বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চুক্তি ছাড়া গান ইউটিউবে, টাকা পাবে কে?

  •    
  • ৫ মে, ২০২১ ১৭:১৮

দেশের একজন জনপ্রিয় শিল্পী ২০১৯ অক্টোবর মাসে ১৬০০ ডলার পেয়েছিলেন। অর্থাৎ ইউটিউবে গান প্রকাশের মাধ্যমে শিল্পীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই এ দিকে বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের।

গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শফিক তুহিন বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘আমার রচিত অথবা সুর করা প্রায় তিন শতাধিক গান নামমাত্র মূল্যে শুধু মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে সাউন্ডটেক থেকে ক্যাসেট ও সিডি ফরমেটে বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে অসংখ্য গান বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল।

‘প্রায় এক দশক ধরে আমার সৃষ্টি এই গানগুলো ইউটিউব, রিংব্যাক টোনসহ অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আমি প্রতিষ্ঠান থেকে একটি কানাকড়িও পাইনি।

‘আমার গানগুলো বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ জানায় আমার সৃষ্ট গানগুলো সাউন্ডটেক কর্তৃক সর্বস্বত্ব অধিকার সংরক্ষিত এবং এই মর্মে কপিরাইট অফিস আমাকে আপত্তি জানিয়েছে।’

এমন অভিযোগ আরও অনেক রয়েছে। ক্যাসেট, সিডি বা ডিভিডির আমলে মৌখিকভাবে অনেক গান তৈরি হয়েছে, সেগুলো জনপ্রিয় হয়েছে এবং সেই গান ও অ্যালবাম ব্যাবসা সফলও হয়। এসব গান বাবদ এককালীন টাকাও পেয়েছেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করার পর। এসময় এসে কপিরাইট, রয়েলিটির নানা বিষয় নিয়ে সচেতেন হয়েছেন অনেকে। ইউটিউব থেকে অর্থপ্রাপ্তি শুরু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপকভাবে নড়েচড়ে বসেছেন কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারেরা।

অভিযোগ উঠছে দেশের বড় বড় অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অনেকের অভিযোগ অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছেন কিন্তু তাদের টাকা দিচ্ছেন না। এর অর্থ, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যে গানগুলো ইউটিউবে দিয়ে ব্যবসা করছেন, সেই গানে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকারের নাম ব্যবহার করছেন অর্থাৎ রাইট দিচ্ছেন কিন্তু টাকা দিচ্ছেন না অর্থাৎ রয়েলিটি দিচ্ছেন না।

আবার অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বলছে, গান ও অ্যালবাম সংশ্লিষ্টদের নির্দিষ্ট সেই গান বা অ্যালবামের জন্য টাকা প্রদান করা হয়েছে। এখন আর কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারের টাকা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই।

তাহলে পুরনো যে গানগুলো এখন ইউটিউবে শোনা যাচ্ছে এবং সেখান থেকে যে টাকা টাকা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কে পাবে? বিষয়টি পরিস্কার করেছেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মৌখিক কোনো বিষয় আসলে কোনো প্রমাণ বা চুক্তির মধ্যে পরে না। তবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান টাকা দিয়ে গান গাওয়ানোর জন্য একটি চুক্তি করেন, কিন্তু সেখানে চুক্তির সময় বা মেয়াদ উল্লেখ নেই। তাহলে আইন অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর চুক্তির মেয়াদ ধরে নেয়া হবে।’

এ তো গেল আইনের কথা। কিন্তু জাফর রাজা চৌধুরী জানালেন, সমস্যা এখন অন্যখানে। এখনকার অভিযোগের ধরন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাসেট-সিডির আমলে যখন মৌখিক চুক্তি হতো, তখন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শুধু ক্যাসেটের জন্য বা সিডি তৈরির জন্য কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারদের টাকা দিতেন। কিন্তু সেই গান তো ইউটিউবে, সিনেমায় বা অন্য কোনো জায়গায় ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের টাকা দেয়া হয়নি।’

এই সমস্যা সমাধানের জন্য দেড় মাস আগে কপিরাইট অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কপিরাইট অফিস ও সংগীত সংশ্লিষ্টরা।

জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘যে গানের কোনো চুক্তি নাই, কিন্তু কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকারের রাইট আছে এমন গান ইউটিউবে উঠলে এবং সেখান থেকে অর্থপ্রাপ্তি হলে প্রযোজক, কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারের মধ্যে সমানভাগে টাকা ভাগ হবে।’

এই নিয়মের যুক্তি খণ্ডাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সিডি বা ক্যাসেট তৈরি করার সময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অন্যরাও টাকা পেয়েছে। কিন্তু ইউটিউবে সেই গান তুলতে প্রযোজকের নতুন করে বিনিয়োগ করতে হয়নি, কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারেরও নতুন করে মেধা খরচ করতে হয়নি। তাই অর্থ ভাগের বেলায় সবাই সমান ভাগ পাবেন।’

উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘যদি এক মাসে কোনো গান থেকে ১০ ডলার আয় হয়, তাহলে সবাই আড়াই ডলার করে পাবেন। আবার কেউ যদি মনে করেন, তিনি এভাবে অপেক্ষা করে টাকা নেবেন না, তিনি এককালীন একটা টাকা নিয়ে নেবেন, সংশ্লিষ্টরা রাজি থাকলে সেটাও তিনি নিয়ে নিতে পারবেন।’

জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, এই নিয়মে আমরা অনেকের সমস্যা সমাধান করেছি। বোর্ড থেকে নীতিটি পাস হয়ে গেছে।’

এক উদাহরণ দিয়ে জাফর রাজা চৌধুরী জানান, দেশের একজন জনপ্রিয় শিল্পী ২০১৯ অক্টোবর মাসে ১৬০০ ডলার পেয়েছিলেন। অর্থাৎ ইউটিউবে গান প্রকাশের মাধ্যমে শিল্পীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই এ দিকে বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের। কেউ চাইলে তার ইউটিউব সম্পর্কিত নানা সেবা দিতেও প্রস্তুত আছেন তারা। একইসঙ্গে কপিরাইট ও রয়েলিটির বিষয় নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়াতে নানা পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

এ বিভাগের আরো খবর