বনানী কবরস্তানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশ বরেণ্য অভিনেতা, শব্দসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। শুক্রবার বাদ আসর চারটা ৩৫ মিনেটের দিকে সমাহিত করা হয় তাকে।
ভোর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান মারা যান এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর চার দিন আগে তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এ কারণে গণ শ্রদ্ধার আয়োজন করা হয়নি।
মৃত্যুর পর সবার শ্রদ্ধার জন্য বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে আলী জাকেরের মরদেহ নেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান নূর, মফিদুল হক, তারিক আনাম খানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বাংলা নাটকের অন্যতম এই চরিত্রের স্মৃতিচারণ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গণের প্রতিষ্ঠিতজনরা বলেন, আলী যাকের তার কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ।
মুক্তিযুদ্ধের সেনানী আলী যাকেরকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গার্ড অফ অনার দেয় পুলিশের একটি চৌকস দল
৮ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হয় গার্ড অব অনার। শ্রদ্ধা জানানো শেষে আলী জাকেরের মরদেহ নেয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক-এর অফিসে।
সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর আলী জাকেরের মরদেহ নেয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে আসরের নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে আলী যাকেরের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে করাচিতে একটি ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থায় তার কর্মজীবন শুরু।
১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক, অভিনয়ের জন্য দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড সেলিব্রিটিং লাইফ – ২০১৮ মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার -২ পেয়েছেন এই অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে অভিনয়, নাট্য নির্দেশনা দিয়ে আসা আলী যাকেরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপ্রধান প্রধান বলেছেন, বাংলাদেশ এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল। সরকার প্রধান বলেছেন, তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।