সাত বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করছেন সাত জন পরিচালক। কীভাবে এগোচ্ছে এত বড় সিনেমার কাজ? বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে সিনেমার ৬ পরিচালক বসেছিলেন নিউজবাংলার ক্যামেরার সমনে।
সিনেমার নাম রণযোদ্ধা। সিনেমার সহপ্রযোজক পূণ্য ফিল্মসের কর্ণধার ও পরিচালক রাশিদ পলাশ শুরু করেন আলোচনা। সিনেমাটি আইডিয়া তৈরি হওয়ার গল্প বলেন তিনি।
রাশিদ পলাশ বলেন, ‘দেশ আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে, কিন্তু আমরা দেশকে কিছুই দিতে পারিনি। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে এই সিনেমার মাধ্যমে দেশকে আমি ও আমরা কিছু দিতে চাই।
‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে রণযোদ্ধা সিনেমাটি আমাদের পক্ষ থেকে একটা উপহার। আমরা বিষয়টি আরও সুন্দর করে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমার সাংবাদিক বন্ধুরা এটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে ফেলেছে।
‘বীরশ্রেষ্ঠদের বয়সসীমা অনুযায়ী আমরা কিছু তারকা অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছি, এটা ঠিক। এমন একটি সিনেমায় অনেকেই অভিনয় করতে আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু আগ্রহী হলেই কিংবা আমরা নিতে চাইলেই হবে না; অনেক কিছুর সঙ্গে মিলে যাবার ব্যাপার আছে। অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করতে আরও কিছু সময় লাগবে।’
তিনি আরও জানান, দেড় বছর আগে সিনেমাটি নিয়ে পরিকল্পনা করেন তারা। এর পর সমমনা সাতজন পরিচালক চূড়ান্ত হন। যার মধ্যে সাকিব সনেট ও রাশিদ পলাস সিনেমাটি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করবেন।
রণযোদ্ধা সিনেমার ওয়ার্কিং পোস্টার। ছবি: সংগৃহীতসিনেমাটি এখন কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে উত্তর দেন সিনেমার অন্যতম পরিচালক রাইসুল ইসলাম অনিক।
তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি অবশ্যই এখন প্রি-প্রোডাকশনে আছে। তবে সেই কথায় যাবার আগে আমি বলে নিতে চাই যে, সিনেমায় কারা অভিনয় করবেন, তা নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো কিছুই চূড়ান্ত না। আর এখানে অভিনয়শিল্পীর চেয়ে গল্পটাই প্রধান।’
রণযোদ্ধা সিনেমার ছয় জন পরিচালক। ছবি: সংগৃহীতঅনিক আরও বলেন, ‘রণযোদ্ধা সিনেমায় বীরশ্রেষ্ঠ চরিত্র ছাড়াও আমাদের প্রচুর অভিনয়শিল্পী প্রয়োজন হবে। তাদের চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। মেকআপ ও জিএফএক্স নিয়ে দেশের বাইরে কথা হচ্ছে আমাদের। শিগগিরই শুটিং শুরু হচ্ছে না।’
রণযোদ্ধা সিনেমার চিত্রনাট্য করছেন নির্মাতা গৌতম কৈরী। গল্পটি নিয়ে ধারণা দিলেন তিনি।
গৌতম বলেন, ‘সিনেমাটি কিন্তু বায়োপিক নয়। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্বের গল্পটিই আমরা দেখাতে চাই। এর মধ্যে খুব অল্প পরিবারের গল্প থাকবে। আর এসব তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি সামরিক বাহিনী ও পরিবারর সদস্যদের কাছ থেকে। বই থেকেও নিচ্ছি অনেক কিছু।’
সাত বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করবেন সাত পরিচালক। ছবি: সংগৃহীতসাতজন বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়েই গল্পটি করা যেত। কিন্তু সিনেমায় একজন বীরাঙ্গনার গল্প কেন থাকবে জানতে চাইলে গৌতম বলেন, ‘সাতটি গল্প দিয়ে আমরা একটি সিনেমা বানাতে চেয়েছি। বীরাঙ্গনার চরিত্রটি সিনেমায় এই গল্পগুলোকে লিংক করবে। বীরশ্রেষ্ঠদের শহীদ হওয়ার তারিখ অনুযায়ী সাজানো হচ্ছে চিত্রনাট্য।’
রণযোদ্ধা হবে একটি যুদ্ধ সিনেমা। এই ধরণের সিনেমা করতে প্রয়োজন ১৯৭১ সালের আবহ। সেই কাজও এগোচ্ছে বলে জানালেন কাওসার মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। আমার মনে হয় জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে কাজ করার জন্য তারা আমাদের সাহায্য করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুটিং করার জন্য তো আর এখন রিয়েল লোকেশন পাব না। তবে সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
সিনেমার অন্যতম প্রযোজক ও পরিচালক সাকিব সনেট। তিনি জানান সিনেমাটি হতে যাচ্ছে দেশীয় প্রোডাকশন প্রযোজিত সবচেয়ে বেশি বাজেটের কাজগুলোর একটি।
সাকিব সনেট বলেন, ‘আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। তাই মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ নিয়ে আমার অনুভূতি ও আবেগ অন্যরকম। আমরা নবীনরা যে কিছু করতে পারি, সেটাই এই সিনেমার মাধ্যমে দেখাতে চাই।’
সাতটি গল্পের জন্য কে কতটুকু সময় পাবেন তা আগে থেকেই নির্ধারিত থাকবে বলে জানান পরিচালক কামরুল রিফাত।
তিনি বলেন, ‘গল্প অনুযায়ী সময়ের এদকি সেদিক হতে পারে। কিন্তু সাত পরিচালকের মধ্যে কেউ বেশি পাবে কেউ কম বা বেশি পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
জাদুঘরে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন রেফারেন্স। ছবি: সংগৃহীতকাজের চাপের কারণে এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারেননি মিশন এক্সট্রিম সিনেমার পরিচালক সানি সানোয়ার।
কোন পরিচালক কোন বীরশ্রেষ্ঠের গল্পটি করছেন তা বলতে চাননি সংশ্লিষ্টরা। কারণ বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি বলে জানান সাকিব সনেট।
আয়োজনের একদম শেষে এসে যুক্ত হন সিনেমার একমাত্র অভিনেত্রী ববি। তিনি অভিনয় করবেন বীরাঙ্গনার চরিত্রে।
ববি বলেন, ‘এমন চরিত্রে আগে অভিনয় করিনি। মুক্তিযুদ্ধের গল্পেও কাজ করা হয়নি আগে। এমন সিনেমায় যুক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে। আমার চরিত্রটির নাম শারমিন। সিনেমাটির জন্য ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’