তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমা নির্মাণের সময় এদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অনেক স্মৃতি দিয়ে গেছেন উপমহাদেশের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটক।
সেই স্মৃতির কিছুটা লিখে গেছেন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অগ্রজ মোহাম্মদ খসরু। তার লেখা ‘স্বাক্ষাৎকার চতুষ্টয়’ বইতে স্মৃতিচারণ মূলক ‘শেষ স্বাক্ষাৎকার প্রথম নমস্কারের আগে’ বর্ণনায় ঋত্বিক কুমার ঘটক ও কবরীর দেখা হওয়ার একটি ঘটনা লিখেছেন প্রয়াত মোহাম্মদ খসরু।
লেখা আছে-
একদিন ঋত্বিকদা রাজেনদাসহ আমাকে নিয়ে গেলেন এফডিসিতে। শুটিংয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারপর রাজেনদাকে বললেন, ‘চলুন রাজেন বাবু, কবরীর বাসা হয়ে একটু এয়ারপোর্ট যাব।’ আমি তো সঙ্গে রইলামই।
যাবার পথে রহিমা খালার সাথে দেখা। ঋত্বিকদা রহিমা খালাকে বললেন, ‘কিরে বুড়ি, কেমন আছিস? তোকে আমি বিয়ে করব।’ বলেই হাসলেন অট্টম্বরে।
তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার দৃশ্যে কবরী। ছবি: সংগৃহীত
তারপর বাকিটুকু বললেন রাজেনদাকে ‘মশাই, এমন প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী হয় না। একেবারে যাকে বলে জাতশিল্পী।’
কবরীর বাসায় ঢুকেই একটু ফর্মাল খবর-টবর দেবার ধার না ধেরেই ঋত্বিকদা চেঁচিয়ে ডাকলেন ‘কবরী আছিস নাকি বাসায়?’
এঘর থেকে ওঘর। ঋত্বিকদার গলা শুনেই কবরী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল।
তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
চোখেমুখে বলল : আরে ঋত্বিকদা?
ঋত্বিকদা বললেন ‘শোন ছেমরি, আগামীকাল শুটিং, সকাল ছয়টায়, তৈরি থাকবি।’
বিস্ময়াপন্ন কবরী বলল, ‘কাল যে আমার অন্য ছবির সুটিং আছে দাদা!’
ঋত্বিকদা প্রায় ধমকে উঠলেন, ‘রাখ তোর শুটিং। আমি যখন বলছি তখন ওসব শুটিং ফুটিং ক্যানসেল।’ অগত্যা।
তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
কেননা ঋত্বিকদার যে কথা সেই কাজ এবং এই কথা-কাজের আত্মীয়তাই তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কর্মীদের কাছে প্রিয়পাত্র করে তুলেছিল।
শুরু হলো তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার দৃশ্যধারণ। সিনেমার প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। সেই সময়ের কিছু স্মৃতিচারণ তিনি করেছেন নিউজবাংলার কাছে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কবরী তখন তুমুল জনপ্রিয়। তবে আমরা কিন্তু কবরীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য তাকে কাস্ট করিনি। এ ধরনের সিনেমায় অভিনয় জানা শিল্পী দরকার ছিল। কবরী ছিল একদম আমাদের পছন্দসই।’
তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার দৃশ্যে কবরী। ছবি: সংগৃহীত
প্রযোজক হাবিবুর রহমান নতুন এক উপলব্ধির কথা জানালেন। তিনি বলেন, ‘তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটি আমি অনেকবার দেখেছি। আমার মতো হতো রোজি সামাদ যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেই চরিত্রটি বেশি ডোমিনেটিং। কিন্তু পরে মনে হয়েছে না, কবরীর চরিত্রটি আরও অনেক উপরে।’