রুসো ব্রাদার্সের এক্সট্র্যাকশন নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার হওয়ার পর আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল তাদের নতুন প্রজেক্ট মসুল। ইরাকি শহরটিতে আইএসের বিপক্ষে ইরাকি এক সোয়াট দলের শেষ লড়াই সিনেমাটির উপজীব্য।ইরাকি পুলিশের মেজর জাসেমের নেতৃত্বে সোয়াট দল ‘নিনেভেহ’ ইরাকি শহর মসুলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। আইএসের বিপুল সদস্যকে গ্রেফতারের পর হত্যা করেছে দলটি। দলের সদস্যদের প্রত্যেকেই আইএসের হাতে পরিবারের সদস্য হারিয়েছে। ফলে মসুল শহরের মুক্তির পাশাপাশি তাদের মিশনগুলো হয়ে যায় ব্যক্তিগত প্রতিশোধেরও।এমন এক মিশনে দলটির দেখা হয় ইরাকি পুলিশের নতুন সদস্য কাওয়ার। ক্রসফায়ারে দায়েশের (আইএস) হাতে তার চাচা মারা পড়লেও তরুণ কাওয়া ও তার সঙ্গীকে উদ্ধার করে নিনেভেহ। কাওয়াকে নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন মেজর জাসেম।নিনেভেহর সঙ্গে কাওয়ার নতুন জীবন শুরু হয়। মসুলে শহরে বিশেষ মিশনের অংশ হন তিনি। কিন্তু তার কাছ থেকে দলের উদ্দেশ্য ও আদেশ সম্পর্কে প্রায় সবকিছুই গোপন রাখা হয়। তিনি বুঝতে পারেন, দলটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হলেও এটি পরিচালিত হচ্ছে জাসেমের ইচ্ছাতেই।যুদ্ধের ভয়াবহতার সঙ্গে কাওয়ার পাশাপাশি পরিচিত হতে থাকেন দর্শকেরা। পত্রিকার পাতায় কালিতে লেখা নৃশংসতা বাস্তবে কেমন হতে পারে তার একটা বাহুল্য বর্জিত বাস্তব রূপ দিয়েছেন পরিচালক ম্যাথিউ কারনাহান।
মিশনে থাকাকালীন নিনেভেহর সদস্যদের পরিত্যক্ত বাড়িতে টিভিতে সোপ অপেরা দেখে আমোদে মেতে ওঠার মতো হালকা মুহূর্তের পাশাপাশি সিগারেটের বিনিময়ে শিয়া মিলিশিয়াদের বাহিনীর সঙ্গে গুলি অদল-বদলের মতো বাস্তব পরিস্থিতিগুলো পরিচালক রেখেছেন সিনেমায়।যুদ্ধের দারুণ সব অ্যাকশন সিকোয়েন্স দেখার অভিজ্ঞতার পাশপাশি যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো চরিত্রের মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয় মসুল দর্শকদের মনে।তবে অধিকাংশ যুদ্ধের সিনেমার মতো মসুলও প্রচ্ছন্নভাবে যুদ্ধবিরোধী। দায়েশের দানবীয়তা ছাপিয়ে রুশো ব্রাদার্স ছবিজুড়ে মানবিকতাকেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন। মেজর জাসেমের সংলাপ ‘আমরা সবকিছুই আবারও গড়ে তুলতে পারব। তবে তার আগে সবাইকে (দায়েশ) মেরে ফেলতে হবে’ থেকেই বোঝায় যায় মসুলের অন্তর্নিহিত দ্বৈততা।যুদ্ধের সিনেমার জন্য উপযুক্ত সেট ও প্রোডাকশন ডিজাইনের পাশাপাশি চিত্রনাট্য ও আবহ সংগীতের ব্যবহার সিনেমার বাড়তি আকর্ষণ। অভিনয়ে সাবলীল ছিলেন সবাই। তরুণ অফিসার কাওয়ার চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন তুনিশিয়াল অভিনেতা আদম বেসসা।তবে সিনেমাটি একাই টেনে নিয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে মেজর জাসেমের চরিত্রে থাকা সুহাইল দাব্বাচ। ইরাকি এই অভিনেতাই মসুলের প্রাণ। জাসেমের চরিত্রের নিরাবেগ হিংস্রতার পাশপাশি নিনেভেহর সদস্যদের প্রতি তার টান, দায়িত্ব ও নেতৃত্বগুণ দাব্বাচের অভিনয়ে হয়ে উঠেছে জীবন্ত। দাব্বাচের কারণেই সিনেমাপ্রেমীরা দেখতে পারেন মসুল।নেটফ্লিক্সে মসুল মুক্তি পেয়েছে ২৬ নভেম্বর।