গত ১৯ জানুয়ারি নবাব এলএলবি সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে প্রদর্শনের পর বোর্ড সদস্যরা দিয়েছেন ১১টি সংশোধনী।
বোর্ড থেকে চিঠির মাধ্যমে সংশোধনীগুলো জানানো হয়েছে সিনেমার পরিচালক-প্রযোজককে।
সেন্সর বোর্ডের চিঠি বেশ গোপনীয়। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে সংশোধনীগুলোর বিষয় জানা গেছে এবং সেগুলো ঠিক আছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের একাধিক সদস্য ও বোর্ড সচিব।
জানতে পারা সংশোধনীগুলো হলো-
সিনেমার গানের লাইন, ‘নারী ধর্ষণ মানে স্বাধীনতা হত্যা’।
শাকিব খানের বলা সংলাপ, ‘যে নারী রাতে বাইরে গিয়ে কাজ করে তার পরিবারের জন্য, তাদের চরিত্র নিয়ে কেন কথা বলা হয়।’
গানের লাইন ‘শিটি হলে জমে যাবে খুব।’
দৃশ্য ‘যেখানে শাকিব খান বই পড়ছিলেন, তখন মাহিয়া মাহি তার গালে চুমু দিয়ে বসেন।’
শাকিব খানের সংলাপ, ‘যে দেশে মেয়েদের পিরিয়ড হলে পরিবারকে বলতে ভয় পায়…।’
নবাব এলএলবি সিনেমার দৃশ্যে শাকিব খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, মাহিয়া মাহি। ছবি: সংগৃহীত
নিউজবাংলাকে সিনেমার পরিচালক অনন্য মামুন বলেন, ‘যে দৃশ্যটি ভাইরাল হয়েছে, সেই দৃশ্যের সংলাপের জন্য আমি বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছি যে, আমার আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো। কিন্তু নারী ধর্ষণ মানে স্বাধীনতা হত্যা, এই লাইনে কী সমস্যা, এটা একেবারেই আমার বোধগম্য নয়।’
সেন্সর বোর্ডের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, বোর্ড সচিব মো. মোমিনুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে বোর্ডে এসে কথা বলুন।’
সেন্সর বোর্ডের সদস্য মুশফিক রহমান গুলজার সিনেমাটির সংশোধনী নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে মুখ খুলেছেন প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ড সদস্য খোরশেদ আলম খসরু।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যেসব সংশোধনী তারা দিয়েছেন, তা বোর্ডের সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। কেটে ফেলতে বলা দৃশ্য বা সংলাপগুলো সিনেমায় থাকা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নবাব এলএলবি সিনেমায় আইনজীবী চরিত্রে অভিনয় করা শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে আরেকজন অভিনেতার আদালতে যে সংলাপ আছে, সেগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।’
সংলাপগুলো অযোগ্য মনে হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খসরু বলেন, ‘সংলাপে সেক্স ভায়োলেন্স ও নারীর পিরিওড নিয়ে অনেক সংলাপ আছে। এগুলো আমাদের মনে হয়েছে প্রকাশ্যে যাওয়া উচিত না।’
নবাব এলএলবি সিনেমার রোমান্টিক গানের দৃশ্যে শাকিব খান ও মাহিয়া মাহি। ছবি: সংগৃহীত
সেন্সর বোর্ডের অন্যতম সদস্য অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। তিনিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সমাজের অনেক জটিলতা-কুটিলতা সিনেমায় তুলে ধরা হবে এটাই স্বাভাবিক, না হলে আমরা ছবি কেন বানাচ্ছি? কিন্তু এ সিনেমায় আমার কাছে মনে হয়েছে কোথায় যেন একটা পারভারশন কাজ করেছে।
‘সিনেমায় এমন সংলাপ শোনা যায় যে, নায়িকা হতে হলে শরীর বিক্রি করতে হয়। এখন আপনি বলতে পারেন, এই কথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এমন কথা তো সরাসরি বলতে নেই।
‘পৃথিবীতে কি শুধু মেয়েরা শরীরের বিনিময়ে নায়িকা হয়? এমন অনেক উদাহরণ আছে যে, ছেলেরা নায়ক হওয়ার জন্য প্রযোজকদের ঘরে বাজার করে দিয়ে আসে। এগুলো তো কখনো সিনেমায় আসে না।’
সেন্সর বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী নবাব এলএলবি আবার জমা দিলে সেন্সর পাবে সিনেমাটি। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির জন্য নয় বরং পরবর্তী সময়ে সিনেমাটি কোনো মাধ্যমে মুক্তি বা প্রদর্শনে যেন সমস্যা না হয়, সেজন্যই সেন্সর বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছিল সিনেমাটি। ওটিটি ফিল্ম হিসেবে সেন্সরে জমা পড়া এটিই প্রথম সিনেমা।
নবাব এলএলবি মূলত ওটিটি ফিল্ম। সিনেমাটি আই থিয়েটারে মুক্তি পায় ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু সিনেমার একটি সংলাপের কারণে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয় পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে। ২৫ ডিসেম্বর তাদের কারাগারে পাঠানো হয় এবং তারা মুক্ত হন ১১ জানুয়ারি।