অতীতের এক সাক্ষাৎকারে শায়ান চৌধুরী অর্ণব বলেছিলেন, ‘সামনে ভালো কাজ করতে চাইলে আমার ডুব দেয়া প্রয়োজন।’ কথামতো গত কিছু বছর ডুব দিয়ে ছিলেন অর্ণব। ডুব শেষে উঠে এসেছেন এবার।
দেশে ফিরেছেন সম্প্রতি। ফিরে যখন আসলেন, সঙ্গে করে নিয়ে এলেন সুখবর। তিনি আর একা নন। বিয়ে করে নতুন বৌ নিয়ে ফিরেছেন দেশে।
১৮ অক্টোবর পশিমবঙ্গের আসানসোলে সুনিধি নায়েককে বিয়ে করেন অর্ণব। বিয়ের আগে তারা একসঙ্গে বাংলাদেশে এলেও দম্পতি হিসেবে ১৩ নভেম্বর প্রথম দেশে এসেছেন অর্ণব-সুনিধি।
তাদের শুভেচ্ছা জানাতে নিউজবাংলা চলে যায় অর্ণব ও সুনিধির গুলশানের বাড়িতে। হাসিমুখেই পাওয়া গেল স্টুডিওতে কর্মরত অর্ণবকে। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী সুনিধি। আর তাদের সঙ্গে আদুরে চোখে অর্ণবের পোষা কুকুর ‘দুব্বা’।
স্টুডিওতেই শুরু হয় কথপোকথন।
ডুব দেয়া শেষ হলো কি? ‘হ্যাঁ, ডুব দিয়ে উপরে উঠেছি। এখন নিয়মিত কাজ করব। লকডাউনের কারণে পাঁচ-ছয় মাস কিছু না করে বিরক্ত হয়ে ছিলাম। কাজ না করার অভ্যাসটা বেশিদিন হয়ে গেলে খুব মুশকিল। তাই নিয়মিত কাজ করব এখন থেকে।’ হাসতে হাসতে বললেন অর্ণব।
এই বিরতিতে অর্ণব যেমন বিরক্ত হয়েছেন, তেমনি সুযোগ পেয়েছেন নতুন কিছু ভাবার, সংগীত নিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করার।
‘গত কয়েকদিন ধরে কবিতা পড়ছি, কিছু লেখাও দেখলাম। সেই কথাগুলোকে কীভাবে নতুন করে সুর দেয়া যায়, সে অভ্যাসটাই এখন করার চেষ্টা। সবক্ষেত্রে সফল না হলেও কিছু রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। নতুন অনেক আইডিয়া এসেছে, এখন সেগুলোকে স্টুডিওতে তৈরি করা বাকি।’
অর্ণব এখন নিয়মিত করতে চান সিনেমা, বিজ্ঞাপন বা সুর সম্পর্কিত যে কোনো কাজ। এই যেমন সম্প্রতি রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘নোনা জলের কাব্য’ সিনেমার জন্য মিউজিক করেছেন তিনি। এরকম আরও কিছু সিনেমার জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন অর্ণব।
কিছুদিন আগে অর্ণব ‘চোরাকাটা’ নামে একটি একক গান প্রকাশ করেছেন। কিন্তু শুধু একটি গান প্রকাশ করে তৃপ্ত নন তিনি।
এ প্রসঙ্গে অর্ণব বলেন, ‘একটা করে গান করাই যায়, কিন্তু গান নিয়ে যে সময়টা আমি পার করি, যে চিন্তার মধ্যে দিয়ে যাই, সেগুলো একটা গান দিয়ে বোঝানো যায় না। সে জন্য সাত-আটটা গানের একটি অ্যালবাম লাগে। একটা গানে আমি নিজেকে ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছি না।’
এসব কথা বলতে বলতে আড্ডায় যোগ দেন সুনিধি। নতুন দম্পতিকে পেয়ে শুধু অর্ণবের কথা ফেলে শুরু হলো অর্ণব-সুনিধির গল্প।
সুনিধি নায়েক ও অর্ণববিয়েটা কীভাবে? পরিকল্পিত নাকি, হুট করে? ’হুট করেই’, সুনিধির উত্তর। ‘আবার ঠিক প্ল্যান করেও বলতে পারেন।’
সঙ্গে যোগ করলেন অর্ণব, ‘বিয়ে করার পরিকল্পনা তো আগে থেকেই, কিন্তু আরও পরে করার ইচ্ছা ছিল। আমি ফেব্রুয়ারি মাসে যখন শান্তিনিকেতনে যাই তখনও জানতাম না যে বিয়ে করে ফিরবো।’
সুনিধি নায়েকের সঙ্গে অর্ণবের প্রথম দেখা বিশ্বভারতীতে। সুনিধি একটা অনুষ্ঠানে গান গাচ্ছিলেন। বলা যায় সুনিধির গান শুনেই অর্ণব তার প্রেমে পড়েন।
বর্তমানে সুনিধি কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্কলার। পিএইচডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছা সুনিধির। বাচ্চাদের গান শেখাতে সুনিধির খুব ভালো লাগে বলেও জানালেন তিনি।
সুনিধি নায়েকঅর্ণবের কোন গানটা সুনিধির সবচেয়ে প্রিয়? ‘চাই’ সুনিধির ঝটপট উত্তর। অর্ণবের কাছেও ছিল একই প্রশ্ন, অর্ণবের উত্তর, ‘বন্ধু রহো সাথে’।
গানটি এমন- বন্ধু, রহো রহো সাথে/আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে/বন্ধু, রহো রহো সাথে/ছিলে কি মোর স্বপনে/ছিলে কি মোর স্বপনে।
অর্ণব-সুনিধির সময়টা এখন এই গানটির মতোই। ঢাকায় এসে মজার সময় কাটাচ্ছেন এই দম্পতি। আড্ডা দিচ্ছেন, ঘুরছেন।
সুনিধি ঢাকায় এসেছে শুনে সংগীতাঙ্গনে অর্ণবের বন্ধুরা আড্ডায় বসেছিলেন সম্প্রতি। সুনিধি জানালেন বেশ মজা করেছেন সেখানে। তবে অর্ণব বললেন ভিন্ন কথা। ‘আমরা যে ধরনের গান গাচ্ছিলাম, সুনিধির সেগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।’
এই সহযোগীতা আর ভালোবাসায় কেটে যাক তাদের আগামী। তাদের আগামীর চিন্তা সংগীত নিয়েই। অর্ণব বলেন, ‘সামনে আমরা একসঙ্গে বেশ কিছু কাজ করব।’
অর্ণব ও সুনিধি নায়েককথা শেষ। এবার ছবি তোলার পালা। অর্ণবের সিঙ্গেল, সুনিধির সিঙ্গেল আবার দুজনের একসঙ্গে, এভাবে ছবি তুলতে তুলতে আরও কিছু মজার মুহূর্ত, হাসি, ঠাট্টা এবং তথ্যের আদান-প্রদান। আর সবশেষে সেলফি পর্ব। একফ্রেমে সবাই বন্দি হয়ে গল্পের সমাপ্তি।