কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে নিয়ে চিরঞ্জীব মুজিব সিনেমার দৃশ্যধারণ। সিনেমায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমা।
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন নজরুল ইসলাম। এর চিত্রনাট্যকার জুয়েল মাহমুদ; নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
ইতিহাসনির্ভর এই চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও চরিত্র নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন পূর্ণিমা।
চিরঞ্জীব মুজিব সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে পূর্ণিমা বলেন, ‘এক কথায় যদি বলি চিরঞ্জীব মুজিব আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি অনেক কিছু জেনেছি বঙ্গমাতা সম্পর্কে।’
তিনি বলেন, ‘জুয়েল ভাই প্রথমে এই চরিত্রের কথা আমাকে জানিয়ে বলেছিলেন, আপনার এই চরিত্র নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা চলছিল। আমিও হাসতে হাসতে তাকে বলেছিলাম, এতো কঠিন চরিত্র। মানুষ তো আমাকে নাচ-গান, রোমান্টিক টাইপের অভিনয়ে দেখে অভ্যস্ত।
‘আমি তো বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সম্পর্কে জানি না। তিনি কেমন ছিলেন। এ সব আমাকে আগে ব্রিফ করতে হবে। জুয়েল ভাই তখন বললেন, আমি সব বলব।’
বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে অভিনেত্রী পূর্ণিমা। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমাটির পরিচালক নজরুল ইসলাম তাকে যেভাবে সাহায্য করেন সে প্রসঙ্গ টেনে পূর্ণিমা বলেন, ‘নজরুল ইসলাম সিনেমাটির গল্পকারও। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যগুলো লিখে দিতেন। বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধুকে তিনি অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি আমাদের ব্রিফ করতেন। বঙ্গমাতা কীভাবে থাকতেন, কীভাবে আমাদের বঙ্গবন্ধুকে সাপোর্ট করতেন। ওই সময়ের কাহিনিগুলোই এই গল্পে রেখেছেন তিনি।’
‘আমার জন্য কাজটি অনেক কঠিন হয়ে যেত, যদি উনারা আমাকে ভালোভাবে ব্রিফ না করতেন’, যোগ করেন পূর্ণিমা।
সিনেমার কিছু অংশের গল্প নিউজবাংলাকে শুনিয়েছেন পূর্ণিমা।
বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন ছাত্রজীবনে মাত্র পলিটিক্সে জয়েন করলেন, তখন উনার পাশে ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী সাহেবরা কীভাবে থাকতেন- সে ঘটনা আছে সিনেমায়। আছে সেই সময়ে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় নৌপথে আসা-যাওয়ার ব্যাপারগুলো। ওনাকে জেলে আটকানোর সময় বঙ্গমাতার কোলে শেখ কামাল- এ ধরনের অনেক দৃশ্য আছে।’
সিনেমায় বঙ্গমাতার চরিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন পূর্ণিমা।
তিনি বলেন, ‘এগুলো যখন করতে গেছি, তখন মনে হয়েছে ওই সময়গুলো উনাদের কত কষ্টের ছিল। বঙ্গমাতা ইতিহাসের অনবদ্য অংশ।’
বঙ্গমাতা চরিত্র করতে গিয়ে আরও অনেক কিছু জেনেছেন বলে জানান পূর্ণিমা।
‘উনি (বঙ্গমাতা) কীভাবে এক হাতে এতো মানুষের রান্না করতেন! কারণ যখন তখন পলিটিক্যাল লোকজন মিটিং করতে আসতেন। একসঙ্গে ২৫-৩০ জন আসতেন। হুট করে সন্ধ্যায় মিটিং, বঙ্গমাতা আগে থেকেই জানতেন মিটিং মানেই রাতের খাবার না খেয়ে যাবেন না। সবার রান্না করতে হতো।’
অভিনেত্রী পূর্ণিমা। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কিছু কথপোকথনের দৃশ্য বিশেষভাবে দাগ কেটেছে এই অভিনেত্রীর মনে।
পূর্ণিমা বলেন, ‘রাতের বেলা বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতার কথাবার্তা হতো; তুমি ঢাকা যাচ্ছো, আমি জানি, ঢাকা গেলে তোমাকে ধরে ফেলবে বা আটকে ফেলবে, জেলে নিয়ে যাবে।’
রাতের বেলা বঙ্গমাতা পান খেতে খেতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যেভাবে সময় কাটাতেন তাও আছে এই সিনেমায়।
একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলছেন, তুমি আমার জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করছ। বঙ্গমাতা তখন বলছেন, আমি তোমাকে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে এসেছি, দেব। এই রকম আবেগঘন দৃশ্য রয়েছে।’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে সিনেমায় তার অভিনয়ের অংশ শেষ হয় জানিয়ে পূর্ণিমা বলেন, ‘আমার ডাবিংও শেষ হয়ে গেছে। জেনেছি এডিটিংও শেষ হয়েছে, এখন কবে নাগাদ মুক্তি পাবে জুয়েল ভাইয়েরা জানেন। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ধরেই মুক্তি পেতে পারে।’
এই সিনেমায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল। বঙ্গবন্ধুর বাবা ও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন খাইরুল আলম সবুজ ও দিলারা জামান।
অভিনেত্রী পূর্ণিমা। ছবি: সংগৃহীত
কিছু দিন আগেমুন্সিগিরি নামের ওয়েব সিরিজের দৃশ্যধারণ শেষ করেছেন বলেও জানিয়েছেন পূর্ণিমা।
এই সিরিজ পরিচালনা করেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এতে তার বিপরীতে আছেন চঞ্চল চৌধুরী।