পুরো নাম সৈয়দা তিথী অমনি। সিনেমায় নতুন। কিন্তু মডেলিং জগতে অমনির অনেক নামডাক। আলাপের একপর্যায়ে ‘ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন’ কথাটি শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন, ‘তাই তো নতুনই তো।’ কথাটি হাসি মুখে বললেও ভেতরে ভেতরে নিজেকে সামলে নিচ্ছিলেন হয়তো।
দেশের প্রায় সব বড় ফ্যাশন হাউসের মডেল ফটোগ্রাফিতেই দেখা গেছে অমনিকে। ইচ্ছা ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। কিন্তু যেনতেন চরিত্র হলে হবে না। বুদ্ধিদীপ্ত, গ্ল্যামারাস, অ্যাকশনের চরিত্র তার পছন্দ। একপর্যায়ে মিলেও গেল। এমআরনাইন ও মাসুদ রানা সিনেমায় স্পাই চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে অমনি বলেন, ‘স্পাই চরিত্র নিয়ে আমার আলাদা দুর্বলতা আছে। তাই এমআরনাইন সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিই এবং নির্বাচিত হই। এটা তাও এক বছর আগের কথা।
‘মাসখানেক আগে আমাকে জানানো হয় মাসুদ রানা সিনেমাতেও একই চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। আমি রাজি হয়েছি।’
দুটি সিনেমার জন্য আলাদা করে পারিশ্রমিক দেবে তো, এমন প্রশ্নে অমনি শুধু হাসলেন, উত্তর দেননি।
দ্রুতই কথা সরিয়ে জানতে চাওয়া হলো, তাহলে কি রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করবেন না?
‘সেটা দেখা যাক। সিনেমায় আমার এগিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে। কিন্তু আমার মনের মতো কাজ হলেই তাতে যুক্ত হব। তা ছাড়া এখন এমআরনাইন ও মাসুদ রানা সিনেমা নিয়ে বসবাস করছি। এসব নিয়ে তেমন ভাবছি না।’ বললেন অমনি।
অমনি মনে করছেন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে সিনেমার নবনীতা চরিত্রটির জন্য তার লুক, সৌন্দর্য এবং উচ্চতা খুব কাজে দিয়েছে। কিন্তু সিনেমায় তার যে চরিত্র, সেই চরিত্রের জন্য শুধু সৌন্দর্য এবং উচ্চতা দিয়ে হবে না। তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে ক্ষিপ্র স্বভাবের।
এ প্রসঙ্গে অমনি বলেন, ‘আমি ক্ষিপ্র স্বভাবের না। কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে আমি তেমন হতে পারব। সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরপরই আমাকে স্ক্রিপ্ট দেয়া হয়েছে। আমি চরিত্রটা বুঝে নিয়েছি। অভিনয় প্র্যাকটিস করছি। সঙ্গে অ্যাকশন, ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজের টেকনিক রপ্ত করছি।’
এসব প্রশিক্ষণ ও চর্চার জন্য প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ব্যয় করতে হয় অমনিকে। তবে কিছু চর্চা তার আগে থেকেই ছিল।
সে কারণেই হয়তো ক্যামেরার সমানে দাঁড়াতে তেমন কোনো চাপ অনুভব করছেন না। বরং অপেক্ষা করছেন কখন শুটিং শুরু হবে আর কখন তিনি অভিনয় শুরু করবেন। ‘কাজটা সহজ না, কিন্তু আমার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে না। অপেক্ষা করছি কখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব।’ বলেন অমনি।
২০১৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন অমনি। পাঁচ বছরেই মডেলিংয়ে ভালো জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এর পেছনে আছে পরিশ্রম এবং একাগ্রতা।
অমনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন মডেলিংয়ে কোনো পরিশ্রমই নেই। শুধু মেকআপ করে ছবি তোলা বা, র্যাম্পে হাঁটা। কিন্তু আমাদের সবাইকে যে কত পরিশ্রম করতে হয়, তা কেউই জানে না। আমরা অনেক আনন্দ নিয়ে কাজটি করি। তাই সবাই মনে করে যে, আমরা শুধু আনন্দই করি।’
অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স করা অমনি পাঁচ বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন আরও কিছু লেখাপড়া করার জন্য। চট্টগ্রামেই তিনি কিছু মডেলিংয়ের কাজ করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ঢাকাতেও কাজ শুরু করেন।
‘এখন মডেলিংই আমার পেশা ও নেশা। এর পাশাপাশি আমার আরেকটি ব্যবসা রয়েছে। সেটাও ভালোই চলছে।’ বলেন অমনি।
অমনি ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলা থেকে শাসনের মধ্যেই বড় হয়েছেন। তাই খুব বেশি একটা দুষ্টুমি বা অবাধ্য হওয়ার সুযোগ ছিল না।
আর বন্ধুরা কেমন ছিল? অমনি বললেন, ‘আমার বরাবরই বন্ধু কম। চট্টগ্রাম ও ঢাকা মিলে কিছু বন্ধু আছে আমার। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়। কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। আর কিছু বন্ধু দেশের বাইরে চলে গেছে।’
সিনেমায় অভিনয় করা নিয়ে বন্ধুরা কী বলছে অমনিকে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্ধু ও সহকর্মীরা আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তারা সবাই অনেক খুশি যে, আমি সিনেমায় অভিনয় করছি।’
অমনি এর আগে অভিনয় করেছেন ব্যাড বয়েজ নামের ওয়েব সিরিজে। যেটি পরিচালনা করেছিলেন সৈকত নাসির।
১২ মার্চ পর্যন্ত মাসুদ রানা সিনেমার দৃশ্যধারণ চলবে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে অমনি ফিরবেন আরও কিছু নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে। যা তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে বলে মনে করেন অমনি।