ভালোলাগার অন্যরকম আবেদন আর সৌন্দর্য নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন মুসকান জুবেরি। সেখানে উপস্থিত সবার নজর তখন তার দিকেই; যেন মুসকানের ইশারার অপেক্ষায় সবাই।
এ শুধু কল্পনার বর্ণনা। কারণ, মুসকান জুবেরিকে উপন্যাসে পড়ে পাঠকের মনে এর চেয়েও বেশি সৌন্দর্য জমে আছে।
চরিত্রটি পর্দায় দেখতে দর্শকরা যে উদগ্রীব হয়ে আছেন, তা বলাই বাহুল্য। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।
পাঠকের মনে আঁকা মুসকানকে বাঁধন পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারবে কি না সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
পাঠক-দর্শকদের আকাঙ্ক্ষা কিছুটা পূরণ করতে নিউজবাংলা মুখোমুখি হয়েছিল বাঁধনের। তিনি কথা বলেছেন ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ওয়েব সিরিজে তার চরিত্র নিয়ে। সিরিজটি পরিচালনা করেছেন কলকাতার সৃজিত মুখার্জি।
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিরিজটি নিয়ে তো অনেক কথাই বলা যায়। কিন্তু সব কথাই যেন ঘুরে ফিরে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে মুসকান জুবেরিকে নিয়ে। এই চরিত্রটিকে বাঁধন কীভাবে দেখেছেন? তার কাছে চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য কী?
মুসকান জুবেরিকে নিয়ে বাঁধনের প্রথম পর্যালোচনা হচ্ছে, ‘তিনি এমন একজন মানুষ, যে কেউ তার প্রেমে পড়বে।’
আর বাঁধন? তিনি কেমন? নিজেকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঁধন বলেন, ‘মুসকানের প্রেমে পড়া যেমন কঠিন, বাঁধনের প্রেমে পড়াও তেমন কঠিন।’
সাক্ষাৎকারে আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসচরিত্রটিকে এত দুর্দান্ত করে গড়ে তোলার জন্য ঔপন্যাসিক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাঁধন। একই সঙ্গে সবাইকে উপন্যাসটি পড়ার অনুরোধও করেছেন।
ওয়েব সিরিজটি শুরুর আগে মুসকান চরিত্রে অন্য অভিনেত্রীর নাম শোনা গেছে। আরও অনেক পরীক্ষিত ও প্রমাণিত শিল্পীকে এই চরিত্রে নিতে পারত প্রযোজক সংস্থা হইচই। শেষ পর্যন্ত বাঁধনকেই কেন কাস্ট করা হলো সেটাই এখনও বড় প্রশ্ন হয়ে আছে?
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসবাঁধন বললেন, ‘এই উত্তরটা সৃজিত মুখার্জিই ভালো দিতে পারবেন।’
মুসকান জুবেরি চরিত্রের জন্য বাঁধনের সঙ্গে সৃজিতের কথা হয় গত বছর করোনা মহামারি শুরুর প্রথম দিকে। উপন্যাসটি তিনি পড়েন এবং খুব বিস্মিত হন। চরিত্রটি নিয়ে নিজে আত্মবিশ্বাসী হতে পারছিলেন না বাঁধন।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসতিনি বলেন, ‘কনফিডেন্ট হব কীভাবে? আমি কখনও এত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ চরিত্রে কাজই করিনি। আর অভিনয়কে আমি কখনই সিরিয়াস কাজ হিসেবে দেখিনি।’
তাহলে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ সিরিজে কেন অভিনয় করেছেন?
বাঁধন বলেন, ‘আমি যে কাজটি করতে পারব, এটা সৃজিত বিশ্বাস করেছেন। ইউনিটের অনেকেই মনে করত যে আমি হয়তো কাজটা ঠিকঠাক করতে পারব না। আমি সেই কথায় সায় দিয়েছি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চ্যালেঞ্জটা নিতে পেরেছি।’
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসসহশিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয়ের জন্য অনেকবার বাহবা পেয়েছেন বাঁধন। সেসব কথা আগ বাড়িয়ে বলতে চান না তিনি। তবুও অনেকবার জানতে চাওয়ার পর বললেন, ‘রাহুল বোস আমার কাজের অনেক প্রসংশা করেছেন।’
মুসকান জুবেরি হওয়ার জন্য বা, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বাঁধনের চেষ্টা ছিল রাতদিন।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসবাঁধন বলেন, ‘আমাকে একটি ছবির রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছিল যে, এমন একটি ছবি তুলে তাদের পাঠাতে। আমি সেটা করলাম। তারা আমাকে সংলাপ বলে বলে পাঠাতেন। আমি তার কাউন্টার সংলাপ রেকর্ড করে পাঠাতাম। সংলাপের সঙ্গে এক্সপ্রেশন ভিডিও করে সৃজিতকে পাঠিয়েছি। এভাবে আমি ধারণ করেছি মুসকান জুবেরিকে।’
বাঁধনের এত পরিশ্রমের ফল কেমন হবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। নিজের ক্যারিয়ার ও জীবন নিয়েও আলাদা করে ভাবছেন আলোচিত এই অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাসবাঁধন বলেন, ‘আমি কিন্তু এমন করে ভাবছি না যে, সব ভালো কাজ আমার একাই করতে হবে। হ্যাঁ, আমি ভালো কাজই করতে চাই। কিন্তু নিজেকে প্রেসার দিয়ে নয়। তবে এটা ঠিক যে, পরবর্তী কাজ আমি কোনটা করব সেটা নিয়ে আমার সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
‘এখন এসে আমার মনে হয়, জীবনের ৩৪ বছর মনে হয় শুধু ভুলই করেছি। সবার মনের মতো হতে চেয়েছি। সবার ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে দেখেছি, কিছুই পূরণ করতে পারিনি। তাই এখন আর অন্যের মনের মতো নয়, নিজের মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করছি।’
সব মিল বাঁধন এখন এমন জীবন চান, যা তিনি নিজের মতো করে যাপন করতে পারবেন।