মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০ বিজয়ী হয়েছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ৩ এপ্রিল রাতে মিথিলার মাথায় ওঠে বিজয়ের মুকুট।
কিন্তু মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অভিযোগ আর নেতিবাচক মন্তব্য যেন পিছু ছাড়ছে না তার।
মিস ইউনিভার্সের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিযোগীর বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে থাকতে হবে। মিথিলা এ বয়সের সীমা আগেই পার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আয়োজনে স্বজনপ্রীতি ও কয়েক বছর আগের একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে চলছে নানা সমালোচনা।
এসব বিতর্ক ও গুঞ্জন নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করেছেন মিথিলা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসতে হাসতে মিথিলা বলেন, ‘আমার নামে তো অনেক অভিযোগ।’
বয়স নিয়ে যে অভিযোগটা উঠেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মিথিলা বলেন, ‘লাস্ট ইয়ার মিস ইউনিভার্সের যারা আয়োজক ছিল এবারের আয়োজক এক না। আমাকে নিয়ে বা মিস ইউনিভার্স নিয়ে যেসব ট্রল হচ্ছে, যা কিছু হচ্ছে, লাস্টবার যারা দেশে মিস ইউনিভার্স আয়োজন করেছিল তারা করছে।
তানজিয়া জামান মিথিলা। ছবি: সংগৃহতী
‘মিস ইউনিভার্সের সুনাম নষ্ট করার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে। উনাদের টার্গেট কিন্তু আমি না, উনাদের টার্গেট মিস ইউনিভার্স।
‘আমার সার্টিফিকেট বা আমরা যারা টপ টেনে ছিলাম আমাদের সবাইকে পাসপোর্টের কপি বা জন্মনিবন্ধন বা ভোটার আইডি যেকোনো একটা কিছু দিয়ে তারপরে টপ টেনের ক্যাম্পেইন শুরু করতে হয়েছে।
‘আমরা টপ টেনের ক্যাম্পেইন শুরু করার সময় থেকেই আমাদের বয়স, আমাদের ইনফরমেশন যা যা আছে তার সবকিছুই আছে মিস ইউনিভার্সের আয়োজকদের কাছে। এগুলো না দিয়ে আমি আসলে ওখানে কিন্তু আবেদনই করতে পারব না।
‘আর এগুলো ঠিক না থাকলেতো কিছুই হতে পারতাম না। এগুলোতো শুধু বাংলাদেশের মিস ইউনিভার্সের আয়োজকদের হাতে না, এগুলো আমেরিকা থেকে সব কিছু হয়ে আসছে। আমার বয়স যদি ঠিক না থাকে তাহলে তো আমেরিকান ভিসাই দেবে না।’
তানজিয়া জামান মিথিলা। ছবি: সংগৃহতী
এইসব বিতর্ক নিয়ে নিজের ফ্যান ফলোয়ার উদ্দেশ্যে মিথিলা বলেন, ‘আমার যারা ফ্যান ফলোয়ার আছেন, তারা আমার ডাইহার্ট ফ্যান। যারা আমাকে ভালোবাসেন, জেনুইনলি ভালোবাসে। তো এই মুহূর্তে আমি নেগেটিভ জিনিসটাকে আমার লাইফে প্রায়োরিটি দিচ্ছি না।
‘কারণ প্রথম দিন থেকেই আমাকে নিয়ে কিছু হলেই সেটা ভাইরাল হয়। হয় আমার এক্সবয়ফেন্ড নিয়ে হয়। মনে হয় জীবনে আমিই প্রেম করেছি, আর কেউ করে নাই। আমার বয়স নিয়ে হচ্ছে। আমি মিডিয়াতে সাত বছর কাজ করি। আমি আয়োজকদের চিনব বা আমি বিচারকদের চিনব এটাইতো স্বাভাবিক, সেটা নিয়েও কনট্রোভার্সি হচ্ছে।’
নিজের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন মিথিলা।
তিনি বলেন, ‘এটা একট ভিত্তিহীন বিতর্ক। আমি একটা ভিডিও করেছি আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে। ফ্রেন্ডদের সঙ্গে মানুষ মজা করে না? যেই ভিডিও টা করেছি সেটা আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল। আমরা তিনজন মুভি দেখতে গিয়েছিলাম, মুভি দেখার পরে ও ওয়াসরুমে গিয়েছিল, আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম, তখন আমরা দুষ্টুমি করতে করতে এই ভিডিওটা বানিয়েছি।
‘ভাইরাল হওয়ায় জন্য মানুষ দুষ্টুমি করে কত কিছু বানায় না? তখন ছোট ছিলামতো, চার বছর আগের কথা। তখন আসলে দুষ্টুমি করে জিনিসটা করে ফেলেছিলাম। এই জিনিসটা নিয়ে মানুষ আমাকে যে কোথায় নামায়ে নিয়ে গেছে!’
তানজিয়া জামান মিথিলা। ছবি: সংগৃহতী
যারা এইসব নেতিবাচক কথা বলেন তাদের কড়া জবাব দিয়ে মিথিলা বলেন, ‘আমি তাদের বলব তোমরা সব সময় কিছু নিয়ে যে নেগেটিভ কথা বলো, আমিতো অনেক পজিটিভ জিনিসও করেছি বাংলাদেশের হয়ে। আমি বলিউডের সিনেমায় কাজ করেছি। আমি প্রথম মিস সুপার ন্যাশনাল হিসেবে পোল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে এসেছি। আমি বেস্ট মডেল হিসেবে কোরিয়া থেকে অ্যাওয়ার্ড নিয়ে এসেছি। তারপর আরও কত ইন্টারন্যাশনাল শো বাইরে গিয়ে করে আসছি।
‘ইভেন এবছর মিস ইউনিভার্স হলাম। আমিতো অনেক অভিজ্ঞ, অলরেডি অনেক গ্রুমড। আমি ওখানে গেলে আমারতো তেমন চিন্তা করতে হবে না; আমাকে ওরা বলতে পারবে না যে, আমি কাপড় পরতে পারি না, আমি হিল পরে হাঁটতে পারি না, ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে পারি না।
বলিউডের রোহিঙ্গা সিনেমার পোস্টারে মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত
‘তোমরাতো একটা মানুষের পজিটিভ জিনিস নিয়ে কথা বলো না। এতো বছর কষ্ট করার পরে যে আমি মিস ইউনিভার্স হলাম সেটা নিয়ে তোমরা একটা বারও ভালো কথা বলো না।’
নেতিবাচক কথার তীব্র সমালোচনা করেন মিথিলা। উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ওরা কাকে নিয়ে কথা বলে না? সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের জন্য হাজারটা কাজ করেছে, তাকে আন্তর্জাতিকভাবে কে না চেনে! সাকিব আল হাসান কোনো রকম কিছু করলে ওকে একদম একরকম রাস্তায় শোয়ায়া দেয়!’
তানজিয়া জামান মিথিলা। ছবি: সংগৃহতী