জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার ৬১তম জন্মদিন আজ ২ ডিসেম্বর বুধবার। দিনটি সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার কথা হয়েছে তার স্বামী বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে। সুবর্ণাকে তিনি কীভাবে দেখেন, তা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
সৌদ বলেন, ‘সুবর্ণার জন্মদিন। কিন্তু দিনটি নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করার সুযোগ নেই। এবার করোনা বলে নয়, গত ছয়-সাত বছর ধরে তার জন্মদিন উদযাপিত হয় না। সুবর্ণা পছন্দও করেন না। সুবর্ণার প্রিয় ও কাছের মানুষদের জন্য রাত ১২টায় সারপ্রাইজ দেয়াটা তো একেবারেই মানা।
‘কিন্তু আমার জোরাজুরি কে থামায়? শেষমেশ আমার কথা রাখতেই পাঁচ-সাত জন বন্ধু ও প্রিয়জন মিলে কিছু আড্ডা, কিছু খাওয়া-দাওয়া হয়। করোনার কারণে এ বছর তাও হবে না।’
অভিনেত্রীর জন্মদিনে ঘরোয়া আয়োজন নিয়ে তার স্বামী বলেন, ‘সুবর্ণার জন্মদিনে ঘরে রান্নাটা হয় বেশ। আমাদের দুই জনের সংসার হলেও অনেকেই থাকেন আপন মানুষের মতো। আমরা সবাই মিলে স্বাভাবিক স্বরে উদযাপন করি সুবর্ণার জন্মদিন।
‘জন্মদিন একটা উপলক্ষ, এর আড়ালে এই যথার্থ শিল্পীকে মূলত সম্মান জানাই আমি। জানি, মনে মনে অনেকেই শ্রদ্ধা জানান তাকে; ছুঁড়ে দেন ভালোবাসা।’
সুবর্ণা মুস্তাফা ও বদরুল আনাম সৌদ। ছবি: সংগৃহীত
বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর শিল্পী সত্তা নিয়ে তার নির্মাতা স্বামী বলেন, ‘এক জন সুবর্ণা মুস্তাফা, যাকে আমি বলি প্রকৃত শিল্পী। যারা সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন আর্টের সঙ্গে জড়িত, তাদের আমরা পারফর্মার বলে থাকি। সুবর্ণাও একটা সময় পারফর্ম করেছে, যার পরিবেশনায় মুগ্ধ ছিল তিন প্রজন্ম, যারা হতে চেয়েছেন সুবর্ণার মতোই।
‘কিন্তু এখনকার সুবর্ণা তার চিন্তায়, মননে ও সত্তায় এক জন শিল্পী। এক জন নিরেট লোভহীন মানুষ। বৃহৎ অর্থে এক জন পুরিপূর্ণ সৎ মানুষ।’
টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেত্রীর নির্মোহতার প্রশংসা করে সৌদ বলেন, ‘সুবর্ণা তার অবস্থান থেকে বিভিন্ন সময় অনেক সুযোগ-সুবিধাই নিতে পারতেন। কিন্ত তা তিনি কখনই করেননি। তেমন কোনো কিছু তার ভাবনাতেও থাকে না। এক জন সুবর্ণা মুস্তাফা, যে বেঁধে রাখতে জানে। সুবর্ণা কখনোই একা বাঁচতে চায়নি।
‘একা অনেক ভালো থাকার চেয়ে সবাই মিলে মোটামুটি বাঁচাটা সুবর্ণার কাছে বেশি পছন্দের। তাই একসঙ্গে থাকা ও সেই যাত্রায় ভালো থাকার ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনাটা মিলে গেছে। এই কারণেই হয়তো আমাদের বন্ধন ওভার দ্য ইয়ার এগিয়ে যাচ্ছে। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি আমার রেসপেক্ট বাড়ছে।’
বদরুল আনাম সৌদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা। ছবি: সংগৃহীত
দুজনের সম্পর্ক নিয়ে এ চিত্রনাট্যকার বলেন, ‘বিয়ের পর যে কখনো আমাদের সমস্যা হয়নি, তা কিন্তু না। মিথ্যে বলছি না আমি। মানুষটিকে একটু একটু করে চিনেছি আর তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উন্মোচন হয়েছে, হচ্ছে।
‘কোনো প্রেম যখন শুরু হয় তখন এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে। ধীরে ধীরে সেটা স্তিমিত হয় বা শান্ত হয়। সুবর্ণার ক্ষেত্রে আমার যেটা হয়েছে সেটা হলো- ভালোবাসাটা হয়তো শান্ত হয়েছে। কিন্তু সম্মানটা বেড়েছে।’
সুবর্ণার প্রতি কর্তব্যবোধের বিষয়টি তুলে ধরে সৌদ বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সুবর্ণার ৫০ বছর কেটে গেছে। তার এই প্রগাঢ় শিল্পী সত্তাকে কাজে লাগাতে হবে আমাদেরই। সে নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছে। আমরা তাকে কতটুকু ব্যবহার করতে পারব- সেটাই এখন আমাদের দায়িত্ব।
‘জন্মদিনে সুবর্ণাকে আমি বলতে চাই, এমনিতে কখনও কখনও হয়তো বলি, ভালোবাসি। সে হয়তো গুরুত্বটা বোঝে। কিন্তু তারপরও কখনও কখনও মনে হয়, সুবর্ণা না থাকলে আমি নিজের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাই না। এ কথা হয়তো সেভাবে বলা হয়ে ওঠে না। শুভ জন্মদিন সুবর্ণা।’