সেই রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ‘ডানাকাটা পরি’ গানের সঙ্গে নাচতে নাচতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করেন বলে অভিযোগ করেছেন আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি। কারও কারও ‘জেলাসির’ কারণে তাকে নিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা নিয়ে গত রোববার সাভার মডেল থানায় পুলিশের সঙ্গে কী কথা হয়েছে বুধবার তা জানতে চাইলে নিউজবাংলার কাছে এসব অভিযোগ করেন পরীমনি।
তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে যেসব কথা বলা সম্ভব হয় নাই, সেগুলো পুলিশের কাছে গিয়ে বলেছি। সেই রাতে কী কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বলেছি।’
পরীমনি এ সময় নাসিরের সেই মোবাইল ফোনটি কোথায় সে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ওই মোবাইল ফোন দিয়ে সেদিন নাসির ভিডিও করেন। ফোনটি পরীক্ষা করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘‘এমনকি সেই রাতে নাসির একজন ওয়েটারকেও লাথি মেরেছিল। ‘ডানাকাটা পরি’ গানের সঙ্গে নাচতে নাচতে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টাচ করছিল। তার ওই সময়ের আচরণ এত অসভ্য ছিল তা প্রকাশ করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনা তার নিজের মোবাইল ফোনে ধারণও করছিল।’’
‘আমি ডানাকাটা পরি’ গানটি পরীমনি অভিনীত ‘রক্ত’ সিনেমার। সিনেমাটি ছিল বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার।
নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় পরীমনি জানিয়েছেন, বোট ক্লাবের ঘটনার পর থেকে সকাল-বিকেল ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। নাসিরের সেই ফোন এবং ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না তিনি।
অভিনেত্রী পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত
এসব কিছু নিয়ে তীব্র ক্ষোভ, বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশ করেছেন এই অভিনেত্রী। নিউজবাংলাকে বলেছেন, প্রয়োজনে আবারও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন; সব কিছু খুলে বলবেন।
পরীমনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে নাকি নাসির বলেছে, সেই ফোনের অস্তিত্ব নাই। এটা কীভাবে সম্ভব? ওই ফোন হারিয়ে গেলে সেটাও খুঁজে বের করা উচিত পুলিশের।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে তো মামলাই নিচ্ছিল না। পরে ভাবলাম মিডিয়ার চাপে মামলা নিলে সত্য বের হয়ে আসবে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? আমাকে নিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকালে এক রকম, বিকেলে আরেক রকম। ডেভিল রূপ দেখতেছি।’
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার যুক্তি তুলে ধরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘বিষয়টি তো এমন না। একজন মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে এই ধরনের মামলা করতে পারে? জিনিসটা তো এত সহজ না।’
পরীমনির সন্দেহ, মামলায় তিনি যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। তিনি কোনো ‘সিস্টেমের’ শিকারও হতে পারেন।
পরীমনি বলেন, ‘কী ঘটল? মামলার পর কেউ কেউ জেলাস করতে লাগল। এখন মানুষ গায়েব হয়ে যাচ্ছে! ফোন গায়েব হয়ে যাচ্ছে! ঘটনাস্থলে যেসব সাক্ষী ছিল, জলজ্যান্ত মানুষগুলো ছিল, তারা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। মানুষগুলোর অস্তিত্বই পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুই একটি সিস্টেমে হচ্ছে।’
‘মানুষ কেন এত বিকৃত হয়? পারভার্টের মতো, বুঝি না’, নাসিরের প্রসঙ্গে যোগ করেন তিনি।
অভিনেত্রী পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত
১৩ জুন রাতে পরীমনি গণমাধ্যমকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন। ঢাকা বোট ক্লাবে ৯ জুন রাতে সেই ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ঘটনায় সাভার থানায় করা মামলায় ১৪ জুন গ্রেপ্তার করা হয় নাসির ও তার সহযোগী অমিকে, যারা জামিন পেয়েছেন ২৯ জুন মঙ্গলবার।
মামলা নিয়ে রোববার সাভার মডেল থানায় পুলিশের সঙ্গে চার ঘণ্টা কথা বলেন পরীমনি। সেখান থেকে বেরিয়ে ওই ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী বলে জানান।
চার ঘণ্টা থানায় কী কথা হলো, জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, ‘ঢাকা বোট ক্লাবে যা হয়েছিল সেগুলো আমাকে বলতে হয়েছে। তারা তো সেই ঘটনা আমার কাছ থেকে শোনেনি। পুলিশের ঘটনা শোনা উচিত। এ জন্যই এত দেরি হয়েছে।’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীমনি নিজে থেকেই থানায় এসেছেন। আমাদের থানায় নাসির-অমির বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা মামলার অগ্রগতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে।’
নাসিরের ফোন ও মামলার সাক্ষীদের খোঁজ না পাওয়া নিয়ে পরীমনির অভিযোগের বিষয়ে জানতে বুধবার বিকেলে নিউজবাংলা কথা বলেছে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ দরকার তা সংগ্রহ করেছি। কী পেয়েছি না পেয়েছি, তদন্তের স্বার্থে সেটা কারও কাছে প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।’
অভিযোগের তিন দিন পর অর্থাৎ ১৭ জুন রাজধানীর অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমনির বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ আসে। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৭ জুন ক্লাবে মদ্যপ অবস্থায় ভাঙচুর করেন পরীমনি।
অভিনেত্রী পরীমনি। ছবি: সংগৃহীত
অভিযোগের পর এই নায়িকা বলেন, ‘মূল ঘটনা থেকে নজর সরাতেই এসব অভিযোগ আসছে।’
এরপর ২২ জুন সকালে বনানী ক্লাব থেকেও জানানো হয়, ছয়-সাত মাস আগে ক্লাবটিতে অপ্রীতিকর আচরণ করেছিলেন পরী।
একই দিন বোট ক্লাবের মধ্যে পরীমনিসহ তার তিন সঙ্গীর সঙ্গে অভিযুক্ত নাসিরের কথা বলার ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ পায়। সেখানে দেখা যায়, সঙ্গীদের নিয়ে পরীমনি একটি টেবিলে বসে আছেন। সামনে কয়েকটি কাচের বোতল। আর নাসির উদ্দিন মাহমুদ তার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলার পর তিনি ধমকের সুরে বলেন, ‘ওই যা, যা।’