বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা।
৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অফিশিয়াল সিলেকশনের আঁ সাতা রিগা বিভাগে নির্বাচিত হয় নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদের সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর।
সাদ বরাবরই গণমাধ্যম থেকে দূরে। তার পরিচালিত সিনেমা কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে যাওয়ার পরও কথা বলছিলেন না তিনি।
মঙ্গলবার সকালে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানালেন কিছু কথা।
সাদ বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক ভাই-বোনদের মধ্যে বড় হয়েছি। আমার চিন্তাভাবনায় তাদের সবার অনেক ইনফ্লুয়েন্স। বিশেষ করে আমার বড় তিন আপুর।’
তিনি বলেন, ‘রেহানাকে নিয়ে লিখতে শুরু করি সম্ভবত ওই রকম একটা জায়গা থেকেই। একটু একটু করে রেহানাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করি। ওর ভেতরের ক্ষোভ আর অবিশ্বাস নিয়ে ভাবি। ওর ভেতরের কমপ্লেক্সিটি এবং কনট্রাডিকটরি আচরণ বোঝার চেষ্টা করি।
‘রেহানা কী চায় এবং কেন চায় এটা নিয়ে লিখতে লিখতে ক্রমশ আরও প্রশ্ন বের হয়ে আসতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ওই প্রশ্নগুলোই আমাকে ইন্সপায়ার করে ছবিটা করতে।’
প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। সেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করেন। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হন। এরপর থেকে তিনি এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। রেহানা ক্রমেই একরোখা হয়ে ওঠেন।
কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম ছবি হিসেবে রেহানা মরিয়ম নূর আমন্ত্রিত হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে সাদ বলেন, ‘আমি খুশি এবং সম্মানিত। এই অ্যাচিভমেন্ট পুরোপুরি আমার টিমের।
‘সবাই মিলে অমানুষিক কষ্ট করেছে আর বেস্ট এফোর্টটা দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ এই ব্রিলিয়ান্ট টিমটা এবং আমার খুবই সেনসিটিভ অ্যাক্টরদের কাছে। ওরা ছাড়া আমি কখনোই এতটুকু আসতে পারতাম না।’
চট্টগ্রামের ছেলে সাদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। ২০০০ সাল থেকে টিভি নাটকসহ গল্প লেখা শুরু।
নির্মাতা ওয়াহিদ তারেক পরিচালিত মুক্তি না পাওয়া সিনেমা ‘আলগা নোঙর’-এর চিত্রনাট্য করেছেন সাদ।
৩৬ বছর বয়সী সাদের প্রথম সিনেমা ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’। ২০১৯ সালে দেশে মুক্তির আগেই সিনেমাটি সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালক ও অভিনেতার পুরস্কার পায়। এ ছাড়া রটারডম, লোকার্নো, সিনেইউরোপাসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন হয় লাইভ ফ্রম ঢাকা।
সিনেমাটি সমালোচক মহলে প্রশংসা পেলেও গণমাধ্যম থেকে দূরেই ছিলেন সাদ।