‘সুন্দরবন, যার নিজের একটি ভাষা আছে। সেখানে অন্যের আইন চলে না। সেখানে সুন্দরবনই রাজা।’ পরিচালক দিপংকর দীপন অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার শুটিং করার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শুরু করলেন এভাবে।
তিনি আরও বললেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে আমাদের। সেসব কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। র্যাবসহ সবার সহযোগিতায় কাজটি ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
মঙ্গলবার আর্মি গলফ ক্লাবে প্রকাশ পেয়েছে অপারেশন সুন্দরবন সিনেমার টিজার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ারসহ পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছিলেন সিনেমার সব কলাকুশলী।
টিজারে এমন কিছু দৃশ্য দেখা গেল, যা বাংলাদেশের সিনেমায় একদমই নতুন। কারণ র্যাবের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনের এমন কিছু জায়গায় শুটিং হয়েছে, যেখানে সাধারণত মানুষ যায় না বা যেতে পারে না।
সিনেমাটির কাহিনি গড়ে উঠেছে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত করার অভিযান নিয়ে। অভিযানে র্যাবের অপারেশনের ভাষা এবং জলদস্যুদের কর্মকাণ্ড একেবারেই নতুন করে ধরা দেবে দর্শকদের কাছে।
টিজার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিনেমার কলাকুশলীর সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: নিউজবাংলাসিনেমায় কমান্ডার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। টিজারে তাকে দেখা গেছে জলে, স্থলে এবং আকাশপথে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিতে।
পরিচালক দীপংকর দীপনের সঙ্গে (বাঁয়ে) অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: নিউজবাংলাতিনি জানালেন, সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন কমান্ডো সদস্যের চরিত্রে। এই ধরনের কাজে যারা থাকেন তাদের সব কাজ করতে হয়। সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হয় অপারেশনের জন্য।
বাঘ গবেষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া। তিনি জানালেন, এমন সিনেমা দেশের দর্শক আগে দেখেনি।
দেশের বাইরের সিনেমার সঙ্গে তুলনা করে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘পুলিশ, আর্মিদের নিয়ে দেশের বাইরের অনেক সিনেমা দেখি আমরা। সেখানে বিনোদনের সঙ্গে সেই বাহিনীর কিছু তথ্য দেয়া হয়, যা সাধারণ মানুষদের জানা সম্ভব না।
সিনেমার দৃশ্যে নুসরাত ফারিয়া। ছবি: সংগৃহীত‘অপারেশন সুন্দরবন সিনেমাতেও আমরা তেমন কিছু করার চেষ্টা করেছি। সাধারণ মানুষ যেন জানতে ও বুঝতে পারে যে, অভিযান কেমন হয়। কিন্তু বলে রাখা জরুরি যে, ফিকশনের চেয়ে বাস্তবতা আরও অনেক কঠিন।’
২০১৮ সালে সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অভিযানে র্যাব সদস্যদের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদ।
সিনেমার দৃশ্যে অভিনেতা রোশান। ছবি: সংগৃহীততিনি বলেন, ‘আগামী প্রজন্ম মনে করতে পারে যে, সুন্দরবনের পরিবেশটা এমনই ছিল। কিন্তু এই পরিবেশটা তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাবের ত্যাগের কথা হয়তো কেউ মনেই করবে না। তাই এই সিনেমাটি করার পরিকল্পনা করি আমি।’
সিনেমাটি শুরুর গল্প বলতে গিয়ে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা অ্যাটাক সিনেমাটি করার সময় থেকে দীপনের সঙ্গে আমার পরিচয়। পরে যখন অপারেশন সুন্দরবন করার পরিকল্পনা করি, তখন দীপনকেই ফোন করি।
‘পরিকল্পনা বলার সঙ্গে সঙ্গে দীপন রাজি হয়ে যায়। কিন্তু আমি বলেছিলাম, সুন্দরবনে গিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ধারণা নিয়ে কাজটি শুরু করতে।
সিনেমার দৃশ্যে অভিনেতা রিয়াজ আহমেদ ও সহশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত‘দীপন রাজি হলো এবং দেড় মাস পরে যখন ফিরে এলো, তখন তাদের আর চেনা যাচ্ছিল না। আমি বুঝলাম ওরা ঠিক পথে আছে। তার ছয় থেকে আট মাস পর ৮০০ পৃষ্ঠার একটি পাণ্ডুলিপি তিনি আমাকে দেন। তখন আমি কনভিন্সড হই যে, হ্যাঁ কাজটি তারা করতে পারবে।’
জলদস্যু নির্মূল অভিযান নিয়ে সিনেমা নির্মাণে পরিচালকের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল সিনেমাটি যেন তথ্যচিত্র না হয়ে যায়। তার জন্য ফিকশনের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাই বলে সিনেমাটি তার নতুনত্ব হারায়নি কোনোভাবে।
পরিচালক আরও জানিয়েছেন, সিনেমায় তারা সেটাই করতে চেয়েছেন, যা একটি নতুন উদাহরণ হয়ে থাকবে দেশীয় সিনেমার ভাষায়।