অভিনয়শিল্পী দম্পতি ফখরুল বাশার মাসুম ও মিলি বাশার। নাটকে ও সিনেমায় বাবা-মার চরিত্রে তাদের উপস্থিতি অনেকদিন ধরেই চোখে পড়ে।
সম্প্রতি তারা দুজনেই অভিনয় শুরু করেছেন লিডার: আমিই বাংলাদেশ সিনেমায়। সিনেমার শুটিং শুরুর দিনে এ দম্পতির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
শোনা যায় বাবা-মার চরিত্র নাকি এখন থাকছেই না, বিশেষ করে নাটকে। অন্যদিকে, নাটকে আপনাদের উপস্থিতি দেখে তা মনে হয় না। আপনাদের প্রায়ই নাটক, ওয়েব কনটেন্টে এবং সিনেমায় দেখা যায়। আসলে পরিস্থিতিটা কেমন?
ফখরুল বাশার মাসুম: নাটকে বাবা-মার চরিত্র থাকছে না- এটা এক অর্থে ঠিক। বেশিভাগ নাটকেই বাবা-মা, ভাই-বোন, খালা-খালু, চাচা চরিত্রগুলো এখন থাকছে না। এমনও দেখা যায় যে, বাবা আছে তো মা নেই, মা আছে তো বাবা নেই। কিংবা নায়কের মা আছে আর নায়িকার বাবা।
এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এটা হয় বাজেটের কারণে। গল্পকার, চিত্রনাট্যকার বা পরিচালককে বলা হয় যে, এসব চরিত্রের জন্য বাজেট নেই। এমন কথা আমরা পরিচালকদের কাছ থেকে শুনেছি।
আর আমাদের দেখা যায় কারণ এখন দেশে অনেক চ্যানেল। অধিকাংশের নাটক দিয়ে স্ক্রিন ভরতে হয়। যে কারণে নাটকের সংখ্যাও অনেক বেশি। মাসে হয়ত টিভি ও ইউটিউবের জন্য শত শত নাটক নির্মিত হয়। কিন্তু আমরা কয়টা নাটকে কাজ করতে পারি? সবচেয়ে বেশি হলেও হয়তো ৩০ দিনে ৩০টি নাটকে কাজ করি। মোট নাটকের হিসেবে ২০-৩০টি নাটক শতাংশের হিসাবে অনেক কম।
মিলি বাশার: আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা দর্শকদের চোখে পড়ছি। আমার মনে হয় দর্শকরা এই চরিত্রগুলো চাচ্ছে। দর্শকদের চাহিদার কারণে এখন হয়ত মা-বাবার চরিত্র আগের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
মা-বাবার সংলাপেও কিন্তু অনেক পরিবর্তন এসেছে। যেমন আগে মা-বাবার চরিত্রের সংলাপ ছিল সন্তানকে বলা বিয়ে করবি কিনা কিংবা খবরের কাগজ পড়া, সন্তানদের খেতে ডাকা। এখন তার চেয়ে বেশি সংলাপ শোনা যায় মা-বাবার চরিত্রে।
নাটকে অভিনয়ের যে হিসাব দিলেন, তাতে তো মনে হচ্ছে না বেশি কাজ করছেন। যদি এটিই আপনাদের জীবীকা হয়, তাহলে অভিনয়ের এই পরিমাণ কি জীবন ধারণের জন্য ঠিক আছে?
ফখরুল বাশার মাসুম: এই বয়সে এই ধরনের কাজ করে জীবীকা নির্বাহ আসলেই কষ্টের। আমরা দুজন কাজ করছি এবং একই ছাদের নিচে থাকছি। তাই হয়ত দুজন মিলে কোনোরকম চালিয়ে নিতে পারছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এটা অনেক কষ্টের।
আপনাদের বয়সের চরিত্র নিয়ে তো ভিন্নভাবে কাজও হচ্ছে না। যেখানে আপনাদের মতো বয়সীরাই মুখ্য। এটা কেন?
ফখরুল বাশার মাসুম: পৃথিবীর সব দেশেই আমাদের বয়সীদের নিয়ে আলাদা ভাবে কাজ হয়। শুধু বাংলাদেশেই দেখি এসব নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।
আমার বন্ধু রাইসুল ইসলাম আসাদ। এতো ভালো একজন অভিনেতা। কিন্তু তিনি নিয়মিত কাজ করছেন না। কারণ তিনি মানানসই চরিত্র পাচ্ছে না।
আমরাও চাই আমাদের নিয়ে কাজ হোক। কিন্তু তা না হলে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমাদের কী করার আছে। আর সে রকম কাজ হলে আমাদের জীবীকা নির্বাহ আরও একটু সহজ হতো।
কখনও যদি ভাবেন কাজ করবেন না, তখন কী করবেন?
ফখরুল বাশার মাসুম: কাজ করব না, এ কথা এখনও ভাবিনি।
শুটিং টানা কয়েকদিন না থাকলে কী করেন?
ফখরুল বাশার মাসুম: লকডাউনে এমন হয়েছিল। অনেকদিন ঘরে থাকতে হয়েছে। তখন সিনেমা দেখেছি, এখনও দেখি। খেলা হলে খেলা দেখি, বই পড়ি।
আমার স্ত্রী ঘরের কাজ করে আনন্দ পায়। সে চমৎকার রান্না করে। কাজ না থাকলে তিনি নিজেই রান্না করেন, আমরা সেগুলো গোগ্রাসে খাই আর ওয়েট বাড়াই।
পুরুষের বয়স বাড়লেও তারা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, নিয়মিত বাড়ির বাইরে যাওয়াসহ অনেক কাজেও যুক্ত হন। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে তেমনটা একেবারেই কম ঘটে। এই বয়সে কাজ না থকলে নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন কি?
মিলি বাশার: না, আমি একদমই নিঃসঙ্গ অনুভব করি না। আমি সংসারের কাজ করতে পছন্দ করি। কখনও গান গাই, ছবি আঁকি, বই পরি- এভাবে সময় কাটে। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলাও আমার কাছে আনন্দের। তাছাড়া বড় ছুটি পেলে ঘুরতে যাই।
ফখরুল বাশার মাসুম: আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, মানুষ বোর হয় কীভাবে। যখন তার কিছুই করার থাকেনা তখন সে হারমনিয়াম টেনে বের করে একটু গান করে কিংবা লেখার চেষ্টা করে আবার ছবি আঁকে। আমি আবার এতো ব্যস্ত হতে পারি না।
তাহলে নিশ্চয়ই আপনারা যৌবনে আরও বেশি গান, কবিতা, ছবি আঁকা নিয়ে সময় কাঁটিয়েছেন?
মিলি বাশার: যৌবনের সময়টা আমরা কাটিয়েছি সৌদি আরবে। সেখানে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গানের অনুষ্ঠান করেছি, নাটক করেছি, কবিতার আসর বসিয়েছি। সেখানে বাচ্চাদের গানের স্কুল করেছিলাম।
ফখরুল বাশার মাসুম: আমরা বিয়ে আগে থেকেই ঢাকা থিয়েটারে যুক্ত ছিলাম। আমি থিয়েটার শুরু করি ১৯৭৪ এ। পরে মিলি জয়েন করে। বিয়ের পর জীবিকার জন্য চলে যায় সৌদি আরব। সেখানে আমরা দিবস কেন্দ্রীক কাজ করতাম। পিকনিক করতাম, বৈশাখী মেলা, পৌষ মেলা করেছি। কখনও কখনও লং ড্রাইভে বের হতাম। ২৬ বছর সেখানে ছিলাম। ২০১২ তে একেবারে দেশে ফিরি।
দুই দশকেরও বেশি সময় পর দেশে ফিরে আবার অভিনয় শুরু করা কি কঠিন ছিল?
ফখরুল বাশার মাসুম: কঠিন ছিল তো অবশ্যই। দেশে ফেরার পরদিনই দেখা করতে যাই বন্ধু আফজাল হোসেনের সঙ্গে। সে বলে, কী করবি? আমি বললাম, কী করব জানি না। গতকাল এসেছি, ভেবে দেখি।
আফজাল বলল, এই বয়সে ভাবার কিছু নাই। এখন কেউ তোকে চাকরি দেবে না। আর ব্যবসা করতে গেলে টাকা মেরে দেবে। তখন আমি চিন্তায় পরে গেলাম।
আফজাল বলল, তুই যেটা জানিস, সেটা কর। ঢাকা থিয়েটার এত এত নাটকে অভিনয় করেছিস, বিটিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী, তুই আবার অভিনয় শুরু কর।
মে মাসে আফজালের কাকা বাবুর শুটিংয়ে অংশ নেই। এরপর শহীদুজ্জামন সেলিম, তানভীর হোসেন প্রবাল, তপু খান, মাতিয়া বানু শুকু আমাকে নিয়ে কাজ করেন।
স্ট্রাগল আসলে সব সময় থাকে। এখনও স্ট্রাগল করছি। এখনকার স্ট্রাগল গ্রহণ ও বর্জনের।
অভিনয়শিল্পী দম্পতি ফখরুল বাশার মাসুম ও মিলি বাশার দম্পতির দুই মেয়ে। বড়জন নাবিলা। তিনি কাজ করেন মাত্রা নামের বিজ্ঞাপনি সংস্থায়। আর ছোট মেয়ে নাজিবা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি অভিনয়েও দেখা যায় তাকে।