তরুণ, নবীন কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা ঐশী। মঞ্চ থেকে পদক নিয়ে এসেই তুলে দিলেন মায়ের হাতে। প্রথম বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ ভাগ করে নিলেন মায়ের সঙ্গে।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তানিম রহমান অংশু। মঞ্চে পুরস্কার নিতে যাওয়ার আগে এক জনকে নিজের মোবাইলটা দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন পুরস্কার নেয়ার ছবিটা যেন তুলে দেন তিনি।
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনকে দেয়া পুরস্কার মঞ্চ থেকে নিয়ে আসার পর ওলট-পালট হয়ে যায়। বিষয়টি বোঝার পর পুরস্কার ঠিক করে নেন বিজয়ীরা।
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান মো. রাজুর সঙ্গে এসেছিলেন তার বাবা। বসেছিলেন দর্শক সারির পেছনের দিকে। পুরস্কারপ্রাপ্তির পর বাবাকে এনে দেখালেন তার অর্জন।
এমন অনেক ছোট ছোট আনন্দের ও মজার ঘটনা তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। রোববার সকাল ১০টায় ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক, সার্টিফিকেট ও চেকের ফোল্ডার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
এবার ২৬ বিভাগে ৩৩ জন শিল্পী ও কলাকুশলী পেয়েছেন দেশীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার।
এবারের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নিতে না পারাটা কিছুটা কষ্টের সঙ্গে নতুন উদ্যমও দিয়েছে শিল্পীদের। অনেকেই বলেছেন, পরে কোনো এক বার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেই নেবেন।
যুগ্মভাবে সেরা ন ডরাই সিনেমার প্রযোজক মাহবুব রহমান বলেন, ‘আমার প্রযোজিত সিনেমায় এতগুলো পুরস্কার পাব কখনো ভাবিনি। খুব ভালো লাগছে। এই পুরস্কার নতুন সিনেমা বানানোর অনুপ্রেরণা দেয়।’
তিনি জানান, চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ ও মাদক নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে চান তিনি। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার চিত্রনাট্যের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
তথ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন তারিক আনাম খানকেন্দ্রীয় চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ‘এমন সময় কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছি যখন গল্পনির্ভর সিনেমা বেশি তৈরি হচ্ছে। এটা ভেবে খুবই ভালো লাগছে।’
তথ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন সুনেরাহ বিনতে কামালকেন্দ্রীয় চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল পুরস্কার নেয়ার আগে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আনন্দও লাগছে, আবার ভয়ও লাগছে। অনেকের সঙ্গে আমার ছবিও প্রকাশ পাবে, টিভিতে লাইভ যাবে, সাক্ষাৎকার প্রকাশ পাবে। এগুলো ভেবে নার্ভাস লাগছে।’
তথ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন তানিম রহমান অংশুপরিচালক তানিম রহমান অংশুর মতে, পরিচালক হিসেবে তার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। সেই কথা মাথায় রেখে শিগগিরই নতুন সিনেমার কাজ শুরু করবেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন ফজলুর রহমান বাবুফজলুর রহমান বাবু সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আমি যেন এই পুরস্কারের ভার বহন করতে পারি।’
জাহিদ হাসান এবার পুরস্কার পেয়েছেন খল চরিত্রের জন্য। তিনি বলেন, ‘যদি কখনও চরিত্রের প্রয়োজনে নায়িকা হতে হয় এবং নায়িকা হিসেবে পুরস্কার নিতে হয়, সেটাও আনন্দের। খল চরিত্র বা মূল চরিত্র বলে কিছু নেই আমার কাছে।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দৃশ্যপুরস্কার প্রদানের পর হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, ওয়ার্দা রিহাব, ফেরদৌস-অপু বিশ্বাস, সাইমন-মাহি, নুসরাত ফারিয়া, কণ্ঠশিল্পী অপু আমান ও লুইপা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন নুসরাত ফারিয়াসাংস্কৃতিক পর্ব উপস্থাপনা করেন আনিসুর রহমান মিলন ও আশনা হাবিব ভাবনা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন অপু বিশ্বাসএবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সিনেমা ন ডরাই ও ফাগুন হাওয়ায়। শ্রেষ্ঠ পরিচালক তানিম রহমান অংশু। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা তারিক আনাম খান ও অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল।
পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রী ফজলুর রহমান বাবু ও নারগিস আকতার।
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা জাহিদ হাসান। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ইমন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক।
কালো মেঘের ভেলা এবং যদি একদিন সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছে নাইমুর রহমান আপন ও আফরীন আক্তার।
তথ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজশ্রেষ্ঠ গায়ক মৃনাল কান্তি দাস। শ্রেষ্ঠ গায়িকা যৌথভাবে হয়েছেন মমতাজ ও ঐশী।
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ ও কবি কামাল চৌধুরী।
আব্দুল কাদির ও সৈয়দ মো. তানভীর তারেক যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সুরকার।
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার মাসুদ রানা (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার মাহবুব উর রহমান (ন ডরাই), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক জুনায়েদ হালিম (মায়া দ্য লস্ট মাদার), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক যৌথভাবে মো. রহমত উল্লাহ বাসু ও ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)।
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক সুমন কুমার সরকার (ন ডরাই)। শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ (ন ডরাই)। শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা খোন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়)।
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যানের পুরস্কার পেয়েছেন মো. রাজু (মায়া দ্য লস্ট মাদার)।
এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে নারী জীবন। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট। যা ছিল অন্ধকারে প্রামাণ্যচিত্রের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন পেয়েছে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার।
এবারের আয়োজনে সর্বোচ্চ আটটি বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে মায়া দ্য লস্ট মাদার সিনেমাটি। ছয় বিভাগে পুরস্কার পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ন ডরাই। এ ছাড়া ফাগুন হাওয়ায় সিনেমাটি পুরস্কার পেয়েছে তিনটি বিভাগে।