বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রসবোধপূর্ণ অসাধারণ মানুষ, শিক্ষক

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৫:১৯

নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজা জানান, পর্দায় খল চরিত্রে অভিনয় করলেও এটিএম শামসুজ্জামান খুবই সাধারণ এবং সরল মানুষ ছিলেন ছিলেন। পর্দায় যেমন অভিনয় করতেন, তেমনি রসবোধের অভাব ছিল না বাস্তব জীবনেও।

বরেণ্য অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গনে। কিংবদন্তি এই অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকারকে নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে স্মৃতিচারণা করেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজা।

এটিএম শামসুজ্জামানের বিষয়ে মাসুম রেজা বলেন, ‘এক অসাধারণ মানুষ এবং শিক্ষক। সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার কৌশল আমি এটিএম ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি। মোল্লাবাড়ির বৌ লেখার সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘‘সিনেমার স্ক্রিপ্ট তুমি লিখবা, স্ক্রিপ্ট তোমার হাতে কিন্তু সিনেমার সাফল্য দর্শকের হাতে। দর্শককে নতুন কোনো কিছু দিতে না পারলে সে স্ক্রিপ্ট লিখবা না।’' এটা আমার জীবনে একটা বিরাট শিক্ষা।'

মাসুম রেজা জানান, পর্দায় খল চরিত্রে অভিনয় করলেও এটিএম শামসুজ্জামান খুবই সাধারণ এবং সরল মানুষ ছিলেন। পর্দায় যেমন অভিনয় করতেন, তেমনি রসবোধের অভাব ছিল না বাস্তব জীবনেও।

‘তিনি সিগারেট খেতেন, ধূমপান করতেন। কিন্তু তিনি সিগারেটটা প্যাকেট থেকে বের করে টিপে টিপে সেটাকে নরম করতেন এবং দুই-তিন বার দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে তারপর সিগারেটটা ধরাতেন।

‘ঢাকার একজন পীরের ভক্ত ছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন সকালে আমার বাসায় এসে বললেন, ‘‘মাসুম চলো, অফিসে যেয়ে তোমাকে একটা গান লিখতে হবে। আমি বললাম কীসের গান। উনি বললেন, আমার পীরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা গান লিখতে হবে।’' আমি সে গানও লিখে দিলাম।।'

পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। এ ছাড়া একুশে পদকসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি।

এ ছাড়া অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক হিসেবেও এটিএম শামসুজ্জামান দুর্দান্ত ছিলেন জানিয়ে মাসুম বলেন, ‘উনি কিন্তু শুধু অভিনেতা না, উনি প্রায় ১০০-এর ওপরে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন। ডাক্তার বাড়ি সিনেমা পরিচালনা করেছেন।’

গুণী এ অভিনেতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন মাসুম। বলেন, ‘আমার সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখা শেখাটা একদম এটিএম ভাইয়ের কাছ থেকে। উনি আমাকে আর সালাহউদ্দিন লাভলুকে টেলিভিশন থেকে সিনেমায় টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন।’

অভিনয়জীবনের শেষ দিকটায় চলচ্চিত্রের চেয়ে টেলিভিশনেই বেশি সময় দিয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান। এ বিষয়ে মাসুম রেজা বলেন, ‘টেলিভিশনে যখন তিনি আসেন তখন সিনেমার খরা চলছিল। অনেক পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী সিনেমা ছেড়ে দিচ্ছিলেন। সেই সময় উনি টেলিভিশনে আসলেন। আমারই একটা নাটক ছিল। সাদা মেঘের বৃষ্টি বলে সাত পর্বের একটা নাটকে উনি অভিনয় করলেন।

‘এরপর রঙের মানুষ। রঙের মানুষ করতে গিয়ে তিনি আমাকে বললেন, দেখ আমার একটা মন্দ মানুষের ইমেজ আছে কিন্তু তোমার এই ‘বস্তানি শা’ চরিত্র আমাকে একটা আলাদা পরিচিতি দিচ্ছে, ভালো লাগছে।’

এটিএম শামসুজ্জামানের আলোতে নিজেও আলোকিত হয়েছেন জানালেন মাসুম রেজা। বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার যখন শুরু, এটিএম ভাই তখন তার ক্যারিয়ারের চূড়ান্তে, ওপরে, উজ্জ্বলতায়। তার আলোতেই আমি অনেক অনেক পথ হেঁটেছি। আমার ভবের হাট নাটকে উনি হুমায়ুন ফরিদীর অভিনয় অত্যন্ত পছন্দ করতেন। দুই জন একই ধারার চরিত্রে অভিনয় করতেন, তবুও কখনও ঈর্ষা করেননি।

‘আজকের জন্য আমার প্রার্থনা, জাগতিক জীবনে উনি যেভাবে বেঁচে ছিলেন, আমাদের অন্তরেও যেন তিনি সেভাবেই বেঁচে থাকেন এবং থাকবেন।’

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে গত বুধবার তিনি হাসপাতালে যান। শুক্রবার বিকেলে সেখান থেকে সূত্রাপুরের বাসায় ফেরেন তিনি। শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান। ২০১৫ সালে ভূষিত হন একুশে পদকসহ নানা সম্মাননায়।

১৯৪১ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম নেয়া এই অভিনেতা চলচ্চিত্রে পা রাখেন ১৯৬৮ সালে, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। নিজ অভিনয়গুণে বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক খল ও কমেডি চরিত্রকে অমর করে গেছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর