রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দিতে প্রতিবছরের মতো ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
২০টি সিনেমাকে দেয়া হয়েছে অনুদান। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, শিশুতোষ ও অন্যান্য গল্পের সিনেমা। সিনেমাগুলো কেমন, কারা অভিনয় করবেন, কবে থেকে এর দৃশ্যধারণ শুরু হবে, তা নিয়ে ১৪টি সিনেমার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
নির্মাতা নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল নির্মাণ করবেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা সাড়ে তিন হাত ভূমি। পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমাটি নির্মিত হবে দেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস সাড়ে তিন হাত ভূমি অবলম্বনে।’
জয় বাংলা সিনেমাটি নির্মাণ করবেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। সিনেমাটিতে দেশ ও রাজনীতির বিষয় থাকবে। তিনি জানান, সিনেমাটি হবে নরম ধাঁচের।
পরিচালক বলেন, ‘ঈদের পর শুটিং শুরু করার ইচ্ছা আছে। করোনার মধ্যে যারা কাজ করতে চান, তাদের নিয়েই সিনেমাটি নির্মাণ করব।’
পরিচালক অনিরুদ্ধ রাসেল অনেক দিন আগেই জামদানী সিনেমাটি নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমে। ভার্টেক্স মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় সিনেমায় অভিনয় করার কথা ছিল আনিসুর রহমান মিলন ও শিবা খানের।
কিন্তু সিনেমাটির কাজ শুরু হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিনেমাটি পেয়েছে সরকারি অনুদান।
অনিরুদ্ধ রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিনেমার কাজটি কবে থেকে শুরু করব সেটা এখনও চূড়ান্ত না। এর আগে যাদের নিয়ে কাজটি করতে চেয়েছিলাম, তারা সিনেমায় থাকতেও পারেন নাও পারেন। এটা আসলে নতুন করে কথা বলতে হবে।’
আনিসুর রহমান মিলন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি সিনেমাটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চুক্তির তো একটা মেয়াদ থাকে; সেটা শেষ হয়ে গেছে। সিনেমাটি অনুদান পেয়েছে, এখন যদি তারা মনে করেন আমাকে কাস্ট করবেন, তাহলে আবার নতুন করে কথা বলতে হবে। যদি আমি পারি তাহলে করব, না হলে করব না।’
প্রথমবারের মতো দ্বিতীয়বারও সাহিত্যকেই অবলম্বন করেছেন নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন। সরকারি অনুদানে তার প্রথম সিনেমা ছিল মেঘমল্লার। আখতারুজ্জমান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে তিনি সেটি নির্মাণ করেছিলেন।
এবার জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মাণ করতে যাচ্ছেন চাঁদের অমাবস্যা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করবেন সিনেমাটি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শীতকালে সিনেমাটি নির্মাণ করব। উপন্যাসে যেহেতু শীতকালের বর্ণনা রয়েছে, আমরা সেটি ধরতে চাই। নভেম্বরে শুটিং শুরু করার পরিকল্পনা আছে।’
সরকারি অনুদানে প্রযোজক হিসেবে জয়া আহসানের দ্বিতীয় সিনেমা রইদ। এটি পরিচালনা করবেন মেজবাউর রহমান সুমন। সূর্যের ‘রোদ’ শব্দটি আঞ্চলিকভাবে অনেক অঞ্চলে ‘রইদ’ বললে। সেখান থেকেই সিনেমার নাম দেয়া হয়েছে রইদ।
মেজবাউর রহমান সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রইদ নামটা আমাদের সিনেমার ওয়ার্কিং টাইটেল। এটা পরিবর্তন হবে। সিনেমাটি শুরু করব আগামী বছর। আগে হাওয়া সিনেমার কাজ শেষ করতে চাই।’
অমিতাভ রেজা তার তৃতীয় সিনেমার প্লট হিসেবে বেছে নিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকে। হুমায়ূন আহমেদের ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ উপন্যাস থেকে সিনেমা নির্মাণ করবেন অমিতাভ রেজা। বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন নিউজবাংলাকে।
অরুণ চৌধুরী নির্মাণ করবেন জলে জ্বলে। সিনেমার এই নামটি পরিবর্তন হতে পারে বলে জানান পরিচালক। সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছেন ফজলুর রহমান বাবু।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটি একটি মেয়ে ও তার বাবার গল্প।’
প্রযোজক হিসেবে অনুদান পেয়েছেন পিপলু আর খান। তার সিনেমার নাম বলি। সিনেমাটি নির্মাণ করবেন ইকবাল হোসাইন চৌধুরী। তিনি একসময় সাংবাদিক পেশায় ছিলেন। এখন কানাডায় চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখাপড়া করছেন।
বলি সিনেমাটি চট্টগ্রামের বলি খেলাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হবে বলে জানান পিপলু আর খান। তিনি বলেন, ‘একজন সাবেক বলি খেলোয়াড়কে নিয়ে নির্মিত হবে সিনেমাটি। শীতকালে হবে সিনেমার শুটিং।’
দেশাত্মবোধের সিনেমা নির্মাণ করবেন আশুতোষ সুজন। দ্রুতই সিনেমার কাজ শুরু করতে চান তিনি। এখন সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে বলে নিউজবাংলাকে জানান পরিচালক।
প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে নির্মাতা এস এ হক অলিকেরও। তার সিনেমা গলুই। নৌকাবাইচের গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হবে বলে জানান এই পরিচালক। তাই বর্ষার এই সময়টাই ধরতে চান ক্যামেরায়।
স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন জীবনে। পরিবারকে ভালো রাখতে কাজের সন্ধানে বিদেশে যান বিভিন্ন উপায়ে।
এমনই এক প্রেক্ষাপটের সিনেমা জলরঙ। দেলোয়ার হোসেন দিলুর প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মাণ করবেন কবিরুল ইসলাম রানা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শীতকালে সিনেমাটির দৃশ্যধারণ শুরু হবে। টেকনাফ, ছেড়া দ্বীপ, কক্সবাজারসহ থাইল্যান্ডেও সিনেমার দৃশ্যধারণ করতে হবে।’
‘ধান কাটার মৌসুমে যারা নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় ধান কাটতে যেত তাদের বলা হতো দাওয়াল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সরকারের এক অধ্যাদেশের বিপক্ষে আন্দোলনে নামে তারা। নির্যাতিত দাওয়ালদের পক্ষে এগিয়ে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের সিনেমা।’ বলেন রাকিবুল হাসান চৌধুরী পিকলু।
তিনি আরও জানান, ধান কাটার সময়ে সিনেমাটির শুটিং করবেন তিনি।
হরিজন খ্যাত পরিচালক মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন নির্মাণ করবেন ভাঙন। এটি একটি রেলস্টেশনের গল্প। তিনি জানান, প্রান্তিক ও ছিন্নমূল মানুষের কথাই প্রাধান্য পাবে সিনেমায়।
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেইন্টিং নিয়ে সিনেমা মৃত্যুঞ্জয়ী। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদসহ আরও কয়েকজন গুণী শিল্পীর উল্লেখযোগ্য কাজ নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করবেন উজ্জ্বল কুমার মন্ডল।
২০টি সিনেমার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পাচ্ছেন চাঁদের অমাবস্যা সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক জাহিদুর রহিম অঞ্জন। ৫০ লাখ টাকা পাবে মাইক সিনেমাটি। এ ছাড়া মৃত্যুঞ্জয়ী, জয় বাংলা, জামদানী ও দাওয়াল সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা পাবেন ৬৫ লাখ টাকা করে। আর বাকিরা সবাই পাবেন ৬০ লাখ টাকা করে। ২০টি সিনেমার মোট বাজেট ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা।