বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘হলের আয়ে বাড়ি ফেরার রিকশা ভাড়া জোটেনা’

  •    
  • ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:৫০

১৯৫৪ সালে শুরু হওয়া মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহটি মাগুরা জেলার প্রথম সিনেমা হল। যে কোনো মুহূর্তে দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে হলটির মালিক বাবুল মিয়া।

পাঁচ বছর আগেও গোটা জেলায় সিনেমা হল ছিল ১০টি। পরের দুই বছরে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাতটি। গত বছরের শুরুতে বন্ধ হয়ে যায় সবচেয়ে বড় সিনেমা হল পূর্বাশা।

অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা হল ছায়াবানী বন্ধ হয় ২০১৪ সালে। ২০২১ এর শুরুতে মাগুরায় সিনেমা হলের সংখ্যা এক এ ঠেকেছে। যে হলটি টিকে আছে সেটির নাম মধুমিতা। এর অবস্থাও নিভু নিভু।

১৯৫৪ সালে চালু হওয়া এই প্রেক্ষাগৃহটি মাগুরা জেলার প্রথম সিনেমা হল। যে কোনো মুহূর্তে দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।

৮০ থেকে ৯০ দশকে যেখানে দর্শকের চাপে মর্নিং শো চালু করতে হতো, সেখানে আজ চরম দুর্দিন। এক সময় জেলায় নতুন সিনেমা আনতে লেগে যেতো প্রতিযোগিতা। শো চালানোর আগে হতো ব্যাপক প্রচার। সময়ের বিবর্তনে সব হারিয়ে গেছে।

একমাত্র সিনেমা হল মধুমিতার অবকাঠামোর অবস্থা এখন খুবই খারাপ। অথচ দশ বছর আগেও দর্শকের চাপে এই হলের সামনের রাস্তা দিয়ে মানুষ যেতে পারতো না। হলটিতে তিন বছর আগে ডিজিটাল সিনেমা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার অভিনীত সাড়া জাগানো সিনেমা হারানো সুর এই মধুমিতায় দেখানো হয়। মূলত এর পর থেকে হলটির নাম ছড়িয়ে পরে। এ ছাড়া চন্দ্রনাথ, রায়কমল, রূপবান কালজয়ী সিনেমাগুলো মাগুরার এই মধুমিতায় দেখেছেন এলাকার দর্শকরা।

সিনেমার পোস্টার

সেতারা বেগম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। তিনি নিউজবাংলার কাছে তার স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৬৩ সালে আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। বড় ভাই ছিলেন চিকিৎসক। তিনি কম্পাউন্ডার দিয়ে হলের টিকেট কেটে দিতেন আর বলতেন, সিনেমার শিক্ষনীয় বিষয়গুলো শিখবে। আমি ও বাড়ির নারীরা মিলে দলবেঁধে সিনেমা দেখতে যেতাম।’

৮৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধুমিতা সিনেমা হলের সামনেই আমার বাড়ি। তরুণ বয়সে সিনেমা খুব প্রিয় ছিল, বিশেষ করে উত্তম-সুচিত্রা জুটির যে কোনো সিনেমা মানেই তখন হল ভর্তি দর্শক। আমরা বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতাম।

‘মধুমিতা হলটির আগের নাম ছিল মধুমতি; কাঠ ও টিনের দেয়াল। এই তো সেদিন ভেঙে তিনতলা গড়ে তুললো। দর্শক থাকলেও সেই সিনেমা নেই। এখনকার তরুণেরা অনেক রুচিসম্পন্ন। তারা ভাল কাহিনি এবং আধুনিকতার সংমিশ্রন চায়। যা খুব কম সিনেমাই দিতে পেরেছে। এজন্য হয়তো মাগুরায় প্রায় সব হল বন্ধ হয়ে গেছে।’

নিমাই পাল নামে ৪০ বছরের এক দর্শক বলেন, ‘সালমান ও মৌসুমীর প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত দেখি মাগুরা শহরের পূর্বাশা সিনেমা হলে। একমাস ধরে চলেছে সিনেমাটি। এরপর হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমাও দর্শক টেনেছে এই হলগুলোতে। টানা দুমাস ধরে ভালো ব্যবসা করেছে সিনেমাটি।

মধুমিতা হলের গেটম্যান আমির মোল্লা বলেন, ‘আগে ছিলাম পূর্বাশা হলে। সেটা বছর খানেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মধুমিতা হলে চলে আসি। এখন খুব খারাপ অবস্থা। মাঝে তো হল বন্ধ ছিল; তখন বাদাম বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। এখন সংসার চালাতে খুব কষ্ট করছি।’

অ্যানালগ প্রজেক্টরের জায়গা দখল করেছে ডিজিটাল প্রজেক্টর

হলের ম্যানেজার পান্না মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাগুরার সবকটি হল গত পাঁচ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে আছি শুধু আমরা। ৩৪ জন স্টাফ থেকে এখন মাত্র ছয় জন এই হলের কর্মচারী। এখন যেসব সিনেমা চলছে তা কেউ দেখতে আসে না। হয়তো আর বেশিদিন এভাবে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।’

মধুমিতার মালিক বাবুল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধুমিতা হলে আগে ছিল মধুমতি নামে। দেনার জন্য সেই লাইসেন্স বাতিল হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর নতুন করে তিনতলা ভবন করা হয় এবং নাম রাখা হয় মধুমিতা। হলের অবস্থা এমন যে, সেখানে গেলে বাড়ি ফেরার রিকশা ভাড়া জোটেনা আমার।

‘আশা নিয়েই এতোদিন চলছি, মনে হয় এবারই বুঝি জমে যাবে সিনেমা। প্রেক্ষাগৃহে নামবে দর্শকের ঢল। কিন্তু তা হয়নি। দেনা হয়ে গেছে অনেক। এবার সব বন্ধ করার সময় এসেছে।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কবি ও মাগুরার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামীম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসময় সিনেমা হতো দর্শকের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে। এখন বিনোদনের অনেক মাধ্যম। ইন্টারনেটে অবসর সময়ে নিজের ডিভাইসে নিজের মতো করে বিনোদন উপভোগ করেন দর্শকরা। নিজের ঘরকেই বিনোদনের জায়গা করে নিয়েছেন সবাই।’

এ বিভাগের আরো খবর