২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী সুচন্দা। ভেবেছিলেন, পুরস্কার নেয়ার পর কিছু কথা বলবেন সবার সামনে।
কিন্তু কোহিনুর আক্তার সুচন্দার অতি সম্প্রতি ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। এ কারণে তিনি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি।
তার পক্ষ থেকে পুরস্কার নেন তার মেয়ে লিসা মালিক। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন সুচন্দার নাতি আমবারিন বিনতে জাবের ও ছেলে তপু রায়হান।
সন্তানদের হাতে কথাগুলো লিখে পাঠিয়েছিলেন সুচন্দা। সেটি পড়ার কথা ছিল তার নাতির। কিন্তু সেই কথাগুলো পড়ার সুযোগ পায়নি সে। সুচন্দার না বলা সেই কথাগুলো প্রকাশ করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা
‘আমি সুচন্দা আজ গর্বিত ও গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বিশ্ব মানবতার প্রতীক জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নিকট থেকে চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার আজীবন সম্মাননা-২০১৯ জীবিত অবস্থায় গ্রহণ করছি বলে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও একই সঙ্গে পুরো বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ষাটের দশকে যখন উর্দু চলচ্চিত্র বাংলা ছবি ও সংস্কৃতিকে কোণঠাসা করতে শুরু করেছিল, সেই কঠিন সময়ে এ দেশের চলচ্চিত্রের পরিচালক শিল্পী, কলাকুশলীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির হাল ধরেছিলেন। আমি সেই প্রজন্মের একজন হিসেবে এখনও গর্ববোধ করি।
‘আমি গর্বিত যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শহীদ জহির রায়হানের পাশে থেকে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে পেরেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম প্রহরে জহির রায়হান নিখোঁজ হন।
‘এক অনিশ্চিত অসহায় অবস্থায় আমি আমার শিশু সন্তান ও মাতৃহারা ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে যখন দিশেহারা, তখন আমি দেখা করি জাতির পিতা, মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। পিতার গভীর স্নেহে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। তার সেই স্নেহ ভরা হাতের স্পর্শ আমি আজও ভুলি নাই, কখনও ভুলব না।
‘আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী তার পিতার যোগ্য উত্তরাধিকারী অসীম স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে, দুস্থ শিল্পীদের সাহায্য করে যেভাবে আমাদের চলচ্চিত্রবাসীদের ঋণী করেছেন, সেই ঋণও আমরা কোনোভাবে শোধ করতে পারব না।
‘জীবন, সমাজ ও ইতিহাসের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা থেকে আমি আমার শিল্পী জীবন অতিবাহিত করছি। দর্শকদের ভালোবাসা এবং দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার আমি পেয়েছি। আমি আমার এই পথ চলার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’