বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১২ রকম সৌমিত্র

  •    
  • ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ১০:০৩

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম সিনেমা ‘অপুর সংসার’। নবীন শিল্পী শর্মিলা ঠাকুরের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ক্লাসিক বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি এই অপুর সংসার।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দুই বাংলার চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে খুবই পরিচিত এক নাম। তিনি অভিনয় শুরু করেন সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে, ১৯৫৯ সালে। সেই থেকে প্রায় ৩০৬ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে আছেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। তার আলোচিত ১২টি চলচ্চিত্র নিয়ে এ প্রতিবেদন। 

অপুর সংসার (১৯৫৯)

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম সিনেমা ‘অপুর সংসার’। নবীন শিল্পী শর্মিলা ঠাকুরের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ক্লাসিক বাংলা চলচ্চিত্র হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর একটি এই অপুর সংসার। এই সিনেমা দিয়েই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে অপু ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অপরাজিত’র কিশোর অপুর জন্য স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছিলেন সৌমিত্র।

তখন চরিত্র অনুযায়ী তাকে বয়সে বেশ বড় মনে হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। তবে সৌমিত্রর চেহারা বেশ দাগ কেটেছিল সত্যজিতের মনে। তাই অপু ট্রিলজির সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘অপুর সংসার’-এর জন্য যখন নতুন মুখ খুঁজছিলেন তখন তার মনে পড়ে সৌমিত্রর কথা। সৌমিত্রকে দেন প্রাপ্তবয়স্ক অপুর চরিত্রে কাজ করার সুযোগ। এরপর ১৪টি সিনেমায় তারা একসঙ্গে কাজ করেছেন।

ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১)

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী বলা হতো উত্তম কুমারকে। তপন সিনহার ঝিন্দের বন্দী সিনেমায় তাদের প্রথমবারের মতো মুখোমুখি দেখা যায়। অ্যান্থনি হোপের ‘দ্য প্রিজনার অব জেনডা’র অনুপ্রেরণায় শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ঝিন্দের বন্দী। উত্তম কুমার মূল চরিত্রে থাকলেও খলনায়ক ময়ূরবাহনের চরিত্র সৌমিত্রকে দর্শকদের প্রশংসা এনে দেয়।

অভিযান (১৯৬২)

সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অভিযানে সৌমিত্রকে দেখা যায় ট্যাক্সি ড্রাইভার চরিত্রে। সৌমিত্রের পছন্দের অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে এ ছবিতে তাকে দেখা যায় জীবনযুদ্ধে হিমশিম খাওয়া রগচটা ‘নারসিং’ চরিত্রে। এ চরিত্রের বাংলা-হিন্দি মেশানো কথা বলার যে ধরন ছিল, সে চিন্তার পেছনে কৃতিত্ব ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের।  

চারুলতা (১৯৬৪)

‘চারুলতা’ সৌমিত্রের জীবনের অন্যতম সিনেমা। এতে তাকে দেখা যায় কোমল, রোমান্টিক, শিল্প সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী তরুণ হিসেবে। এ সিনেমার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগের যুগের মানুষদের কেমন হাতের লেখা ছিল, তা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন সৌমিত্র। কারণ সিনেমার জন্য বেশ কিছু চিঠি সৌমিত্রকে দিয়ে লেখান সত্যজিৎ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’নষ্টনীড়’ উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এ সিনেমায় মাধবী মুখার্জির বিপরীতে ছিলেন সৌমিত্র। 

অপরিচিত (১৯৬৯)

সলিল দত্তের ‘অপরিচিত’ উত্তম-সৌমিত্রের আরেকটি সিনেমা। সমরেশ বসুর এক উপন্যাস অবলম্বনে এ সিনেমা তৈরি। তবে উপন্যাসটি অনুপ্রাণিত রাশিয়ার লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির দার্শনিক উপন্যাস ‘দ্য ইডিয়ট’ থেকে। সৌমিত্র এ সিনেমায় ‘সুজিত’ নামের মানসিক দ্বন্দ্বে থাকা যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করেন।  

তিন ভুবনের পাড়ে (১৯৬৯)

সৌমিত্রের অভিনয় জীবনের অন্যতম সিনেমা ‘তিন ভুবনের পাড়ে’। এতে সৌমিত্রকে দেখা যায় শ্রমিক শ্রেণির নায়ক হিসেবে। এ সিনেমার মাধ্যমে বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। মান্না দের কণ্ঠে জনপ্রিয় গান ‘জীবনে কি পাব না’ তে সৌমিত্রকে নাচতে দেখা যায়। তার অভিনয় কতটা বৈচিত্রপূর্ণ তা বোঝা যায় আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ সিনেমা দেখলে।

অশনি সংকেত (১৯৭৩)

সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম চলচ্চিত্র ‘অশনি সংকেত’ ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে তৈরি। ১৯৭৩ সালে ভারতজুড়ে প্লেগ মহামারির সময় এ সিনেমা মুক্তি দেয়া হয়। গঙ্গাচরণ নামের এক চিকিৎসকের ভূমিকায় সৌমিত্রকে দেখা যায়, যিনি খাবারের বিনিময়ে চিকিৎসক সেবা দিতেন। এতে সৌমিত্রের অভিনয় দারুণভাবে প্রশংসিত হয়।

সোনার কেল্লা (১৯৭৪)

সৌমিত্রের বয়স যখন ৩৮, তখন বাংলার বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ফেলুদায় অভিনয় করেন তিনি। বাঙালি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সৌমিত্রের প্রভাব এতটাই দৃঢ় ছিল যে সত্যজিৎ রায়ের পরবর্তী চিত্রকর্ম ও বইগুলোর চরিত্রের চিত্রায়নে একটি ‘সৌমিত্র চেহারা’ ছিল। সন্দেহাতীতভাবে ‘সোনার কেল্লা’র সৌমিত্র (ফেলুদা) হয়ে উঠেছিলেন সব বয়সের বাঙ্গালীর এক সাংস্কৃতিক প্রতিমূর্তি। বাঙ্গালীর মনে ফেলুদা ও সৌমিত্র তখন থেকেই একে অপরের পরিপূরক।

আতঙ্ক  (১৯৮৬)

পরিচালক তপন সিনহার সঙ্গে সৌমিত্র আট বছরের ব্যবধানে তিনটি সিনেমা করেন। সেগুলো হলো- আতঙ্ক (১৯৮৬), অন্তর্ধান (১৯৯২) ও হুইল চেয়ার (১৯৯৪)। তিনটি সিনেমাই বাণিজ্যিকভাবে সফল। আতঙ্ক সিনেমায় সৌমিত্র শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি তার এক প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে একজনকে খুন করতে দেখেন। পরবর্তী সিনেমা অন্তর্ধান সৌমিত্রকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।

পারমিতার একদিন (২০০০)

অপর্ণা সেন পরিচালিত পারমিতার একদিন সিনেমায় সৌমিত্রকে পার্শ্ব চরিত্রে দেখা গেলেও ‘মনি দা’ ছিলেন অন্যতম চরিত্র। সিনেমায় অপর্ণা সেনের চরিত্র ‘শনকা’র সঙ্গে ‘মনি দা’র যুবক বয়সে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তবে তা পরিণতি পায়নি। শনকার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। তারপরও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে।

বেলা শেষে (২০১৫)

শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায়ের পরিচালনায় বেলা শেষে সৌমিত্রের অন্যতম সিনেমা। এতে সৌমিত্রকে দেখা যায় চার সন্তানের বাবা ও ৫০ বছর সংসার করা এক স্বামীর চরিত্রে। বিশ্বনাথ মজুমদার নামের চরিত্রটি ৫০ বছর স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করার পর অনুধাবন করেন, যে এই সংসারে তার আর কোনো অবদান নেই। এ চিন্তা থেকে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।

ময়ুরাক্ষ্মী (২০১৭)

বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে বাংলা সিনেমার মধ্যে অন্যতম ময়ুরাক্ষ্মী। সৌমিত্র ও প্রসেনজিৎ এর অভিনয় সিনেমাটিকে অন্য মাত্রা দেয়। ৮৪ বছর বয়সী একজন ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে সৌমিত্র এ সিনেমায় অভিনয় করেন। প্রবাসী ছেলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের পর মিলনের গল্প ময়ুরাক্ষ্মী।

এ বিভাগের আরো খবর