তিনি প্লে-ব্যাক সম্রাট। এটুকু বললেই সবাই বুঝতে পারেন কার কথা বলা হচ্ছে। তিনি এন্ড্রু কিশোর।
এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ গানগুলো অন্যতম।
এক বছর হলো এন্ড্রু নেই। ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এন্ড্রু ব্লাড ক্যানসারে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন।
এই দিনে ৪০ বছরের বন্ধু ও সহকর্মীকে নিয়ে কয়েক লাইনে স্মৃতিচারণা করেছেন মিডিয়াব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত।
হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেল কিশোর নেই। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এটাই সত্যি। এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের ঐশ্বর্য। যার খ্যাতির চাইতে কণ্ঠের দ্যুতি ছিল বেশি। যার কাছে গানই ছিল জীবন-মরণ, গানই ছিল প্রাণ।
‘এই গানের জন্যই কিশোর পেয়েছে প্লেব্যাক সম্রাটের উপাধি। গানের জন্যই মানুষ তাকে ভালোবাসত। অবশেষে মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে গত বছরের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেয় সবার প্রিয় এন্ড্রু কিশোর।
এন্ড্রু কিশোরের কবরের সামনে হানিফ সংকেত। ছবি: সংগৃহীত
‘কিশোর যেমন প্রাণ খুলে দরাজ গলায় গাইতে পারত, তেমনি মানুষের সঙ্গেও প্রাণ খুলে মিশতে পারত। সব সময় নিজের সুবিধার চেয়ে অন্যের সুবিধার দিকেই দৃষ্টি ছিল তার।
‘কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গেছি, একসঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল ইত্যাদি’র প্রায় নিয়মিত সংগীতশিল্পী।
‘কিশোর নেই মনে হলেই ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। এন্ড্রু কিশোর ছিল একজন আদর্শ শিল্পী, একজন মানবিক মানুষ। যার তুলনা সে নিজেই।
‘কিশোর তার গানের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু যেখানে থাকো ভালো থেকো। শান্তিতে থেকো।’
এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান গাইতেন তিনি।
প্লে-ব্যাক সম্রাট অ্যান্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
এন্ড্রুর প্রথম প্লে-ব্যাক ১৯৭৭ সালে। আলম খানের সুরে অচিনপুরের রাজকুমারী নেই গানটি গেয়েছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা আসে ১৯৭৯ সালে; এ জে মিন্টু পরিচালিত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে।
১৯৮২ সালে প্রথমবার তার ঘরে আসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরও সাতবার তার ঘরে এসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কারটি।