করোনা মহামারি বেশ অনেকটা সময় স্থগিত করে রেখেছিল বিশ্বের চলচ্চিত্র জগতকে। সিনেমা দেখা শুধু ঘরেই আবদ্ধ ছিল দীর্ঘদিন। লকডাউনের কারণে বাতিল করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী অনেক চলচ্চিত্র উৎসব। যারা উৎসব করেছে, তাদেরকেও ভার্চুয়াল আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সিনেমাপ্রেমীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। রাজধানীর শাহবাগে উৎসবমুখর চলচ্চিত্রময় পরিবেশ তারই উদাহরণ।
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে পা ফেললেই দেখা যায় পৃথিবীখ্যাত নামকরা পরিচালকেরা তাকিয়ে আছেন ভাবুক দৃষ্টিতে। জাদুঘরের প্রবেশ দ্বারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাদের ছবি।
জাতীয় গ্রন্থাগার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সের চারিদিক আগামী শীতের দিনগুলো মুখর হয়ে থাকবে সিনেমাপ্রেমী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও সাধারণ মানুষের সমাগমে।
উপলক্ষ, দেশের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব। শনিবার জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে উদ্বোধন হয় ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের শ্লোগান, ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’।
উৎসবের পর্দা ওঠে মনোরম নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। চারটি দেশাত্ববোধক গানে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পী ও স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর নৃত্যশিল্পীরা।
এরপর শুরু হয় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্ব। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের উৎসবে অন্য দেশের সংস্কৃতি, সমাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের চলচ্চিত্রও এগিয়ে যাবে।’
উদ্বোধনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী।
দোরাইস্বামী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ বেশ কিছু কাজ একসঙ্গে করছে। তার মধ্যে রয়েছে দুই দেশের যৌথ প্রয়োজনায় বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক।’
তিনি বলেন, ‘এখানে যখন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হচ্ছে তখন ভারতের গোয়াতে ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হচ্ছে। যেখানে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ।’
উদ্বোধনে আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসব পেট্রন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ এবং মফিদুল হক।
অনুষ্ঠান শেষে উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শন করা হয় নারী চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে ফরাসি চলচ্চিত্র স্প্রিং ব্লসম। ৭৪ মিনিটের সিনেমাটির পরিচালক সুজান্নে লিন্ডন। সিনেমাটি ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর গল্প দেখায়, যে তার সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গ নিয়ে অসন্তোষ। নতুন বন্ধুর খোঁজে সে তার চেয়েও বড় বয়সী এক মানুষের প্রেমে পড়ে যায়।
এই উৎসবে ৭৩টি দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে। তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, মালয়েশিয়া, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, চীন, ভারত এবং স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র।
বাংলাদেশের ৪১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রয়েছে।
আগামী ১৭-১৮ জানুয়ারি উৎসবের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক সপ্তম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে।
সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় কনফারেন্স উদ্বোধন করবেন। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি আলোচক হিসেবে থাকবেন।
নারী নির্মাতারা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং উত্তোরণের উপায় নিয়ে বিশ্বের খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এ কনফারেন্সে। ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আকর্ষণগুলোর একটি এই উইমেন্স কনফারেন্স।
উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর স্থানগুলো হলো- জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্স।
আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটি আয়োজন করেছে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। সফলভাবে এই উৎসব সম্পূর্ণ করতে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সঙ্গে যুক্ত আছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস।