করোনাভাইরাস নামক বিষে নীল পুরো বিশ্ব। ২০২০ সালের মার্চে এই ভাইরাস ধরা পড়ে বাংলাদেশে। এরপর থেকেই এ ভাইরাস কেড়ে নিতে থাকে একের পর এক প্রাণ। বয়স্কদের দিকেই যেন নজর বেশি তার।
দেশের শিল্প, সাহিত্য ও বিনোদন জগতে যারা একটু বয়স্ক তাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। তাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
গত এক বছরে করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশের শিল্প-সাহিত্য ও বিনোদন অঙ্গনের অনেক গুণীজন।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান: ২০২০ সালের ১৪ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেশের শিল্প-সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বার্ধক্যজনিত জটিলতায়ও ভুগছিলেন তিনি।
কামাল লোহানী: সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রজ কর্মী কামাল লোহানী ২০২০ সালের ২০ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার কণ্ঠেই বিজয়ের খবর এসেছিল স্বাধীন বাংলা বেতারে।
চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর: ভাষাসংগ্রামী, দেশীয় শিল্পকলার অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব মুর্তজা বশীর মারা যান ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট। করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি। বার্ধক্যজনিত সমস্যাও ছিল তার।
অভিনেতা কে এস ফিরোজ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অভিনেতা কে এস ফিরোজ মারা যান ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
সাদেক বাচ্চু: হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। পরে করোনায় আক্রান্ত হলে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। ‘একটি সিনেমার গল্প’ নামের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালে সেরা খল চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
আলী যাকের: করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, অভিনেতা ও সংগঠক আলী যাকেরের। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারেও ভুগছিলেন তিনি।
‘আজ রবিবার’ নাটকে বড় চাচা তার অভিনীত জনপ্রিয় একটি চরিত্র। ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান তিনি।
আবদুল কাদের: ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা আবদুল কাদের চিকিৎসা চলাকালে করোনায় আক্রান্ত হন। দেশ ও দেশের বাইরে চিকিৎসা নেয়ার পর ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় এ অভিনেতার। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান: চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
নমিতা ঘোষ: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী নমিতা ঘোষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান চলতি বছরের ২৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে। ১৪ বছর বয়সেই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন শুরু করেন তিনি।
ইন্দ্রমোহন রাজবংশী: করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল মারা যান শব্দসৈনিক ও দেশবরেণ্য লোকগানের শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পান তিনি।
কবরী: চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল প্রথম প্রহর ১২টা ২০ মিনিটে মারা যান চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরী। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ১৯৭৮ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে পান আজীবন সম্মাননা।
এস এম মহসীন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এস এম মহসীনের। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। অভিনয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে পান একুশে পদক।
ফরিদ আহমেদ: ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র শিরোনাম সংগীত ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি চুপি’ গানের সুরকার ফরিদ আহমেদ মারা যান ১৩ এপ্রিল।