আশির দশক। তখন ঢাকা কলেজের অনার্সের ছাত্র এস এম আসলাম তালুকদার। পরে যাকে সবাই মান্না নামে চিনেছে। কলেজের কাছেই ছিল বলাকা সিনেমা হল। সেখানে প্রচুর সিনেমা দেখতেন তিনি। মান্নার দেখা প্রথম দিকের সিনেমাগুলোর মধ্যে ছিল আগন্তুক, অবুঝ মন।
সিনেমা দেখতে গিয়ে জানলেন এফডিসি নতুন মুখের সন্ধান করছে। সাল ১৯৮৪। গেলেন সাক্ষাৎকার দিতে।
মান্নার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সুভাষ দত্ত, দিলীপ বিশ্বাস, কাজী জহির, রাজ্জাক ও ববিতা। মান্নাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘তুমি কী করতে পার?’
মান্না বলেছিলেন, ‘আমি নাচতে পারি।’ অভিনয় করতে পার কি না জানতে চাইলে মান্না নায়করাজ রাজ্জাকের সামনে তারই অভিনীত অবুঝ মন সিনেমার একটি দৃশ্য অভিনয় করে দেখান।
২৯ জনের ভিতরে ১৯ কিংবা ২০ নম্বরে স্থান করতে পেরেছিলেন। এরপর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘুরতেন অভিনয়ে সুযোগ পাবার আশায়।
মান্নাকে প্রথম সুযোগ দেন নায়করাজ রাজ্জাক। সিনেমার নাম তওবা। সাইনিং মানি ছিল ২০০১ টাকা। আর সংলাপ ছিল ‘মা, মা’।
চিত্রনায়ক মান্না। ছবি: সংগৃহীত
টাঙ্গাইলের সেই মান্না পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন দেশের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে যান সিনেমার মান্না ভাই।
সিনেমার প্রচণ্ড ব্যস্ত এই নায়ক সিনেমা জগৎ নিয়ে বলেছিলেন, ‘সিনেমায় সব কিছু কমার্শিয়াল। এখানে কেউ কারো বন্ধু নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে স্বার্থপর কোনো জগৎ থাকলে সেটা হলো সিনেমা জগৎ। এখানে হৃদয়, প্রেম, ভালোবাসা, চাওয়া-পাওয়া সবই মেকি।
‘সিনেমার মানুষরা যদি কখনও বলে যে, তারা সবাই একটি পরিবার, এটা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’
ছোটবেলা থেকেই বন্ধুবৎসল ছিলেন মান্না, ছিলেন দুষ্টু আবার প্রেমিক। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন স্ত্রী হবার আগে শেলীর মান্নাকে প্রেম নিবেদনের গল্প।
‘তখনও আমি মান্না হয়ে উঠিনি। সিনেমায় কিছু কাজ করি। শেলীও সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছিল। তখন তাকে দেখি। আমি যখন তাকে প্রেম নিবেদন করি, তখন তিনি বিমানবালা হিসেবে কাজ করেন।
‘তাকে আমি গিয়ে বললাম, তোমাকে আমার ভালো লাগে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। শেলী এমন করে তাকাল; পরে বলেছে আমাকে নাকি থার্ড ক্লাস ছেলে ভেবেছিল শেলী।
আম্মাজান সিনেমায় সহশিল্পীদের সঙ্গে মান্না। ছবি: সংগৃহীত
‘কথা বলার একপর্যায়ে যখন জানতে পারলাম সে বিমানবালা, তখন তাকে বলেছিলাম, আপনি তো বিদেশে যান, আমার জন্য এক জোড়া কেডস নিয়ে আসবেন।’
মান্না কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেছিলেন সংসারজীবনের শুরুতে শেলী মান্নার ভূমিকার কথা। মান্না বলেছিলেন, ‘সংসার যখন শুরু করি তখন আমার পারিশ্রমিক ৭৫০০-৮০০০ টাকা। ঐ টাকায় সংসার চলত না। তখন আমার স্ত্রী সংসারের জন্য তার সাধ্যমতো করেছে।’
অনেক কষ্ট করেই দেশের এক নম্বর নায়ক হয়েছিলেন মান্না। তাই সিনেমার জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। সিনেমার মানুষরাই মান্নাকে নিয়ে গল্প করতে গিয়ে বলেন, ‘সিনেমার যেকোনো সমস্যায় মান্না থাকতেন সবার আগে।’
আরও অনেক কিছুই দেয়ার ছিল মান্নার। কিন্তু ২০০৮ সালের আজকের দিনে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। টাঙ্গাইলে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
মান্নার সঙ্গে শাকিব খান। ছবি: সংগৃহীত
মান্নার প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, ‘আপনি ছিলেন আনপ্যারালাল। আপনার কাজগুলোতে আলাদা স্বকীয়তা ছিল। ভীষণ মিস করি আপনাকে। ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। প্রিয় মান্না ভাই, যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন.. ’