অভিনেতাদের নেতা হওয়ার প্রবণতা ভারতীয় রাজনীতিতে বহুদিনের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বহু অভিনেতা এখন রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ। রুপালি পর্দার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এখন তারা জননেতা।
অমিতাভ বচ্চন নিজে এক সময় কংগ্রেসের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী জনপ্রিয় অভিনেতা। হেমা মালিনী এখন জাতীয় সংসদের সদস্য।
রুপালি পর্দার নায়ক-নায়িকাদের রাজনীতিতে নামার তালিকা বেশ দীর্ঘ। দক্ষিণ ভারতে অনেক জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর আগমনই হয়েছে পর্দার জগত থেকে। পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যাচ্ছে রুপালি পর্দার মানুষদেরই রমরমা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত ভারতের জাতীয় সংসদে লোকসভার ৪২ সদস্যের পাঁচ জনই রুপালি পর্দার। এদের মধ্যে চার জন নারী।
রুপালি পর্দার মানুষজনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সব দলই কম-বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য থেকে তার দলেরই চার অভিনেতা জিতেছেন। আগে জিতলেও গতবার হেরে গিয়েছেন বাংলা সিনেমার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন সেন।
বিজেপিও অবশ্য পিছিয়ে নেই। আগেই ভারতের জাতীয় সংসদে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন অভিনেতা রূপা গাঙ্গুলি। রূপা রাজ্যসভার সদস্য হলেও লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটেই জেতেন লকেট চ্যাটার্জি।
তৃণমূলের হয়ে দীপক অধিকারি (দেব) ছাড়াও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন অভিনেতা শতাব্দী রায়, মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহান রুহি। রাজ্য বিধানসভাতেও দীপক চক্রবর্তী ওরফে চিরঞ্জিত, দেবশ্রী রায় প্রমুখ রয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে এখন দল বদলের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। অভিনেতারাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অভিনেতাদের ক্ষোভ এখন পর্যন্ত ভালোই সামলাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
দেবশ্রী রায়ের ক্ষোভ আগেই সামলানো গিয়েছে। শতাব্দীও এখন তৃণমূলের প্রচারে ব্যস্ত। দেবও জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির দিকে মোটেই ঝুঁকে নেই তিনি। মিমি ও নু্সরাত প্রচারে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের হয়ে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি সফরে দেব আমন্ত্রিত। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি আমন্ত্রণ পেতেই পারেন। কিন্তু সেই আমন্ত্রণকে নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে রহস্যজনক ইঙ্গিত দেন বিজেপির যুব সভাপতি সৌমিত্র খান।
জলঘোলা শুরু হয়। অনেকেই ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখতে শুরু করেন তৃণমূল শিবিরে। জল্পনায় জল ঢেলে দেব নিজেই বিনয়ের সঙ্গে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূল এখন ভারতে বাংলা সিনেমার মক্কা বলে পরিচিত টলিউডের অভিনেতাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভোট প্রচারে কোমর বেঁধে নামছে। অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীকে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি দলছুট রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জিকে ‘বড় অভিনেতা’ বলে কটাক্ষ করে খবরের কাগজের শিরোনাম আদায় করে নেন তৃণমূলের সহ-সভাপতি সোহম।
সাবেক বনমন্ত্রী সম্পর্কে সোহম বলেন, ‘চোখের জল মুছতে মুছতে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আর তার পরদিনই বিজেপিতে গিয়ে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নামেই কুৎসা করছেন। এর চেয়ে বড় অভিনেতা আর হয় নাকি।’
তবে বিজেপিও বসে নেই। পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছে সোহমের বিরুদ্ধে।