দেশে ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়ার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে অনলাইনভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে।
এখানে যেমন অনেক কনটেন্ট খুব প্রশংসা পাচ্ছে, তেমনি কিছু কনটেন্ট নিয়ে হয়েছে সমালোচনা। ঘটেছে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও।দেশের ওটিটি ছাড়াও বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কাজ করছে এদেশে। তৈরি হচ্ছে ব্যবসার সুযোগ। ওটিটির কার্যক্রম তদারকির জন্য নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া তৈরিতে কাজ করছে ১৪ সদস্যের কমিটি।গত ডিসেম্বরে গঠন করা হয়েছে কমিটি। তারা এরই মধ্যে তিনটি সভায় অংশ নিয়েছে। সবার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। কমিটির অনেকেই তাদের লিখিত পরামর্শ জমা দিয়েছেন।
কমিটির সভাপতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলমসহ সদস্য নির্মাতা পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা, সালাউদ্দিন লাভলু ও অভিনেতা তারিক আনাম খানের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।
অমিতাভ রেজা বলেন, ‘ওটিটি এখন একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার। আমাদের দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোও কাজ করছে। আমি আমার পরামর্শে জানিয়েছি, এই প্রতিযোগিতায় দেশের প্ল্যাটফর্মগুলো যেন কিছু সুবিধা বেশি পায়।’
সম্প্রতি ভারতে ওটিটি ও সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আইন হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কনটেন্টগুলো থাকবে নীতিমালার আওতায়।দেশে ওটিটির নীতিমালা তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের সম্প্রতি অনুমোদিত ওটিটি নীতিমালা কোনো সাহায্য করতে পারে কি না জানতে চাইলে অমিতাভ বলেন, ‘না, ভারতেরটা আমাদের কাজে লাগবে না। কারণ ওদের কাজের ক্ষেত্র বড় এবং পরিণত। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট আলাদা।’
অভিনেতা তারিক আনাম খান জানান, তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন একটি সহযোগিতামূলক এবং দায়িত্বশীল পরিবেশ গঠনের দিকে।
তিনি বলেন, ‘দেশে ওটিটি কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। বিদেশিরা এসেও কাজ করছে। তার মানে এখানে কনটেন্ট আছে। তরুণসহ অনেক শিল্পী-কলাকুশলীর কাজ করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলা ভাষার দর্শকদের সবাইকে না পাওয়া গেলেও যদি কোটি খানেক দর্শকের কাছে কোনো কনটেন্ট পৌঁছায়, সেটিও খারাপ না। তাই আমার পরামর্শ হলো সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর সঙ্গে দায়িত্বশীলতা লাগবে। একটা গ্লোবাল আধুনিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে সবার দায়িত্বশীল হতে হবে। তা না হলে তৈরি হবে সংকট। ইচ্ছেমতো যেন তেন গল্প, যা তা দৃশ্য ও সংলাপ দেখিয়ে-শুনিয়ে জায়গাটা নষ্ট করা যাবে না। আমরা প্যারেন্টাল গাইডেন্স ব্যবহারের কথা জোর দিয়ে বলেছি।’
টিভি ড্রামা ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু ওটিটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা লিখিত পরামর্শ জমা দিয়েছি। সেখানে আমাদের মূলবোধ, দেশীয় সংস্কৃতি ও নিজস্বতাকে গুরুত্ব দিয়েছি। সস্তা জনপ্রিয়তার কোনো উপাদানকে যেন উৎসাহিত করা না হয়, এটাই আমাদের পরামর্শ।’
হাসিনা আ ডটার্স টেল খ্যাত পরিচালক পিপলু আর খান জানান, ওটিটির নীতিমালা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটির সঙ্গে বাণিজ্য, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও আইনকানুনের বিষয় জড়িত। তাই বিষয়গুলো ভালো করে না বুঝে এগোনো যাবে না বলে মনে করেন তিনি।
পিপলু বলেন, ‘আমাদের অনেক কথা হয়েছে, অনেক ভালো কথা হয়েছে। আমরা কথা বলে নীতিমালায় একটা গ্লোবাল রিফ্লেকশন দিতে চেয়েছি। আরও কথা হবে। দেখা যাক কী হয়।’
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিতে দেশীয় ওটিটির মালিক পক্ষের কোনো প্রতিনিধি নেই। তবে তারা চাইলে নীতিমালা তৈরিতে মতামত দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজান উল আলম।
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা তৈরি করতে সময় লাগে। এরই মধ্যে আমরা লিখিত পরামর্শ পাচ্ছি। আরও অনেক ধরনের পরামর্শ নিতে হবে। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে, বিভিন্ন নিয়মকানুন পর্যালোচনা করেই নীতিমালা তৈরি করব আমরা।’
নীতিমালা তৈরিতে আরও কত সময় লাগবে বা আগামী সভা কবে হবে তা নিশ্চিত করে কিছু বলেননি তিনি।