যেখানে অভিনয় জীবনের শুরু, চিরশয্যার আগে সেই শিল্পকলা একাডেমিতেই অভিনেতা আব্দুল কাদেরকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন অভিনয় শিল্পীরা।
কাদেরের স্মৃতিচারণ, তার অভিনয় জীবনের সাফল্য, বেড়ে ওঠাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন এক সময়ের সহশিল্পীরা।
বেলা ৩টার দিকে আব্দুল কাদেরের মরদেহ নেয়া হয় শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধুরা শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান। ৪টার দিকে সেখান থেকে বনানী নিয়ে যাওয়া হয় আব্দুল কাদেরের মরদেহ। তাকে সমাহিত করা হয়, এর আগে যেখানে চিরশয্যায় ছিলেন তার মা।
দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘আব্দুল কাদের নাট্য সংগঠন থিয়েটারে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ওর একটা বিষয় আমাকে বিস্মিত করত। কাদের নিজের সংলাপ ছাড়াও অন্য সবার সংলাপ মনে রাখতে পারত।’
ফেরদৌসী মজুমদারের কথার রেশ ধরে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘একবার রিহার্সেলে কাদের ছাড়া আর কেউ সময়মতো আসেনি। তখন কাদের একাই মহড়া শুরু করল। আমি দেখলাম সে একাই সব চরিত্রের সংলাপ বলে বলে অভিনয় করছে।’
আবেগ জড়ানো কণ্ঠে ত্রপা মজুমদার বলেন, ‘একবার রিহার্সেলে কাদের চাচা সংলাপ বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। দৃশ্যটি এমন ছিল যে, আমার মা ফেরদৌসী মজুমদার সেই দৃশ্যে খাটিয়ায় শুয়ে থাকবেন আর কাদের চাচা তার পাশে বসে সংলাপ বলবেন। কিন্তু কাদের চাচা মাকে বলছিলেন যে, আমি তোমাকে খাটিয়ায় শুইয়ে সংলাপ বলতে পারব না। আজ সেই কাদের চাচাকে খাটিয়ায় শুইয়ে আমার কথা বলতে হচ্ছে।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আব্দুল কাদের ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরে যখন রামেন্দু দা থিয়েটার করলেন, তখন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে কথা বলেই কাদের থিয়েটারে যুক্ত হন। পরে তো তিনি নিজ গুণে টিভিতেও প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।’
শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে মারা যান গুণী এই অভিনেতা। মিরপুর ডিওএইচএস জামে মসজিদে জোহরের নামাজের পর তার প্রথম জানাজা হয়।
চলতি মাসের শুরুতে অসুস্থ হলে কাদেরকে ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার ক্যানসার ধরা পড়ে।
শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে।
এরপর তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয় তাকে।
খ্যাতিমান এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কাদেরের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক কোথাও কেউ নেই এ অভিনয়ের মাধ্যমে খ্যাতি পান এই অভিনেতা। এরপর থেকে অগণিত নাটকে দেখা গেছে তাকে। নক্ষত্রের রাত নাটকে দুলাভাই চরিত্র করেও জনপ্রিয়তা পান তিনি।
হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নিয়মিত মুখ ছিলেন কাদের, অভিনয় করতেন মামা চরিত্রে।