চলে গেলেন অভিনেতা, শব্দসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব আলী যাকের।
ক্যান্সারে আক্রান্ত এই অভিনেতার সম্প্রতি করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, 'বেলা ১১ টার দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে। আর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হতে পারে।'
মুক্তিযুদ্ধে একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আলী যাকেরের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য পান্থ শাহরিয়ার।
আসাদুজ্জামান নূর জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন আলী যাকের। সেটা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষা করা হলে পজিটিভ ফল আসে।
গত কয়েক বছর ধরেই আলী যাকের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তাই সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নিজেকে কিছুটা সরিয়ে নিয়েছেন।
১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে। মঞ্চের পাশাপাশি টিভি নাটকেও সমাদৃত হন এই তারকা।
মঞ্চে নুরুলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজী, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘আজ রবিবার’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন আলী যাকের।
‘অচলায়তন’, ‘বাকী ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘তৈল সংকট’, ‘এই নিষিদ্ধ পল্লীতে’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনাও দিয়েছেন আলী যাকের।
পান্থ শাহরিয়ার জানান, চার বছর ধরে ক্যান্সার ছাড়াও নানা সমস্যা ছিল গুণি এই অভিনেতার। তার হৃদরোগ ছিল, ছিল ডায়াবেটিক, ব্লাড প্রেসার।গত সপ্তাহে তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।
সেখানে ডায়ালাইসিস শেষে গত রোববার আলী যাকেরকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন জানা যায় যে তিনি কোভিড পজিটিভ। তারপর থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেও জড়িয়ে আছে আলী যাকেরের নাম। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে আলী যাকেরের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে করাচিতে একটি ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থায় তার কর্মজীবন শুরু।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু হয় এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির। তিনি এই কোম্পানির গ্রুপ চেয়ারম্যান ছিলেন।