আপা কেমন আছেন?
ববিতা: কবরী আপা চলে যাওয়ার পর আর কী ভালো থাকা যায়?
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর মৃত্যুতে খুব করে ভেঙে পড়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা।
এ অবস্থাতেই নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে ববিতা জানালেন কবরীর সঙ্গে তার টুকরো টুকরো স্মৃতি আর অনুভূতির কথা।
ববিতা বলেন, ‘কবরী আপার সঙ্গে আমি দুইটা সিনেমা করেছি। শেষ যেটা করেছি সেটা রাজা সূর্য খাঁ। তখন তিনি সংসদ সদস্য। সোনার হরিণ নামে অনেক আগে একটা সিনেমা করেছিলাম। ওটা অবশ্য এক সঙ্গে কাজ ছিল না বলা যায়। সেই সিনেমায় আরও অনেক শিল্পী ছিলেন।’
তার সঙ্গে কতটা সময় কেটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই, কবরী আপা, খান আতাউর রহমান, আমরা সব এক সঙ্গে গিয়েছিলাম মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে। ওই বছর সেখানে আমার সিনেমা ছিল। ওই সময় আমাদের কিছু সময় কেটেছে এক সঙ্গে।
‘তারপর রাজা সূর্য খাঁ’র শুটিংয়ে আমরা এক সঙ্গে মেকআপ রুমে বসে অনেক গল্পটল্প করতাম। উনি আবার বলেছিলেন, আমার নারায়ণগঞ্জে কিছু লোকজন তোমার খুব ভক্ত। তোমার অটোগ্রাফ নিবে ছবি তুলবে। আমি বললাম পাঠিয়ে দিয়েন আপা।’
‘সেই সময় মেকআপ রুমে আমরা একসঙ্গে খাবার খেতাম গল্প করতাম। খুব খারাপ লাগছে, মেনে নিতে পারছি না। বলা যায় কবরী আপা ছিলেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের বাতিঘর। ইতিহাসের একটা প্রতিষ্ঠান। এই শূন্যতা পূরণ হবে না।
‘আমি মনে করি প্রকৃত নক্ষত্রের কোনোদিন মৃত্যু হয় না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক এটাই চাওয়া।’
কবরীর অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েছিলেন ববিতা। তিনি ভাবতেন তার কবরী আপা ঠিক ফিরে আসবেন।
সে কথা জানিয়ে ববিতা বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল কবরী আপা ফিরে আসবেন। অনেকেই কিন্তু ফিরে এসেছেন এই পরিস্থিতি থেকে। এটা মেনে নিতে পারছি না। সেহেরি, তাহাজ্জতের জন্য জেগেই ছিলাম। ভোর রাতে একটা টেক্সট আসল, তো আমি মনে করলাম কেউ বোধহয় দুষ্টুমি করছে। কয়দিন আগে ফারুক ভাইয়ের ব্যাপারে একটা গুজব শুনেছিলাম।’
‘তারপর মনে হলো টেলিভিশন অন করে দেখি তো। তখন জানতে পারলাম রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি চলে গেছেন। তারপর থেকে এত খারাপ লাগছে। এক সেকেন্ডের জন্যও আর ঘুম হচ্ছে না। তারপর থেকে দমবন্ধ অবস্থা লাগছে। মেনে নিতে পারছি না।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কবরী শনিবার প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার হাসপাতালে মারা যান।
সারাহ বেগম কবরী ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ষাট ও সত্তরের দশকের বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা তিনি। ঢাকাই চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী। তাদের আর কেউ রইল না।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের সুতরাং দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন জলছবি ও বাহানায়, ১৯৬৮ সালে সাত ভাই চম্পা, আবির্ভাব, বাঁশরি, যে আগুনে পুড়ি। ১৯৭০ সালে দীপ নেভে নাই, দর্পচূর্ণ, ক খ গ ঘ ঙ, বিনিময় ছবিগুলো।
১৯৭৫ সালে সুজন সখী সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছান। জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আগন্তুক, নীল আকাশের নিচে, ময়নামতি, সারেং বৌ, দেবদাস, হীরামন, চোরাবালি, পারুলের সংসার।