কথায় আছে ‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়’। সঞ্জীব চৌধুরী এই কথাটির ভালো উদাহরণ। ৪৩ বছর বেঁচেছেন তিনি। অনেকের কাছে সংখ্যাটি কম মনে হতে পারে। কিন্তু কাজের হিসেবে এই সময়েই তার অর্জন বিশাল। বর্ণাঢ্য জীবন ছিল তার।
সাংবাদিক, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী, কবি, গল্পকার, এমনকি নাট্যকার- সবখানেই পেয়েছেন পাঠক-শ্রোতার স্বীকৃতি। আদর্শের লড়াই নিয়ে ছিলেন রাজপথেও। যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই কাজ করেছেন ক্ষণজন্মা সঞ্জীব।
সঞ্জীবকে অনেকেই ‘বারুদ’ বলেন। তার অনেক কারণও রয়েছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন গলায় হারমোনিয়াম নিয়ে। গান লিখেছেন, সুর করেছেন। গানে গানে উত্তাল করেছেন আন্দোলন, উদ্দীপ্ত করেছেন কর্মীদের।
গলায় শুধু হারমোনিয়াম কেন, রাজপথের আন্দোলন বহুবার আলোড়িত হয়েছে সঞ্জীবের কবিতা ও কণ্ঠে।
সঞ্জীব আরও বেশি সাধারণের হয়ে উঠলেন গানের মাধ্যমে। সঙ্গীতে নানাভাবে পাওয়া গেছে সঞ্জীবকে। গানের কথাগুলো খেয়াল করলে সেটি খুব সহজেই বোঝা যায়।
‘আমি ঘুরিয়া ফিরিয়া সন্ধান করিয়া, স্বপ্নের অই পাখি ধরতে চাই’ গানটিতে কোনো এক স্বপ্নবাজ সঞ্জীবকে খুঁজে পাওয়া যায়। আবার ভালোবাসার মধুর স্মৃতি মনে করে তিনি গেয়ে ওঠেন ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’।
প্রেমিক সঞ্জীবের দেখা বেশ ভালোভাবেই পাওয়া গেছে তার সৃষ্টিকর্মে। ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে’, ‘হাতের উপর হাতের পরশ’, ‘চোখটা এত পোড়ায় কেন’, ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘হৃদয়ের দাবি’, ‘কোন মেস্তিরি নাও বানাইয়াছে নাও’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’সহ আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে সঞ্জীবের।
এসব গানের মাধ্যমেই সঞ্জীবের বিভিন্ন স্বপ্ন ও কথা বয়ে বেড়ায় এ প্রজন্মের তরুণেরা। তাই তো এখনও কোনো তরুণ প্রাণের আড্ডায় বা মাঝরাতে ফাঁকা রাস্তায় কেউ গেয়ে ওঠে ‘আমি তোমাকেই বলে দেব/কী যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেঁটে গেছি বিরাণ পথে/ছুঁয়ে কান্নার রং, ছুঁয়ে জ্যোছনার ছায়া’।
সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৬৪ সালে ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।