দেশের প্রথম ফিচার-লেংথ অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র ‘মুজিব আমার পিতা’র নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা মুক্তির।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে আইসিটি ডিভিশনের অর্থায়নে নির্মাণ হয়েছে চলচ্চিত্রটি।
দেশের সর্ববৃহৎ টুডি অ্যানিমেশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রোলেন্সার স্টুডিও এটি নির্মাণ করেছে।
এর কাহিনি রচনা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ অবলম্বনে। পরিচালনা করেছেন সোহেল মোহাম্মদ রানা।
কয়েক মাস আগে চলচ্চিত্রটির টিজার ও সম্প্রতি দুইটি গান প্রকাশ করা হয়েছে প্রোলেন্সার স্টুডিওর ইউটিউব চ্যানেলে।
সিনেমটিতে তিনটি গান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান নির্মাতা সোহেল মোহাম্মদ রানা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন দুইটি গান আমাদের প্রোলেন্সারের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছি। আরেকটি গান আমরা চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগে আগে প্রচারণার অংশ হিসেবে ছাড়ব।’
গত ১৩ মার্চ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ভবনে হয়ে গেছে চলচ্চিত্রটির টেকনিক্যাল প্রিমিয়ার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
‘মুজিব আমার পিতা’ অ্যানিমেশন সিনেমার পোস্টার
‘ফিচার লেংথ সিনেমা তো স্বপ্নের ব্যাপার’
পরিচালক সোহেল মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর চেয়ে সম্মানের আর কিছু হতে পারে না। আর আমাদের দেশে বসে টুডি অ্যানিমেশন মাধ্যমে ফিচার লেংথ সিনেমা বানানো তো স্বপ্নের মতো একটি ব্যাপার। থ্রিডির চেয়ে টুডি অ্যানিমেশনে খরচ এবং পরিশ্রম দুটোই অনেক বেশি হয়।
‘তাই এমনকি উন্নত দেশের স্টুডিওগুলো পর্যন্ত এখন টুডি অ্যানিমেটেড সিনেমা সচরাচর বানায় না। সেখানে আমরা বাংলাদেশে বসেই এমন একটি অসাধ্য সাধন করে ফেলেছি! দেশীয় অ্যানিমেটরদের নিয়েই এবং সিনেমাটা সকল বিচারেই আন্তর্জাতিক মানের হয়েছে।’
৪৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। দীর্ঘ গবেষণা ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত করা হয় এর চিত্রনাট্য। সে কাজে নেতৃত্ব দেন তন্ময় আহমেদ।
সেসব অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। কাজেই তাকে নিয়ে গবেষণা করাটা যেমন আনন্দের, তেমনি থাকতে হয়েছে অত্যন্ত সচেতন। খেয়াল রাখতে হয়ছে যেন ছোট্ট একটা ভুলও না থাকে। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি।
‘এক-একটা তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দিনের পর দিন বই পড়েছি, পুরনো পত্রিকা ঘেঁটেছি, সাক্ষাৎকার নিয়েছি। চেষ্টা করেছি যেন একটাও তথ্যগত ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকে।’
সিনেমাটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও গবেষণা করেছেন মুসাহো মুকুল। তার ভিত্তিতে চিত্রনাট্য রচনা করেন চিশতী কানন ও ফাহাদ ইবনে কবির। সে অনুযায়ী করা হয় স্টোরি বোর্ড। ক্যারেক্টার ডিজাইন করেন আরাফাত করিম। তাকে সহযোগিতা করেন রাফিউজ্জামান রিদম।
গল্প থেকে কীভাবে চিত্রনাট্য লেখা হলো সেই গল্পটাও জানালেন ফাহাদ ইবনে কবির।
তিনি বলেন, “‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ গল্পটি নিয়ে এটা করা। গল্পটি খুবই ছোট, ৫ পৃষ্টার ছিল। ওটার ইন্টারলিংক খোঁজার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা নিয়েছি বঙ্গবন্ধু আত্মজীবনী থেকে।’
এটি নির্মাণে কাজ করেছেন ৪৮ জন অ্যানিমেটর। লোকেশন ডিজাইন করেন ইব্রাহিম খলিল। কস্টিউমের পাশাপাশি কালার টিমের নেতৃত্ব দেন মনিরা আলম।
ব্যাকগ্রাউন্ড টিমের নেতৃত্ব দেন পল্লব কুমার। পরিচালকের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেন আরিফ সিদ্দিকী নিটোল। সব মিলিয়ে কাজ করেছে ৩০০ জনের এক বিশাল দল।
বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন ২০ একটি বাচিকশিল্পীর একটি দল। কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন মেহবুবা মেহনাজ বিপা, রাজু আহমেদ, মোহাম্মদ রফিক, তাহসিনা ফেরদৌস রিনিয়া, আবুল কালাম আজাদ সেতু, মেরিনা মিতুসহ অনেকে।
শ্যামল মিত্রের গান
চলচ্চিত্রটির তিনটি গানের মধ্যে ‘তোমার সমাধি’ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয় প্রোলেন্সার স্টুডিওর ইউটিউব চ্যানেলে। এটি মূলত ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অন্তরাল’ চলচ্চিত্রের গান। গীতিকার ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। সুর করার পাশাপাশি কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্যামল মিত্র। সংগীত পরিচালনা করেন সুধীন দাশগুপ্ত।
গানটি সম্পর্কে আরও তথ্য জানিয়ে পরিচালক সোহেল মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘‘‘অন্তরাল’ চলচ্চিত্রটির জন্য এ গানের কেবল চারটি চরণ লেখা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আমন্ত্রণে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায় ও শ্যামল মিত্র। দেখা করেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও।
‘সে সময় বঙ্গবন্ধু শ্যামল মিত্রকে গানটির পূর্ণ রূপ দিতে অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তার কথা মাথায় রেখে গানের বাকিটুকু লেখেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার।’’
এই চলচ্চিত্রে গানটি নতুন করে গেয়েছেন মেঘদল ব্যান্ডের ভোকাল শিবু কুমার শীল।
তিনি বলেন, ‘শ্যামল মিত্রের গাওয়া এই গানটা আমি নতুন করে কম্পোজিশন করেছি। সিনেমাটির জন্য নতুন করে গেয়েছি আমি।’
চলচ্চিত্রটিতে ‘তোমার অসীমে’ শিরোনামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরও গেয়েছেন নুসরাত জাহান ইরা।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এমন একটি চলচ্চিত্রের জন্য গান গাইতে পেয়ে সত্যিই আমি খুবই খুশি। আশা করছি চলচ্চিত্রটিও দারুণ হবে।’