ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা কী করেছিলেন, তার একটি নমুনা প্রকাশ হয়েছে। ১০ সেকেন্ডের নতুন একটি ভিডিও ক্লিপে পরীমনি ও তার সঙ্গীদের একটি গোল টেবিলের চারপাশে বসে থাকতে দেখা গেছে।
সেই টেবিলে কয়েকটি বোতল রাখা ছিল। আর পরীমনির কণ্ঠস্বরও শোনা গেছে, যা ছিল অনেকটাই রাগান্বিত। তিনি ধমক দিচ্ছিলেন।
গত ৯ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করে তোলপাড় ফেলে দেন বাংলা চলচ্চিত্রের ঝলমলে এই তারকা।
অভিযোগ করেন, বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ এই অপকর্ম করেছেন। তার অভিযোগে পরদিনই গ্রেপ্তার হন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
তবে গ্রেপ্তারের আগে নাসির করেন পাল্টা অভিযোগ। তার দাবি, পরীমনি তাদের ক্লাবে গিয়ে জোর করে মদ খেতে চেয়েছেন। তারা বাধা দিলে করেছেন হামলা।
পরীমনির সেদিন সঙ্গীসহ ক্লাবে ঢোকার ভিডিও পাওয়া গেছে দুই দিন পরই। তবে ভেতরের কী হয়েছে, তার কোনো ভিডিও আসেনি কোথাও। যদিও অন্ধকারের মধ্যে ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পরীমনি নিজেই দেন, তাতে কোনো কিছুই স্পষ্ট ছিল না।
এর মধ্যে নিউজবাংলা ১০ সেকেন্ডের নতুন একটি ভিডিও পেয়েছে, যাতে অনেক কিছুই স্পষ্ট। তাদের বসে থাকা, কথাবার্তাও সব শোনা যায়। যদিও এই ১০ সেকেন্ডে আসলে পুরো ঘটনা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা কঠিন।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পরীমনি ও তার তিন সঙ্গী বসে আছেন একটি টেবিল ঘিরে। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ।
ভিডিওটি দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি মেবাইলে ধারণ করা। এতে দেখা যায়, নাসির উদ্দিন দাঁড়িয়ে পরীমনিকে কিছু বলছেন। অন্যদিকে বাকি সবাই চুপ থাকলেও শোনা গেছে পরীমনির উচ্চকণ্ঠ।
বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণ ও প্রাণনাশের মুখে পড়েছিলেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ তোলেন পরীমনি। ছবি: নিউজবাংলাভিডিওর শুরুতেই পরীমনির কণ্ঠে উচ্চস্বরে ‘এই’ শব্দটি শোনা যায়। এরপর নাসির ইংরেজিতে কিছু বলেন। যেখানে ‘ওয়ার্নিং দিস’ শব্দটি স্পষ্ট।
এরপর নাসির আবার বলেন, ‘নো, আমি চলে আসছি, অমি প্লিজ।’ এ সময় অমি কোনো উত্তর দিচ্ছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
তবে নাসিরের কথা শেষ হতে না-হতেই পরীমনি হাত নাড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘যা, যা, যা।’
এই কথা বলেই পরীমনি একটি গ্লাস মুখে তোলেন। সেই গ্লাসে কী ছিল তাও স্পষ্ট নয়।
ভিডিওতে থাকা নাসিরের শেষ কথাটি খুব স্পষ্ট। তিনি খুব জোর দিয়ে বলেছেন, ‘দিস ইস টু মাচ (এটা কিন্তু বেশি হচ্ছে)।’
এই ভিডিওর বিষয়ে পরীমনির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাবে পরীমনির ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে তার ফোন বন্ধ রয়েছে।
ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ক্লাবে গত ৭ জুন পরীমনি তার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে মদ খাওয়ার পর ভাঙচুর করেছেন। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে ডেকে আনা হয়। এরপর পুলিশ করে সাধারণ ডায়েরি।
তবে ওই রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পরীমনি এই অভিযোগ আনার পেছনে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, এই কথা সত্য হলে কেন এতদিন পর তা সামনে আনা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন মাহমুদ এই ক্লাবেরও সদস্য। আর ক্লাব কর্তৃপক্ষ সেদিন পরীমনির সেখানে প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
এই দুই ক্লাব নিয়ে আলোচনার মধ্যে বনানী ক্লাবেও রাতে গিয়ে পরীমনির অপ্রীতিকর আচরণের অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য এই নায়িকা কোনো বক্তব্য দেননি।
পরীমনি যে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেই রাতের
১৪ জুন রাতে গণমাধ্যমকে সেই রাতের বর্ণনা দেন পরীমনি। যেখানে তিনি বলেন, ‘কাজের ব্যাপারে বোট ক্লাবে গিয়েছিলাম। অমি অনেক দিন থেকেই বলছিল একটা কাজ করতে হবে। কিন্তু সময়ের কারণে কাজের ব্যাপারে কথা বলতে পারছিলাম না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিচিত বলে কাজের জন্য কথা বলতে রাজি হই।
‘সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন চার থেকে পাঁচ ব্যক্তি। তারা বসতে বলে প্রথমে কফি ও পরে কোক খাওয়ার প্রস্তাব দেন।
‘কফি আসতে দেরি হচ্ছে বলে দেয়া হয় কোক। কিন্তু সেই কোকের স্বাদ ছিল সন্দেহজনক।
“ক্লাবের ভেতরে থাকা ‘মুরব্বি’ গোছের একজন নিজের নাম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলে জানান। কথাবার্তার একপর্যায়ে আমার মুখে মদের বোতল ঠেলে দেন। জিমিকে মারধর করেন ব্যাপকভাবে।”
নতুন প্রকাশ হওয়া দশ সেকেন্ডের এই ভিডিও দেখে মনে হয় যে, নাসির কিছু একটা করতে মানা করছেন পরীমনিসহ অন্যদের। কিন্তু পরীমনি সেটা শুনছেন না। যা কিনা নাসির গ্রেপ্তার হওয়ার দিন তার যে বক্তব্য, তার সঙ্গে মিলে যায়।
নাসির বলেছিলেন, ‘আমি যখন বের হচ্ছিলাম, তখন তারা ঢোকে। তারা কাউন্টার থেকে দামি মদ জোর করে নেয়ার চেষ্টা করছিল। আমি বাধা দিতে গেলে পরীমনি আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে যায়। গালিগালাজ করে ও গ্লাস প্লেট ভাঙতে থাকে।’
পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাসির উদ্দিন মাহমুদকে। ছবি: নিউজবাংলানাসিরের বক্তব্য যা ছিল
বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে সেই রাতের ভিন্ন একটি বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউন্টারে খুব দামি ড্রিঙ্কস ছিল, দামি বড় বড় ড্রিঙ্কস ছিল সেটা তারা (পরীমনি ও তার সঙ্গীরা) জোর করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘তারা তো নিতে পারে নাই, তারা তো ক্লাবের মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদেরকে বাধা দিছি যে নেয়া যাবে না। নিতে হলে তোমাদের… দিতে হবে এটা বিক্রিযোগ্য না। বাই দিস টাইম আমাদের বার ক্লোসড। এটা দেয়া যাবে না।
‘এর পরই সে (পরীমনি) উত্তেজিত হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে একটার পর গ্লাস প্লেট… সে আমাকে গালিগালাজ শুরু করে। আমাদের স্টাফরা তাকে থামানোর চেষ্টা করে।’
নাসির উদ্দিনের দাবি, তিনি পরীমনিকে আগে থেকে চিনতেন না। আর ঘটনার সময় তিনি তাকে থামাতে চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মারধরের শিকার হন।
তিনি বলেন, ‘তার (পরীমনির) সঙ্গে যে একটা ছেলে ছিল সে আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয় ও গ্লাস ছুড়ে মারে। সেটি আমার গায়ে লাগে। এই অবস্থায় আমাদের সিকিউরিটিদের আমি নির্দেশ দেই, তখন সিকিউরিটিরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। যখন সিকিউরিটিরা নিয়ে যায় বাই দিস টাইম সে অনেক ড্রিঙ্ক করে ফেলেছে এবং এটা আমাদের সিসি ক্যামেরায় দেখবেন যে, সে ড্রিঙ্ক করা অবস্থায় গাড়িতে উঠতে পারছে।’