্তিকর।

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের যে মেডিক্যাল কলেজে রেহানা কাজ করে, নারী বিদ্বেষ সেখানে খুবই স্পষ্ট ও প্রচলিত। ছাত্রছাত্রীদের অপরাধের শাস্তির ক্ষেত্রে অধ্যাপক আরেফিন (কাজী সামি হাসান) সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে, হালকা শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেয়; রেহানা যেখানে মনে করে কঠিনতম শাস্তি হওয়া উচিত।

আরেফিনের অফিস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হওয়া অ্যানির দিকে খুনে দৃষ্টিতে স্থির তাকিয়ে থাকে রেহানা। তার মাথায় সাদা হিজাব, যা তার অন্তরের শুদ্ধতার প্রতীক। সে বুঝতে পারে, ভয়ানক কোনো ঘটনা ঘটেছে, এবং আরও জানার চেষ্টা করে।

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার শেষে আপ্লুত অভিনেত্রী বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

গল্প এগিয়ে চলার সঙ্গে, ঘটনায় রেহানাও বিপজ্জনকভাবে জড়িয়ে পড়ে। ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি, আর এ নিয়ে আমি চুপ থাকতে পারি না।’

অধ্যাপকের বিরুদ্ধে কলেজের প্রধানের কাছে অ্যানিকে অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে সব ধরনের চেষ্টা করে রেহানা। অ্যানি রাজি না হওয়ায় রেহানা সিদ্ধান্ত নেয়, দাবি করবে সে নিজেই ধর্ষিত হয়েছে। তার কাছে অধ্যাপককে তার অপরাধ স্বীকার করানো এবং পদ থেকে বহিষ্কার করাটাই গুরুত্বপূর্ণ, যেন ভবিষ্যতে কলেজের অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে এমনটি না ঘটে।

প্রিমিয়ারের শুরুতে লাল গালিচায় রেহানা মরিয়ম নূর টিম। ছবি: সংগৃহীত

এই পর্যন্ত বেশির ভাগ দর্শকই রেহানার সঙ্গে থাকবেন। জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রতি তার প্রবল আগ্রহের সঙ্গে সবাই একমত না-ও হতে পারেন। কিন্তু এই অল্প বয়সী নারীর মনে এমন কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর্গম চিন্তার অস্তিত্ব আছে, যা সিনেমার দ্বিতীয় ভাগকে নিয়ে যায় তার মধ্যে জমে থাকা অবরোধ, উৎকণ্ঠা ও হিংস্রতার এক শ্বাসরুদ্ধকর সফরে।

রেহানার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে প্রায়ই প্রাধান্য না পাওয়া তার মেয়ে, ইমু (চমৎকার অভিনয় করা আফিয়া জাহিন জাইমা), যাকে সে ভালোবেসে ‘মাম্মি’ বলে ডাকে এবং এ ডাকে ছোট্ট মেয়েটি সাড়া দেয় ‘মাম্মা’ বলে। ইমু এরই মধ্যে তার মাম্মার জেদি স্বভাব নিজের মধ্যে ধারণ করতে শিখেছে। তাদের প্রতিটি ছোটখাটো ইচ্ছের দ্বন্দ্ব পরিণত হয় হৃদয়বিদারক হার না মানার লড়াইয়ে। গল্পে এটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, রেহানা তার মেয়ের মধ্যে নিজেকে দেখে ও তাদের মনস্তত্ত্ব একে অপরের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে প্রভাব বিস্তার করে।

সিনেমাটির প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকা মানসিক ও নৈতিক প্রেক্ষাপটকে একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার অবকাশ নেই। মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতা একে অপরের জায়গায় চলে এসে দ্বন্দ্ব তৈরি করে। যা দর্শককে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দিকে একই সঙ্গে খেলা করতে চ্যালেঞ্জ করে।

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ছবি: সংগৃহীত

ইমুকে রেহানার কাছে রেখে যাওয়ার সময় রেহানার ভাই তাকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করে ‘তুমি কি এসব ওর জন্য করছ, নাকি নিজের জন্য?’ কারণ, সে জানে রেহানা এই ছোট্ট মেয়েটার কোনো প্রত্যাশাই পূরণ করবে না।

সাদ নিশ্চিতভাবে বাঁধনকে পরিচালনা করে চরিত্রটির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন। সাদ ও ডিরেকটর অফ ফটোগ্রাফি তুমিল তামিজুল মিলে জটিল কিছু টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সিনেমার প্রতিটা দৃশ্য জুড়ে থাকা নীল রঙের আভা, যা এতই শীতল ও নিরস, মনে হয় যেন প্রতিটা দৃশ্য থেকে জীবনরস ছেঁকে ফেলা হয়েছে। রেহানার একমুখী চিন্তা আর ঘোর প্রতিফলিত হয় যখন প্রতিটা দৃশ্যে শুধু ফোরগ্রাউন্ড ফোকাসে থাকে, ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে অস্পষ্ট। ক্যামেরার কাজ হ্যান্ডহেল্ড ও সহজাত এবং কখনোই পুরোপুরি স্থির নয়।

এ বিভাগের আরো খবর