সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। দুই বাংলার দুই কিংবদন্তি শিল্পীকে একসঙ্গে রূপালি পর্দায় দেখা যায় সত্যজিত রায়ের 'অশনি সংকেত' সিনেমায়। কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকাহত ববিতা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, শুরু থেকেই সিনেমার সেট ও বাইরে সৌমিত্র তাকে আপন করে নিয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটিতে সৌমিত্রর সঙ্গে অভিনয় করা নিয়ে ববিতা বলেন, 'আমি যখন অশনি সংকেত করি, তখন আমি সবাইকে ভালো করে চিনতাম না, কারণ আমি তখন নতুন। শুটিংয়ে যাওয়ার পর প্রথম সৌমিত্রদার সঙ্গে দেখা। ওনার সঙ্গে কাজ করে আমার কী যে ভালো লেগেছিল! আমার একেবারেই মনে হয়নি যে আমি বিদেশে শুটিং করছি বা বিদেশি কোনো শিল্পীর সঙ্গে কাজ করছি।'
তখন ঢাকাই ছবিতে একেবারে নতুন ববিতা। কলকাতার রূপালি পর্দায় সৌমিত্র ততদিনে চেনামুখ। নতুন হওয়ার পরও সহশিল্পী হিসেবে বাড়তি মনোযোগ পেয়েছিলেন সৌমিত্রর কাছ থেকে। ববিতা বলেন, 'আমি উনাকে খুব ভালো করে চিনতাম না। আমার নিজেরই খুব অল্প বয়স, মাত্র দুই একটা সিনেমা করেছি। উনার নাম শুনেছি। দুই একটা সিনেমা দেখেছি। একটা বিষয় খেয়াল করতাম, আমি যখন শট দিচ্ছি তখন সৌমিত্রদা, মানিকদার (সত্যজিৎ রায়) ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে শট দেখছেন। আমাকে উনি সাঙ্ঘাতিক সহযোগিতা করেছেন।'
সিনেমায় নিবেদিতপ্রাণ সৌমিত্র কাজের অবসরে আড্ডা দিতেন, বই পড়তেন। খুব দ্রুত ববিতাকে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি।
'উনি আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছিলেন। একসঙ্গে গল্প করা, হাসি-ঠাট্টা সবই হয়েছে। সৌমিত্রদার সঙ্গে যখনই কাজ করেছি তখনই দেখেছি, শুটিংয়ের ফাঁকে উনি কবিতা আবৃত্তি করছেন। মাঝে মাঝে দেখেছি শরীর চর্চা করছেন', জানান বাংলাদেশের খ্যাতনামা এই অভিনেতা।
সৌমিত্রর সঙ্গে বার্লিনে একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন ববিতা। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের সময় ইমিগ্রেশন ঝামেলায় পড়েছিলেন এবং কীভাবে সৌমিত্র এবং সত্যজিত রায় মিলে উদ্ধার করেছিলেন তাকে সেই ঘটনাও শুনিয়েছেন নিউজিবাংলাকে।
''ফ্রাংকফুর্টে যখন গেছি, তখন আমার পাসপোর্টে ওরা ইমিগ্রেশন সিল দেয়নি। কারণ পাসপোর্ট বাংলাদেশি। জার্মান সরকার তখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। বলা হলো বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। আমার তখন কাঁদোকাঁদো অবস্থা। তখন সৌমিত্রদা আমাকে সাহস দিলেন, 'ভয় পেয়ো না। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। মানিকদা একটা ব্যবস্থা করে ফেলবেন।' অবশেষে মানিকদার চেষ্টায় আমার যাওয়া হলো।''
- আরও পড়ুন: পর্দার অপু-ফেলুদা
এরপর যতবারই দেখা হয়েছে, সৌমিত্রের সঙ্গে ববিতা মিশেছেন আপনজনের মতোই। কিংবদন্তির এই অভিনেতার বিদায়ে অভিভাবক হারাল বাংলা সিনেমা এমনটাই মনে করছেন ববিতা। বলেন, 'সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সিনেমার অভিভাবক। বিরাট বটবৃক্ষ, যার তলায় বর্তমান বাংলা সিনেমার জগত বিরাজ করছে।'
- আরও পড়ুন: ১২ রকম সৌমিত্র
মহান এই অভিনেতার প্রয়াণে শোকাহত ববিতা জানান, তার মতো শিল্পী চিরদিন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
'আমি ওনার জন্য অনেক দোয়া করেছি, প্রার্থনা করেছি। এই মুহূর্তে মেনে নিতে পারছি না। আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। সৌমিত্রদা কত যে আপন ছিল, সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। সৌমিত্রদা আমাদের হৃদয়ে ছিলেন, আছেন এবং চিরকাল থাকবেন'- বলেন ববিতা।